খাদ্য, বাসস্থান আর চিকিৎসার জন্য জীবন-মরণ লড়াইয়ে রোহিঙ্গা
মিয়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশমুখী স্রোত থামেনি। পুরনোর সঙ্গে নতুনরাও খাদ্য, বাসস্থান আর চিকিৎসার জন্য জীবন-মরণ লড়াইয়ে নেমেছেন। কক্সবাজারের কুতুপালং ও আশপাশের এলাকা থেকে তোলা ছবিতে রোহিঙ্গাদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও জীবনযুদ্ধের খণ্ডচিত্র।
নতুন শরণার্থীরা যেসব অস্থায়ী শিবিরে এসে উঠেছেন যেখানে পর্যাপ্ত সংখ্যায় বাসস্থান নেই। নেই খাবার, নিরাপদ পানীয় জল কিংবা শৌচাগারের সুবিধে। শরণার্থী শিবিরের জনসংখ্যা হঠাৎ করেই বেড়ে যাওয়ার ফলে যে কোনো সময়ে ছোঁয়াচে রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে বলে বিভিন্ন সংস্থা জানিয়েছে।
উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী শরণার্থী শিবিরগুলোতে এখন পর্যন্ত অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গার মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়নি। এদিকে অন্তত দুই হাজার ঝুপড়ি ঘর তলিয়ে গেছে পানিতে। এসব ঝুপড়িতে থাকা রোহিঙ্গারা একটু আশ্রয়ের জন্য এখানে-ওখানে ছুটছে। শরণার্থী শিবিরগুলোতে এখন পর্যন্ত অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গার মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়নি।
কয়েক দিন আগে টানা বৃষ্টিপাতে ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়েছে রোহিঙ্গারা। পাহাড়ের টিলা ও পাদদেশ এবং সড়কের পাশে খোলা জায়গায় অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের জীবন বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গার মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়নি। তারা এদিক ওদিক মাথা গোঁজার চেষ্টা করছেন। কেউ বা খোলা আকাশের নিচেই প্রাত্যহিক কাজকর্ম সারছেন।
এরই মধ্যে দেশে আসা রোহিঙ্গারা টেকনাফ ও উখিয়ার বাইরে কক্সবাজারের অন্যান্য উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাড়ি দিচ্ছে। পাহাড়ের টিলা ও পাদদেশ এবং সড়কের পাশে খোলা জায়গায় আবাস গেড়েছে রোহিঙ্গারা। তাদের অনেকেরই জীবন বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গাদের বার্মার নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। মায়ানমার সরকার দাবি করে যে রোহিঙ্গারা অবৈধ অভিবাসী, যারা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগে আগত এবং মূলত বাঙালি। ১৯৯৫ সালে মিয়ানমার সরকার ইউএনএইচসিআর-এর চাপের প্রতি সাড়া দিয়ে মৌলিক শনাক্তকরণ কার্ড প্রদান করে, যা রোহিঙ্গাদের জন্মস্থান উল্লেখ করে না।
সঠিক সনাক্তকরণ ও নথিপত্র না থাকায় রোহিঙ্গা জনগণ আনুষ্ঠানিকভাবে রাজ্যহীন এবং তাদের প্রতি রাষ্ট্রীয় কোন সুরক্ষাও নেই। তাদের চলাফেরা কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ। সঠিক সনাক্তকরণ ও নথিপত্র না থাকায় রোহিঙ্গা জনগণ আনুষ্ঠানিকভাবে রাজ্যহীন এবং তাদের প্রতি রাষ্ট্রীয় কোন সুরক্ষাও নেই। তাদের চলাফেরা কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ।
মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা ৫৪ হাজার গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারী চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন। ঝুঁকিতে আছে শিশুরা। প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং পুষ্টি সহায়তা পাচ্ছে না তারা। নতুন আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে প্রায় তিন লাখের জরুরি ভিত্তিতে পুষ্টি সহায়তা প্রয়োজন। আর যাদের এই পুষ্টি সহায়তা প্রয়োজন তাদের মধ্যে এক লাখ ৫৫ হাজার আছে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু। ১৪ হাজার শিশু চরম পুষ্টিহীনতায় ভুগছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে গর্ভবর্তী মা রয়েছেন ২২ হাজার। তাঁদের মধ্যে ১৭৮ জন গর্ভকালীন জটিলতায় আক্রান্ত। রোহিঙ্গা শরণার্থী নারী ও শিশু যারা অপুষ্টির শিকার, তাদের জন্য আলাদা কোনো পুষ্টিকর খাবার বিতরণের ব্যবস্থা নাই। তারা যা পাচ্ছেন, তাই খাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের রাখাইন থেকে চার লাখ ১২ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছেন। তাঁদের মধ্যে এক লাখ ৫৮ হাজার নতুন অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় পেয়েছেন। দুই লাখ ৩৩ হাজার কক্সবাজার এলাকায় নানাভাবে নিজেদের উদ্যোগে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান নিয়েছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন