খাগড়াছড়ির পানছড়ি ও রামগড় উপজেলা পৃথক ঘটনায় ইউপিডিএফ কর্মী আটক-২

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পানছড়িতে সেনাবাহিনী কর্তৃক এক ইউপিডিএফ সদস্যসহ ৪জনকে আটক, পরে ৩জনকে মুক্তি এবং রামগড় উপজেলা পৃথক ঘটনাসহ ইউপিডিএফ কর্মীকে নিরাপত্তাবাহিনীরা ২জনকে আটক করেছে। পানছড়িতে অস্ত্র ও অ্যামোনিশনসহ ইউপিডিএফ(মূল) এর সশস্ত্র টোল কালেক্টরকে নিরাপত্তাবাহিনী আটক করেছে।

অপরদিকে রামগড়ে অস্ত্রসহ চাঁদাবাজির সময় ইউপিডিএফ সদস্যকে ধরে গণপিটুনির পর সেনা হেফাজতে পুলিশে সোপর্দ করেছে।

সোমবার (১০ই নভেম্বর) সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার মরাটিলা এলাকায় ইউপিডিএফ(মূল) এর সশস্ত্র সদস্যদের বিরুদ্ধে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

সেনাবাহিনীর অভিযান দলটি মরাটিলা এলাকায় ইউপিডিএফ(মূল) এর সশস্ত্র সদস্যদের একটি গোপন আস্তানা ঘেরাও করে। পরবর্তীতে ওই স্থানে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করে ইউপিডিএফ(মূল) এর সশস্ত্র টোল কালেক্টর মিলন ত্রিপুরাকে আটক করা হয়।

আটক মিলন ত্রিপুরার নিকট হতে ১টি বিদেশী পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন, ৫ রাউন্ড অ্যামোনিশন এবং চাঁদা আদায়ের রশিদসহ বেশ কিছু সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষ ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, জেলার পানছড়ি উপজেলার ৫নং উল্টাছড়ি ইউনিয়নের মরাটিলা এলাকা থেকে সেনাবাহিনী এক ইউপিডিএফ সদস্য ও ৩জন সাধারণ গ্রামবাসীকে আটক করে।

পরে তাদেরকে পানছড়ি সাবজোনে নেওয়ার পর সেখান থেকে তিন গ্রামবাসীকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

আরো জানা যায, সোমবার(১০ই নভেম্বর ২০২৫) দুপুর ১টার সময় পানছড়ি সাবজোন থেকে ২টি গাড়িযোগে ২০/২৫জন সেনা সদস্য মরাটিলা এলাকায় হানা দেয়। এ সময় সেখানে সাংগঠনিক কাজে যাওয়া ইউপিডিএফ সদস্য মিলন ত্রিপুরা(২৬), পিতা-হরিপূর্ণ ত্রিপুরাকে সেনারা আটক করে।

এছাড়া একই সময় সেনারা ওই এলাকার বাসিন্দা ও দোকানদার অরুণ বিকাশ ত্রিপুরা(৩১), পিতা-বিনান্দ মোহন ত্রিপুরা, গ্রাম-পদ্মিনী পাড়া, ৭নং ওয়ার্ড, উল্টাছড়ি ইউনিয়ন মোটর সাইকেল চালক কহুজয় ত্রিপুরা(২৭), পিতা-সচিন্দ্র ত্রিপরা, গ্রাম-আনন্দ মোহন পাড়া, মাছ্যছড়া ও রাহুল ত্রিপুরা(১৬), পিতা-রূপনা ত্রিপুরা, কাতালমনি পাড়া, ৯নং ওয়ার্ড, ৪নং লতিবান ইউনিয়ন-এই তিন জনকেও আটক করে।

আটকের পর সেনারা ইউপিডিএফ সদস্যসহ চার জনকে মারধর করার পর পানছড়ি সাবজোনে নিয়ে যায়। এরপর সাবজোনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর ইউপিডিএফ সদস্যকে রেখে বাকী তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

আটক ইউপিডিএফ সদস্যের কাছ থেকে পিস্তল ও চাঁদা আদায়ের রশিদ বই পাওয়া গেছে বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে যে দাবি করা হয়েছে ইউপিডিএফ পানছড়ি ইউনিটের সংগঠক অপু ত্রিপুরা তা খারিজ করে দিয়েছেন।

অপরদিকে জেলার রামগড় উপজেলার খাগড়াবিল এলাকায় অস্ত্রসহ চাঁদাবাজি করার সময় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর এক সদস্যকে হাতে নাতে আটক করে স্থানীয় জনতা। উত্তেজিত জনতা তাকে মারধরের পর গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে পরে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়।

স্থানীরা জানায়, রোববার(৯ই নভেম্বর) দুপুর আনুমানিক ১২টা ৩০মিনিটে রামগড়ের খাগড়াবিল বাজারে অস্ত্র নিয়ে চাঁদাবাজি করার চেষ্টা করছিল ওই ইউপিডিএফ সদস্য। এ সময় স্থানীয় জনগণ সাহসিকতার সঙ্গে তাকে ধরে ফেলে। আটক হওয়ার পর উত্তেজিত জনতা তাকে গণপিটুনি দেয়।

পরে খবর পেয়ে সিন্দুকছড়ি জোন থেকে একদল সেনাসদস্য ঘটনাস্থলে দ্রæুত ছুটে যান। তারা আহত অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে রামগড় থানায় নিয়ে যান। পরে পুলিশ তাকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়।

আটককৃত ইউপিডিএফ সদস্যের নাম দূর্গা চাকমা(২৫)। পুলিশ কর্তৃক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, দূর্গা চাকমা স্থানীয় ইউপিডিএফ নেতা জিয়ন চাকমার অধীনে দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও চাঁদাবাজি করে আসছে।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আটককৃত দূর্গা চাকমা দীর্ঘদিন ধরে খাগড়াবিল বাজারে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করে আসছিল। তাকে আটকের ফলে জনমনে স্বস্তি ফিরে আসবে বলে এলাকাবাসী আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও চাঁদাবাজির অভিযোগে আইনি কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে আভিযানিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং পার্বত্য অঞ্চলের সকল জাতিগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।