খালেদা জিয়ার আপাতত আগের চিকিৎসাই চলবে

প্রাথমিকভাবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যবস্থাপত্র পর্যালোচনা করে নতুন করে গঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের চিকিৎসকরা আপাতত আগের চিকিৎসাই অব্যাহত রাখার পক্ষে মতামত দিয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘আজ চিকিৎসকরা খালেদা জিয়ার আগের ব্যবস্থাপত্রগুলো পর্যালোচনা করেছেন। এসব ব্যবস্থাপত্র দেখে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আপাতত আগের চিকিৎসা চলবে বিএনপি নেত্রীর জন্য।’

‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসার আগের সব ব্যবস্থাপত্র পর্যালোচনা করে এবং তাঁর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে তিনি ডাক্তারদের যা বলবেন, সেইভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁর চিকিৎসার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে,’ যোগ করেন হাসপাতালের পরিচালক।

আদালতের নির্দেশ অনুসারে গতকাল শনিবার বিকেলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। তাঁকে হাসপাতালের ভিআইপি ডিলাক্স ৬১১ নম্বর কেবিনে রাখা হয়েছে। গতকালই কর্তৃপক্ষ একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছেন।

মেডিকেল বোর্ডে রয়েছেন চিকিৎসক ডা. এম এ জলিল (মেডিসিন) ও সহকারী অধ্যাপক ডা. বদরুন্নেসা, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক (নিউমটোলিজ), অধ্যাপক সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জি (কার্ডিওলজি), অধ্যাপক নকুল কুমার দত্ত (অর্থোপেডিক্স)। এর মধ্যে সজল ব্যানার্জি ঢাকার বাইরে রয়েছেন। তিনি ফিরে না আসা পর্যন্ত আরেকজন চিকিৎসককে বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

গতকালই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, আজ নতুন গঠিত মেডিকেল বোর্ড বসবে। তারপরই তাঁরা বিএনপির চেয়ারপারসনের চিকিৎসার ব্যাপারে যাবতীয় বিষয় জানাবেন। সেসব বিষয় অবগত করতেই আজ দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএসএমএমইউ পরিচালক। তিনি জানান, আজ খালেদা জিয়ার ব্যবস্থাপত্র পর্যালোচনার সময় তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক আল-মামুনও উপস্থিত ছিলেন। মেডিকেল বোর্ড আগামীকাল সোমবার আবার বসবে।

এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ আল হারুন জানান, আজ চিকিৎসকরা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেননি, শুধু আগের ব্যবস্থাপত্রগুলো দেখেছেন। সেগুলোই পর্যালোচনা করেছেন।

খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে পছন্দের কোনো চিকিৎসকের কথা বলা হয়েছে কি না জানতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পছন্দের কোনো চিকিৎসকের কথা এখনো আমাদের বলেননি। যদি খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে কোনো চিকিৎসক বা ফিজিওথেরাপিস্টের অবেদন করা হয়, তাহলে আদালতের আদেশ অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মেডিকেল বোর্ডের চারজন সদস্য আওয়ামী লীগপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) আজীবন সদস্য—বিএনপির এ ধরনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘আদালত রায়ে বলেছেন, যাঁরা ড্যাব বা স্বাচিপের বর্তমান কার্যনির্বাহী সদস্য, তাঁরা বোর্ডে থাকতে পারবেন না। এ ছাড়া বাকি যেকোনো চিকিৎসক খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত বোর্ডের সদস্য হতে পারবেন। আমরা সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি।’

খালেদা জিয়া কেমন আছেন—জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, ‘খালেদা জিয়া কাল আমাদের এখানে এসেছেন। তিনি কাল যেমন ছিলেন, আজও তেমন আছেন।’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি কক্ষে চিলেন। এরপর গত ৭ এপ্রিল তাঁকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে এনে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে সেদিনই তাঁকে কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

কারাগারের নির্জন কক্ষে খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁর সুচিকিৎসার জন্য লিখিত আবেদন নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা দুইবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সচিবালয়ে গিয়ে দেখা করেন। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতির বিষয়টি তুলে ধরে তাঁকে দ্রুত রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির অনুরোধ জানান বিএনপির নেতারা।

সরকারের পক্ষ থেকে ইউনাইটেড হাসপাতালের পরিবর্তে বিএসএমএমইউ অথবা সিএমএইচে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এই পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা চেয়ে একটি রিট আবেদন করেন তাঁর আইনজীবীরা। গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার বিষয়ে একটি নির্দেশনা দেন। এতে খালেদা জিয়ার পছন্দের চিকিৎসক ও নিরপেক্ষ চিকিৎসদের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসার বিষয়ে নির্দেশনা দেন আদালত।

হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া তাঁর পছন্দমতো ফিজিওথেরাপিস্ট, গাইনোকোলজিস্ট ও টেকনিশিয়ান নিতে পারবেন। মেডিকেল বোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও আনতে পারবেন। হাইকোর্টের এ নির্দেশনা অনুযায়ী খালেদা জিয়া চিকিৎসা গ্রহণে সম্মত হন বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবীরা।