খাগড়াছড়ির ২টি উপজেলাতে ইউপি নির্বাচন: ২টিতে নৌকা, ১টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ২টি উপজেলায় তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত জেলার দীঘিনালা ও মহালছড়ির সাত ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের দুইজন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী দুইজন বিজয়ী হয়েছেন। তবে দীঘিনালা ও মহালছড়ি ইউনিয়নের তিনটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
রোববার (২৮ নভেম্বর) দিনভর ভোটগ্রহণ শেষে স্ব-স্ব রিটার্নিং অফিসাররা তাদের নির্বাচিত ঘোষণা করেন। এতে দীঘিনালায় ইউপি নির্বাচনে দু’জনকে ছয় মাসের স্বশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে প্রশাসন। সহিংসতা ও জাল ভোটের ঘটনায় দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের একটি কেন্দ্র, কবাখালী ইউনিয়নের একটি কেন্দ্র ও জাল ভোটের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মহালছড়ির মাইসছড়ি ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করায় সেখানে চূড়ান্ত ভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি। দীঘিনালা উপজেলা কয়েকটি কেন্দ্রে সংঘাতের ঘটনা ঘটে। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িতে ঢিল ছুড়েছে। কিছুক্ষণ স্থগিত থাকার পর পুনরায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়।
দীঘিনালায় নির্বাচনী সহিংসতায় আহত-১৬, দু’জনকে ছয় মাসের স্বশ্রম কারাদন্ড
৩য় ধাপের খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দীঘিনালায় ৩টি ইউপি নির্বাচনে বোয়ালখালী ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো: মোস্তফাকে চার হাজার ভোটে পরাজিত করে হ্যাট্রিক জয় পেয়েছেন পিসিজেএসএস-এমএন লারমা সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী চয়ন বিকাশ চাকমা। তিনি পেয়েছেন ৮হাজার ১৪৫ভোট।
জেলার দীঘিনালায় নির্বাচনী সহিংসতায় ১৬জন আহত হয়েছেন। রোববার(২৮শে নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার কবাখালি, বোয়ালখালি ও মেরুং ইউনিয়নে জালভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। এ সময় কবাখালি ইউনিয়নে দায়িত্বরত সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িতে হামলা করে দুবৃর্ত্তরা। আহতদের দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
মেরুং ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন বলেন, বাঁচা মেরুং কেন্দ্রে ব্যালট ছিনিয়ে নিলে দুই সদস্য প্রার্থীর মধ্যে সংঘাতে ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করা হয়। হাজাধন কার্বারিপাড়ায়ও সংঘষের ঘটনা ঘটে। দুই কেন্দ্রে আহত হয় ১৩জন। এ ছাড়া কবাখালির হাচিনসনপুর কেন্দ্রে সংঘর্ষে ৩জন আহত হয়।
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাচন অফিসার শাহেনসা মোহাম্মদ লতিফুল খায়ের বলেন, মেরুং ও কবাখালী ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতা এবং জাল ভোটের অভিযোগে দুই ইউনিয়নের চারটি কেন্দ্র স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে এ চারটি কেন্দ্রে নির্বাচনের মাধ্যমে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ(ইউপি) নির্বাচনে খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে ৪টি ইউনিয়নে রোববার(২৮শে নভেম্বর) অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২প্রার্থী নৌকা প্রতীকে ও ১প্রার্থী স্বতন্ত্র আনারস প্রতীকে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। মহালছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৪নং মাইসছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ড মাইসছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল প্রয়োগে পাল্টা-পাল্টি অভিযোগের ভিত্তিতে ১৩০৫ভোটারের স্থগিত ঘোষনা করে বাতিল করা হয়েছে নির্বাচন কমিশন। মাইসছড়ি ইউনিয়নে একটি কেন্দ্র স্থগিত থাকায় সে ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়নি। তবে ৪টি ইউনিয়নের মধ্য থেকে ক্যায়াংঘাট ইউনিয়নে সরকার দলীয় মনোনীত প্রার্থী রুপেন্দু দেওয়ান বিনা ভোটে আগেই নির্বাচিত হয়েছেন।
অপর ৩টি ইউনিয়নে ৭জন প্রার্থীর মধ্যে মহালছড়ি সদর ইউনিয়নে সরকার দলীয় প্রার্থী ১নং মহালছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ মনোনিত নৌকার প্রার্থী রতন কুমার শীল-৭৩৪৫ভোটে বিজয়ী, তার নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতিকে লাব্রেচাই মারমা-১৩৮৬ভোট। ২নং মুবাছড়ি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীকে বাপ্পী খীসা পেয়েছেন ৩হাজার ৯৫২ভোট ও নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি সরকার দলীয় প্রাার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে কংজরী মারমা পেয়েছেন, ৮৫৬ভোট। এর আগে ৩নং ক্যায়াংঘাট ইউপিতে নৌকা প্রতীকে একক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্ব›দ্বীতায় বে-সরকারি ভাবে চেয়ারম্যান নৌকার প্রার্থী রুপেন্দ্র দেওয়ান জয়লাভ করেছেন। মহালছড়ি উপজেলার ৪নং মাইসছড়ি বিদ্রোহী আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর আনারস প্রতীকে সাজাই মারমা-৩৩২১ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। বিপরীতে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী নৌকার দলীয় প্রার্থী মো: গিয়াস উদ্দিন(লিডার)-২১২২ভোট এবং তৃতীয় স্থানে আল-আমিন হোসেন হাত পাখা প্রতীকে ২৯ভোট পান।
মহালছড়ি উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, মহালছড়ির চার ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ৮জন, এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ক্যায়াংঘাট ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্ব›দ্বীতায় চেয়ারম্যান পদে রুপেন্দ্র দেওয়ানসহ চার ইউপিতে সাধারন সদস্য পদে ১৯সংরক্ষিত পদে ৬সদস্য বে-সরকারি ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। ৩৬টি ভোট কেন্দ্রের মোট ১০৩টি বুথে ৩৪হাজার ২৯৫জন ভোটার তাদের যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে ভোট দিলেন। এতে পুরুষ ভোটার ১৭হাজার ৫৩৩জন ও নারী ভোটার সংখ্য ১৬হাজার ৭৬২জন বলে সূত্র জানায়।
মহালছড়ি উপজেলায় ৪ ইউপিতে উৎসবের আমেজ ভোট গননা শেষে নির্বাচিতদের বেসরকারি ভাবে ঘোষনা করেছেন দায়িত্ব প্রাপ্ত স্থানীয় প্রশাসন। প্রিজাইন্ডিং অফিসার কর্তৃক সরবরাহকৃত গননা ফলাফলের একীভূত ঘোষনাকারীর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহালছড়ি উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার সুসমিকা চাকমা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও রিটানিং অফিসার মো: আব্দুল জব্বার, বিজিবি’র সিও মো: নিজাম, মহালছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো: খায়রুল ইসলাম।
মাইসছড়ি ইউনিয়নে ব্যাপক জাল ভোট প্রদানের সত্যতা পাওয়ায় প্রিজাইডিং অফিসার কিউট চাকমা একটি কেন্দ্র স্থগিত ঘোষণা করেছেন। তবে অবশিষ্ট ৮টি ভোটকেন্দ্রের পাওয়া তথ্যমতে স্বতন্ত্র প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাজাই মারমা এগিয়ে রয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৩হাজার ৩২১ ভোট ও নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি সরকার দলীয় প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন লিডার পেয়েছেন ২হাজার ১২২ভোট। মাইসছড়ি ইউনিয়নে যে কেন্দ্র স্থগিত রয়েছে সেই কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ১হাজার ৩০৫ ভোট। মহালছড়ি রিটার্নিং কর্মকর্তা সুসমিকা চাকমা বলেছেন, মাইসছড়ি ইউনিয়নে যেহেতু একটি কেন্দ্র স্থগিত রয়েছে তাই আপাতত সেই ইউনিয়নটি ঘোষণা নাও হতে পারে। পরবর্তীতে সেটা জানানো হবে।
অপরদিকে দীঘিনালায় ইউপি নির্বাচনে বাধা প্রদানের অভিযোগে দুজনকে ছয় মাসের স্বশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। গত রোববার ভ্রাম্যমাণ আদালতে এ সাজা প্রদান করা হয়। এছাড়া নির্বাচনী গাড়ি ভাংচুর করার অভিযোগে ৭জনের নামে মামলা করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত রোববার দীঘিনালা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে নির্বাচন চলাকালীন সময়ে ১নং মেরুং ইউনিয়নে নির্বাচন কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে বড় মেরুং এলাকার আবদুল মান্নানের ছেলে বাবুল মিয়া(২৮) এবং কবাখালী ইউনিয়নের হাচিনসনপুর গ্রামের আবু তাহের এর ছেলে মো: রফিক(৪২)কে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ছয় মাসের স্বশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়।
এছাড়া কবাখালী ইউনিয়নে নির্বাচনী কাজে ব্যবহৃত গাড়ি ভাংচুরের অভিযোগে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার দক্ষিণ গঞ্জ পাড়ার ইউসুফ আলীর ছেলে শরীফ আহম্মেদ বাদী হয়ে ৫নং ওয়াডের মোরগ মার্কার মেম্বার পদপ্রার্থী মো: হানিফ মিয়া(সোহাগ)কে প্রধান আসামি ছয় জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১৫০/২০০জনের নামে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করা হয়। ঘটনার সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে মামলার এজাহারে মো: হানিফ মিয়া( সোহাগ) পালিয়ে গেলেও অপর আসামীদের আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। অপর আসামীরা হলেন, পূর্ব হাচিনসনপুর গ্রামের আলামিন এর ছেলে মো: মোজাহিদ রাব্বি(২০), জহির হোসেন এর ছেলে মো: রাজিব হোসেন(১৮), ছায়েদ আলীর ছেলে মো: নুরে আলম(২৪), শফিকুল ইসলাম এর ছেলে মো: আরিফুল ইসলাম(২৪) এবং নজরুল ইসলামের ছেলে জামাল হোসেন(৪০)। এছাড়া চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার বাসিন্দা এবং মৃত হাক্বী আব্দুল ওহাব এর ছেলে আবু জাহেদ (৪০)।
দীঘিনালা থানার এসআই মিল্টন খন্দকার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন-আটককৃতদের বিজ্ঞ আদালতে মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করা হবে।
উল্লেখ্য রোববার সন্ধ্যায় উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ সাধারন নির্বাচন-২০২১ চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত আসনের সদস্য ও সাধারন আসনে সদস্য পদে প্রার্ধীদের ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র দীঘিনালা ও মহালছড়ি উপজেলা পরিষদ টাউন হলে পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন