খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বিষয়ে হাইকোর্টের তিন নির্দেশনা
বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য তিনটি নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক আদেশে এই তিন নির্দেশনা দেন।
এ সময় আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, এ কে এম এহসানানুর রহমান প্রমুখ।
আদালতের প্রথম নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জেল কর্তৃপক্ষ, সরকার বা মেডিক্যাল বোর্ড খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে অনতিবিলম্বে ভর্তি করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
দ্বিতীয় নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এরআগে সরকার যে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেছিল, সেই মেডিক্যাল বোর্ডে দুই জন ডাক্তারকে (ডা. আব্দুল জলিল চৌধুরী ও ডা. বদরুন্নেসা আহমেদ) রেখে এই বোর্ডটি পুনর্গঠন করতে হবে। এরপর এই বোর্ডে নতুন তিনজন ডাক্তারকে সংযুক্ত করতে হবে যারা স্বাচিপ বা ড্যাবের কোনও সদস্য বা কর্মকর্তা হবেননা।
তৃতীয় নির্দেশনায় আদালত বলেন, ফিজিওথেরাপিস্ট বা গায়নোকলজিস্ট বা মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান খালেদা জিয়ার পছন্দমতো এই বোর্ডের সুপারভিশনে তারা কাজ করতে পারবেন। আর খালেদা জিয়া যদি মনে করেন, অন্য কোনও চিকিৎসক দিয়ে তার চিকিৎসা করাবেন, সেক্ষেত্রে মেডিক্যাল বোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে তিনি চিকিৎসা করাতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, গত ৯ সেপ্টেম্বর বিশেষায়িত হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট করা হয়। ওই দিনই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে দেখা করে খালেদা জিয়ার পছন্দ অনুযায়ী রাজধানীর কোনও বিশেষায়িত হাসপাতালে তার চিকিৎসা করানোর অনুরোধ জানায়। এরপরই খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপর ১৩ সেপ্টেম্বর পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে বিএসএমএমইউ। ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল জলিল চৌধুরীকে বোর্ডের প্রধান করে গঠন করা বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন, কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক হারিসুল হক, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু জাফর চৌধুরী বীরু, চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তারিক রেজা আলী ও ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বদরুন্নেসা আহমেদ।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে গঠিত এই মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকরা ১৫ সেপ্টেম্বর বিকালে পুরনো ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরনো কারাগারের দোতলার কারাকক্ষে গিয়ে ২০ মিনিট ধরে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যপরীক্ষা করেন। পরদিন ১৬ সেপ্টেম্বর সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিএসএমএমইউ। তবে এ বোর্ডের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিএনপি থেকে বারবার প্রশ্ন তোলা হয়। মেডিক্যাল বোর্ডের সব চিকিৎসক আওয়ামীপন্থী স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সদস্য, তাই তাদের চিকিৎসায় খালেদা জিয়ার শঙ্কা ও আপত্তি রয়েছে আলোচনায় আসে এমন বিষয়ও।
বন্দি থাকা অবস্থায় তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এর আগেও একবার মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। ওই সময়েও স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর মেডিক্যাল বোর্ড বলেছিল, খালেদা জিয়ার অবস্থা গুরুতর নয়। তখন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শারীরিক পরীক্ষা করতে ৭ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।
উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে এই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরনো ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন