খাগড়াছড়ির গুইমারায় এক পাহাড়ি গৃহবধুকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে আটক-১

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার গুইমারা উপজেলায় এক পাহাড়ি গৃহবধুকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে ধর্ষণ চেষ্টাকারী মো: সুলতান ভূঁইয়া(৬০)কে জনতা আটক করেছে। জেলার গুইমারা উপজেলার শনখোলা পাড়ায় মো: সুলতান ভূঁইয়া(৬০) কর্তৃক এক পাহাড়ি গৃহবধুকে(৩৯) ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠে।
গত বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকাল ১০টার সময় এ ঘটনা ঘটে। ধর্ষণ চেষ্টাকারী মো: সুলতান ভূঁইয়ার পিতার নাম মৃত নুরুল ভূঁইয়া। তার বাড়ি গুইমারা উপজেলার হাফছড়ি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বড়পিলাক গ্রামে। সে আশে-পাশে এলাকায় এর আগে বহুবার পাহাড়ি সেটেলার বাংগালীর সাথে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় হতাহতের ঘটনাও ছিল।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীও সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী গৃহবধু নিজ বাগানের আম পাড়ার জন্য কাজের লোক খুঁজতে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার সময় রিম্রা পাড়া থেকে শনখোলা পাড়ায় তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে যান।
এ সময় সেখানে আগে থেকে মদ্যপান করে মাতাল অবস্থায় অবস্থান করা মো: সুলতান ভূঁইয়া ওই গৃহবধূকে কুপ্রস্তাব দেয়। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। কিন্তু ভুক্তভোগী গৃহবধু তার কুপ্রস্তাবে রাজী না হলে সুলতান ভূঁইয়া জোরপূর্বক গৃহবধুর শরীরে হাত দেয় এবং ধর্ষণের চেষ্টা করে। এতে ভুক্তভোগী গৃহবধু চিৎকার দিলে আশে-পাশে বসতি স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে সুলতান ভূঁইয়াকে আটক করে।
পরে স্থানীয়রা থানায় খবর দিয়ে আটক সুলতান ভূঁইয়াকে পুলিশের নিকট সোপর্দ করে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী গৃহবধু বাদী হয়ে থানায় মামলার প্রস্তুুতি চলছে বলে জানা গেছে।
গুইমারাতে এক সেটলার কর্তৃক পাহাড়ি গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ) ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), খাগড়াছড়ি জেলা শাখা।
শুক্রবার (৬ই জুন ২০২৫) হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আহ্বায়ক এন্টি চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি মিঠুন চাকমা সংবাদ মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে এই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, বাগানের আম পাড়ার জন্য কাজের লোক খুঁজতে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার সময় রিম্রা পাড়া থেকে শনখোলা পাড়ায় তার সুলতান ভূঁইয়া জোরপূর্বক গৃহবধুর শরীরে হাত দেয় এবং ধর্ষণের চেষ্টা করে।
এরআগে মাইসছড়িতে “গতকাল রাত ৯টার সময় ভূক্তভোগী নারী তার দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে নিজ বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন। এ সময় সেটলার মো: আনিসুর রহমান(বদি) সেখানে উপস্থিত হয়ে স্বামী বাড়িতে না থাকার সুযোগে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে প্রথমে ওই নারীর কাছ থেকে ৫মাস বয়সী শিশু সন্তানকে কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
এরপর ওই নারীকে টেনে হিঁচড়ে ধান ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এ সময় ভুক্তভোগী নারী প্রতিরোধের চেষ্টা করেন এবং এক পর্যায়ে চিৎকার দেন। এরপর ওই নারীর চিৎকার শুনে গ্রামের লোকজন ছুটে গেলে ধর্ষক আনিসুর রহমান পালিয়ে যায়।”
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় আরো বলেন, ‘প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য আমরা যখন এলাকাবাসীর সাথে কথা বলি তখন কয়েকজন মুরব্বি আমাদেরকে জানিয়েছেন, “গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে শুক্রবার সকালে বিজিতলা সেনা ক্যাম্পের জনৈক ক্যাপ্টেন মোবাইলে কল করে আমাদেরকে বলেছেন, ‘বিষয়টি তারা দেখবেন, আমরা যেন এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি ও বিষয়টি কাউকে জানাজানি না করি।” সেনাদের এহেন কার্যকলাপ ধর্ষককে প্রশ্রয় দেয়ার সামিল এবং এটি প্রচলিত আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী বলে নেতৃদ্বয় মন্তব্য করেন।
নেতৃদ্বয় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সারাদেশে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা ও যৌন নিপীড়নের ঘটনা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। কিছুদিন আগে বান্দরবানে এক খেয়াং নারীকে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এর আগেও কাউখালী, মাটিরাঙ্গা, লক্ষ্যাছড়িতে গণধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা ঘটেছিল।
গতকাল মাইসছড়িতে নিজ বাড়িতে কোলে থাকা শিশু সন্তানকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বাড়ির বাইরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে গৃহবধুকে ধর্ষণ করা হল। পার্বত্য চট্টগ্রামে এসব ঘটনা খুবই ভয়ঙ্কর ও উদ্বেগের। আর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে গৃহবধু ধর্ষণের ঘটনাটি প্রচার কিংবা কাউকে জানাজানি না করার জন্য মুরব্বিদেরকে বলাটা আরো বেশি উদ্বেগজনক।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কল্পনা চাকমা অপহরণের ঘটনা থেকে শুরু করে খেয়াং নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত সংঘটিত ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা ও যৌন নিপীড়নের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু বিচার ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় বার বার এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
নেতৃদ্বয় অবিলম্বে গুইমারাতে গৃহবধৃকে ধর্ষণ চেষ্টাকারী মো: সুলতান ভূঁইয়া সর্বোচ্চ শাস্তি, পাহাড়ি নারী ধর্ষণের ঘটনায় মেডিকেল রিপোটের ওপর জারিকৃত গোপন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া এবং নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
উল্লেখ্য সেটলার দুস্কৃতিকারী কর্তৃক এক পাহাড়ি নারী ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ করা হয়।
জেলার মহালছড়ির মাইসছড়ি ইউনিয়নের জামতলা গ্রামে সেটলার বাঙালি কর্তৃক এক পাহাড়ি নারী(২২) ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার(২৯শে মে ২০২৫) গভীর রাতে মাইসছড়ির জামতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ধর্ষণ অভিযোগ কারীর মো: আনিসুর রহমান(বদি), পিতা-চানমিয়া, গ্রাম-কালাপাহাড়, মহালছড়ি, খাগড়াছড়ি।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার সময় ভূক্তভোগী নারী তার দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। এ সময় সেটলার মো: আনিসুর রহমান(বদি) সেখানে উপস্থিত হয়ে স্বামী বাড়িতে না থাকার সুযোগে বাড়িতে ঢুকে প্রথমে ওই নারীর কাছ থেকে ৫মাস বয়সী শিশু সন্তানকে কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
এরপর ওই নারীকে টেনে হিঁচড়ে ধান ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে। এ সময় ভুক্তভোগী নারী প্রতিরোধের চেষ্টা করেন এবং এক পর্যায়ে চিৎকার দেন। এরপর ওই নারীর চিৎকার শুনে গ্রামের লোকজন ছুটে গেলে ধর্ষক আনিসুর রহমান পালিয়ে যায়।
গুইমারা উপজেলা’র সাবেক চেয়ারম্যান উশ্যৈপ্রæু মারমা জানান, ষ্পর্শ কাতর ধর্ষন ঘটনাটি শুনেছি এবং অভিযোগ পেয়েছি। উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করেছি। যেহেতু আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ধর্ষককে আটক করেছে। ধর্ষনের স্বীকার মহিলাকে খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।
খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো: আরেফিন জুয়েল ঘটনাটি স্বীকার করে বলেন, স্থানীয়রা থানায় খবর দিয়ে আটক সুলতান ভূঁইয়াকে পুলিশের নিকট সোর্পদ করায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথভারে ধর্ষক অভিযোগকারীকে আটক করা হয়েছে। ভিকটিম কেউ লিখিত অভিযোগ করলে সেটি আমলে নিয়ে যথাযথ আইনানুগ বিহিত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন