খালেদা ফিরছেন সন্ধ্যায়, পাচ্ছেন ‘গণতন্ত্রের যোদ্ধা’ উপাধি

প্রায় তিন মাসের যুক্তরাজ্য সফর শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফিরলে বিমানবন্দরেই তাকে ব্যাপক অভ্যর্থনা জানানোর পাশাপাশি তাকে একটি উপাধি দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বিএনপির একটি সহযোগী সংগঠন। বিএনপি নেত্রীকে ‘ফাইটার অব ডেমোক্রেসি’ বা ‘গণতন্ত্রের যোদ্ধা’ বলে আখ্যা দিয়েই বরণ করবে স্বেচ্ছাসেবক দল।

সংগঠনের শীর্ষ নেতারা বলছেন, বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ নয় বছর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। মামলা, মোকাদ্দমা মোকাবেলা করে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধেও তিনি লড়াই করছেন। যে কারণে তিনি দেশে ফিরলে তারা ‘গণতন্ত্রের যোদ্ধা’ হিসেবে তাকে আখ্যায়িত করতে চান।

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু বলেন, ‘রাজনৈতিক জীবনের বেশিরভাগ সময়ই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে নয় বছর লড়াই করেছেন। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন। এক এগারোর অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই করেছেন। তাই তাকে আপসহীন নেত্রী বলা হয়ে থাকে। এ কারণে তিনি চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরলে আমরা তাকে ‘ফাইটার অব ডেমোক্রেসি বা গণতন্ত্রের যোদ্ধা’ উপাধিতে ভূষিত করব।’

বাবু বলেন, ‘চেয়ারপারসনকে স্বাগত জানাতে আমাদের সব আয়োজন শেষ। আমাদের ব্যানার ফেস্টুনে অন্যান্য স্লোগানের পাশাপাশি ‘ফাইটার অব ডেমোক্রেসি’র কথাও উল্লেখ থাকবে।’

মিয়ারমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করায় সম্প্রতি একটি ব্রিটিশ মিডিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ উপাধি দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো এর ব্যাপক প্রচার করছে। খালেদা জিয়াকে উপাধি দেয়ার ক্ষেত্রে এই উপাধির কোনো ভূমিকা আছে কি না, সেটা অবশ্য জানা যায়নি।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। তবে বেগম খালেদা জিয়া আমার কাছে আপসহীন নেত্রী। এর বাইরেও অন্যান্য সংগঠন তাকে অবশ্যই অন্য বিশেষণ দিতে পারে। কারণ তিনি তো জীবনটা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। তাই এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।’

গত ১৫ জুলাই খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্য সফরে যান। সেখানে তার চোখ ও হাঁটুর চিকিৎসা করার কথা জানিয়েছে তার দল। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে বিএনপি নেত্রীর দেশে ফেরার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে যায়।

খালেদা জিয়া এক টানা কখনো এত বেশি সময় দেশের বাইরে কাটাননি।

রাজনীতিতে খালেদা

খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে আসা ঘটনাচক্রেই বলা যায়। তিনি ছিলেন একজন গৃহিনী মাত্র। তার স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালের ৩০ মে একটি ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন। পরে তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন তিনি।

এরপর বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়া ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হন।১৯৮৪ সালের ১০ মে তিনি দলের চেয়ারপারসন নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি।

সবশেষ কাউন্সিলেও খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়েছেন।

১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বরে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোকে নিয়ে সাত দলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। একই সময় এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় জোটও। পরে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে বিরোধে এই জোট ভেঙে আট দলীয় জোটে পরিণত হয়। দুই জোটের যুগপৎ আন্দোলনেই ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে পতন ঘটে এরশাদের শাসনের।

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিএনপি। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় জামায়াতের সমর্থনে সরকার গঠন করে দলটি। বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া।

এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ ও সমমনাদের বর্জনের মুখে একতরফা নির্বাচন করে আবার ক্ষমতায় আসে বিএনপি। কিন্তু আওয়ামী লীগের তীব্র আন্দোলনের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে সংসদ ভেঙে দেন খালেদা জিয়া। আর ১২ জুনের ভোটে হেরে যাওয়ার পর বিরোধীদলীয় নেতা হন খালেদা জিয়া।

২০০১ সালের ১ অক্টোবর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় জোট নির্বাচনে জিতে খালেদা জিয়া আবারও প্রধানমন্ত্রী হন। তবে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের ভোটে চারদলীয় জোটের ভরাডুবি হয় এবং খালেদা জিয়া আবার বিরোধীদলীয় নেতা হন।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে তা প্রতিহত করার ঘোষণা দেন খালেদা জিয়া। কিন্তু আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জিতে এখন পর্যন্ত ক্ষমতায় আছে। আর এরপর থেকেই প্রথমবারের মতো সরকারি প্রটোকল হারান খালেদা জিয়া।

এই সরকারের পতনের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার অসহযোগ আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি আর কোনো কর্মসূচি দেননি।

গ্রেপ্তার

১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে দলে যোগ দেয়ার পর থেকে মোট চার বার তিনি গ্রেপ্তার হন।

সবশেষ ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দুর্নীতির অভিযোগে পুত্রসহ গ্রেপ্তার হন বিএনপি নেত্রী। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের নির্দেশে মুক্ত হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘ এক বছর সাত দিন কারাভোগ করেন তিনি।