খাগড়াছড়িতে পৃথক ঘটনায় চুমকি দাশ হত্যাকারী রাসেলকে আটক ও অপহরন ব্যক্তিকে উদ্ধার
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা চট্টগ্রাম ডিআইজি’র পাহাড়ে সংহিসতা সম্প্রীতি সমাবেশ পরিদর্শনের পর শহরে দুটি পৃথক ভাবে গৃহিনী হত্যা ও অপরহরন ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে খাগড়াছড়ি পৌর শহরের অর্পণা চৌধুরী পাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম চুমকি রানী দাশ(৫০)।
নারানখাইয়া বাসিন্দা দুর্বৃত্তের হাতে অপহরন থেকে উদ্ধার হয়ে আসার ব্যক্তি মানবধিকার সংগঠন কম্বাইন হিউম্যান রাইটস এর পার্বত্য চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় সম্বয়কারী অংচিংনু মারমা(৪৮)।
শুক্রবার(৬ই ডিসেম্বর) সকালে ছুরিকাঘাতে চুমকি দাশ হত্যাকারী মো: রাসেলকে আটক করেছে পুলিশ। সে সিএনজি চালক বলে জানা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার (৫ই ডিসেম্বর) রাত ৮টার খাগড়াছড়ি শহরের অপর্ণা চৌধুরি পাড়া এলাকায় দুর্বৃত্তরা ঘরে ঢুকে চুমকী দাসকে(৫০) নৃশংসভাবে খুন করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় নারীর গলার হার ও কানের দুল নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
নিহত চুমকী দাস তিনি একই এলাকায় তপন কান্তি দাশের স্ত্রী। এ ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তৎপর হয়ে উঠে একটি মহল। ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার চেষ্টা চলে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিএনজি চালক রাসেল চুমকী দাসের পুত্র প্রান্ত দাশ থেকে বেশ কিছুদিন আগে একলক্ষ টাকা হাওলাত নিয়েছিল। কিন্তু টাকা ফেরত না দেওয়ায় প্রান্তের সাথে বিরোধ দেখা দেয়। হত্যার আগে রাসেল চুমকী দাশের সাথে কথা বলতে বাসায় গিয়েছিল।
খাগড়াছড়ি পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অশোক মজুমদার বলেন, এটি বিচ্ছিন্ন ও চুরির ঘটনা। ঐ নারীর শরীরের স্বর্ণালংকার নিয়ে যেতে বাঁধা দেওয়ায় তাকে খুন করা হয়েছে। এ ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার অপচেষ্টা নিছক অপপ্রচার।
খাগড়াছড়ি সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: তফিকুল আলম জানান, ঘরের ভেতরে এক নারীর মৃতদেহ পাওয়া গেছে। নিহতের নারীর গলার হার, কানের দুল নিয়ে গেছে। নারীর মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে কীভাবে এই হত্যাকান্ড হয়েছে তা এখনো বলতে পারছি না। আমরা ঘটনার সাথে জড়িত ১জনকে গ্রেফতার করেছি।
খাগড়াছড়ি সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: তফিকুল আলম আরো জানান, সিএনজি চালক মো: রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
চুমকি দাশের ব্যবসায়ী ছেলে প্রান্ত দাস পুলিশকে জানায়, সন্ধ্যায় তার ব্যবসায়ী বন্ধু বাড়ীতে এলে দুইজনই বের হয়ে যায়।
রাতে আবার গরম কাপড় নিতে আসলে ঘরের মেঝেতে তার মায়ের রক্তাক্ত দেহ দেখতে পেয়ে খাগড়াছড়ি জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।
নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে মর্গে জন্য আনা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে গন্জ পাড়া সনাতন মহাস্বশানে দাহ ক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।
খবর পেয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী টহল জোরদার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, খাগড়াছড়িতে ঘরে ঢুকে এক নারীকে হত্যা নৃশংসভাবে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। তিনি একই এলাকায় তপন কান্তি দাশের স্ত্রী।
এদিকে মানবধিকার সংগঠন কম্বাইন হিউম্যান রাইটস এর পার্বত্য চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় সম্বয়কারী অংচিংনু মারমা(৪৮) দুর্বৃত্তের হাতে অপহরনের পর উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার(৫ই ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে খাগড়াছড়ি ১নং পৌরসভার নারান খাইয়া এলাকায় দুর্বৃত্তরা অপহরন করে।
অপহরনকারীরা অংচিংনুকে নিজ বাড়ি সন্নিকটে জুন পহর ভবন কোনা থেকে জোর করে ১০/১১জন দুবৃত্তরা টমটম গাড়িতে তুলে নিয়ে চেংগী স্কয়ার হয়ে জিরোমাইল বলপেইয়া আদামের দিকে নিয়ে যায়। পরে এক পর্যায়ে জ্ঞান ফিরলে উভয়ের দস্তাদস্তিতে টমটম গাড়িটি উল্টিয়ে গেলে অংচিংনু মারমা পাশের্^বর্তী জংগল পাহাড়ে দোড়ে প্রানে রক্ষা পায়।
অপরহরনকারীরা আবার দ্বিতীয় দফায় ২টি মোটর সাইকেল যোগে খুজতে থাকে। পরে পুলিশে মোবাইল টিমকে খবর দিলে অংচিংনুকে উদ্ধার করে সদর মডেল থানায় নিয়ে আসে। পুলিশ নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে দুর্বৃত্তদের আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে গত ২৩শে নভেম্বর রোজ রাত সাড়ে ৮টা দিকে আজ্ঞাত মোবাইল ০১৮৯৭০৫৩১৭০থেকে ০১৭৩২৫৫৮০২১৪ অংচিংনু নম্বরে হুমকি দিয়ে দেড় কোটি টাকা চাদার দাবী করে। নতুবা পরের দিন অংচিংনু পরিবারে যে কেউ স্ত্রী, শালিকাকে অপহরনের হুমকি দিয়েছিল।
মানবধিকার সংগঠন কম্বাইন হিউম্যান রাইটস’র কেন্দ্রীয় বিশেষ প্রতিনিধি প্রজ্ঞা জ্যোতি ভিক্ষু জানান, অপহরন ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, প্রকৃত দোষীদের চিহিৃত করে যথোপযুক্ত শাস্তির দাবী জানান এবং সংগঠনের সকল সদস্যরা দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারন করেন।
খাগড়াছড়ি সদর থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই(নিরস্ত্র) মোহাম্মদ জুয়েল আহাম্মদ জানান, এর আগে দের কোটি চাদা দাবীকারীর মোবাইল ট্রেকিংয়ে তদন্ত চলছে। আশাকরি অপরাধীরা কোন না কোনভাবে ধরা পরবে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার অফিসার্স ইনচার্জ(ওসি) আব্দুল বাতেন মৃধা অপরহন ঘটনা সত্যতা স্বীকার করে বলেন, থানার জিডি মূলে আপরহরনকারীদের খুজে বের করা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন