কোথায় ছিলেন, কিছু বলছেন না উৎপল

সাংবাদিক উৎপল দাস দুই মাস ১০ দিন কোথায় ছিলেন? হঠাৎ করে উধাও হয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ করেই তাকে খুঁজে পাওয়া গেছে। পরিবার, স্বজন আর নিকটজনদের মধ্যে স্বস্তি। ফিরে পাওয়ার পরই এই সাংবাদিকের কাছে প্রায় আড়াই মাস তার অবস্থানের বিষয়ে জানতে চান তার মা। কিন্তু উৎপল এ বিষয়ে চুপচাপ। পরে আর জোরাজুরি করেননি মা।

রাজধানী ঢাকা থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া উৎপলের দেখা মিলেছে নারায়ণগঞ্জের ভুলতায়। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর স্বজনদের খবর দিলে তাই ভাই এসে নিয়ে যান উৎপলকে।

এমনিতে ক্লিন সেভড থাকেন উৎপল। কিন্তু খুঁজে পাওয়ার সময় তার মুখে ছিল দুই মাসের না কাটা দাড়ি। এ থেকে স্বজনদের ধারণা, যেখানেই থাকুন না কেন, উৎপল ছিলেন বন্দিদশায়।

গত কয়েক বছর ধরেই এভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। যাদের মধ্যে ফিরেও এসেছে কেউ কেউ। এদের মধ্যে এক ফরহাদ মজহারের অন্তর্ধানের বিষয়টিই অন্য রকম। তার পরিবার অপহরণের অভিযোগ আনলেও খুলনায় তার মার্কেটে নিজে নিজে ঘুরে বেড়ানো, দোকান থেকে মোবাইল ফোনে টাকা পাঠানো, একটি হোটেলে খাবার খাওয়া, নিজে বাসের টিকিট কিনে ঢাকায় ফিরে আসার বিষয়ে সিসি ক্যামেরার ভিডিওচিত্র পাওয়া গেছে। আবার স্ত্রীকে ফোন করে অপহরণের কথা বলতে নিষেধও করেছিলেন ফরহাদ। এ থেকে পুলিশের ধারণা, ফরহাদ মজহার পুরো ঘটনায় প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন।

নিখোঁজ হয়ে ফিরে আসা অন্য কেউ বা তাদের স্বজন অন্তর্ধানের বিষয়ে গণমাধ্যমকে কিছু জানাননি। ফলে এভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নিয়ে রহস্যের কূল কিনারা হচ্ছে না। আর পুলিশের তদন্তে বিষয়গুলোর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

উৎপলও কোথায় ছিলেন, সে প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে খুঁজে পাওয়ার পর পুলিশও এ বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করেছিল, কিন্তু কোনো জবাব পায়নি তারা। বাড়ি ফেরার পর মাও জানতে চেয়েছিলেন, জবাব পাননি তিনিও।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ভুলতার আধুরিয়া এলাকার শাহজালাল ফিলিং স্টেশনের সামনে উৎপলকে খুঁজে পেয়েছেন তারা।

কোন অবস্থায় উৎপলকে পাওয়া গেছে- এই প্রশ্নে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘রাতে ফিলিং স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন মানুষকে ফোন দিয়ে সহযোগিতা চাইছিলেন উৎপল। একই সঙ্গে তিনি নরসিংদী যাওয়ার গাড়ি খুঁজছিলেন। এ সময় একজন পুলিশ ফাঁড়িতে ফোন দেন। আর পুলিশ আসলে তিনি তার পরিচয় জানান। পরে তাকে আমরা ফাঁড়িতে নিয়ে তার পরিবারকে ফোন দেই।’

এতদিন উৎপল কোথায় ছিলেন সে বিষয়ে তিনি কী জানিয়েছেন-জানতে চাইলে এএসপি মোস্তাফিজুর বলেন, ‘তিনি এগুলোর বিষয়ে আমাদেরকে কিছু বলেনি। তার ভাই এসেছে, তাকে দিয়ে দিয়েছি।’

নিখোঁজ কেউ উদ্ধার হলে আদালতে তুলে জবানবন্দি নেয়ার নিয়ম আছে। উৎপলের ক্ষেত্রে এই জবানবন্দি না নেয়ার কারণ জানতে এসপি মোস্তাফিজুর চাইলে, ‘সে তার পরিবারের কাছে যেতে চেয়েছে, আমরা তাকে দিয়ে দিয়েছি। এখন যে কোনো সময় তাকে আদালতে তোলা যাবে। তবে এটা যে থাকায় ডিজি বা মামলা হয়েছে, তারাই করে।’

উৎপলের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি বা জিডি হয়েছিল রাজধানীর মতিঝিল থানায়। উৎপলকে যে পাওয়া গেছে, সে তথ্য বুধবার সকাল পর্যন্ত এই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওমর ফারুকের কাছে পৌঁছায়নি। তিনি বলেন, ‘উৎপল দাসকে পাওয়া গেছে সে ব্যাপারে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই। আমরা আগে নিশ্চিত হই যে উৎপল দাসকে পাওয়া গেছে। পরে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বুধবার সকালে উৎপলের বাবা চিত্তরঞ্জন দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ফোন ধরেন উৎপলের মা বিমলা রানী দাস। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘উৎপল এখন আমাদের সঙ্গে রায়পুরা থানার পাশের একটি বাসায় আছে।’

উৎপল কী বলেছে, তিনি কোথায় ছিলেন?- এমন প্রশ্নে বিমলা রানী বলেন, ‘তাকে অনেক কথাই জিজ্ঞাসা করেছি। কিন্তু সে কিছুই বলেনি। আর শারীরিকভাবে ভালো না থাকায় পরে আমরাও এ নিয়ে আর কথা বাড়াইনি।’

গত ১০ অক্টোবর রাজধানী থেকে নিখোঁজ হন অনলাইন নিউজ পোর্টাল পূর্বপশ্চিম বিডি ডট নিউজের প্রতিবেদক উৎপল দাস। এ ঘটনায় ২২ অক্টোবর ওই সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। পরদিন উৎপলের বাবা একই থানায় আরেকটি জিডি করেন।

জিডিতে উৎপলের বাবা উল্লেখ করেন, মতিঝিলের স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনে উৎপলের কর্মস্থল। ১০ অক্টোবর দুপুরে তাঁর মা বিমলা রানী দাসকে ফোন করে উৎপল বলেছিলেন, তিনি অফিসেই আছেন। এরপর তাঁর আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

এরপর মাঝে একবার উৎপলের জন্য তার বাবার মোবাইল ফোনে মুক্তিপণ চাওয়ার একটি ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু যারা এই ফোন করেছিল, তারা কেউ যোগাযোগ করেনি। আবার টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে একটি হাসপাতালে উৎপল আছে জানিয়ে তার জন্য টাকাও চাওয়া হয়েছিল একবার। কিন্তু ওই হাসপাতাল পরে উৎপলকে পাওয়া যায়নি।

উৎপল নিখোঁজ হওয়ার কিছুদিন পর একইভাবে উধাও হয়ে যান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মুবাশ্বার হাসান সিজার। ৭ নভেম্বর থেকে খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না তার।