খুচরো নিতে নারাজ দোকানদার, প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রতিবন্ধী ভিক্ষুকদের!

এমন ফ্যাসাদে আগে কখনও পড়েননি সেন্টু শেখ। পকেটে রেস্ত নেহাত কম নেই। কিন্তু ভরদুপুরে হোটেলে ঢুকে ভাত মিলছে না। কারণটা বড় অদ্ভুত। সেন্টুর পকেটে টাকা আছে ঠিকই, কিন্তু নোট নয় সবই খুচরো। আর এটা শুনেই ডোমকল বাজারের রীতিমতো জান-পহেচান হোটেল মালিকও খাপ্পা। পত্রপাঠ বিদায় করে তাঁর সাফ কথা, পাঁচ-দশ টাকার কয়েন না থাকলে মানে মানে কেটে পড়ো! ওদিকে আবুল কালামের তো অবস্থা আরও করুণ। ঘরে টাকা থাকলেও চাল-ডাল কিনে উঠতে পারছেন না। গোল বাধাচ্ছে সেই খুচরো পয়সা। দোকানিদের সব এক রা, খুচরো নিচ্ছি না! নেব না!

অথচ খুচরো ছাড়া নোট সেন্টুরা পাবেন কোথায়! সকাল-সন্ধে বাসস্ট্যান্ডে ভিক্ষা করে প্রতিবন্ধী এই ভিক্ষুকদের আয় বলতে তো ওই খুচরো পয়সাই। ভিখারিদের বাড়িয়ে দেওয়া থালায় নোট আর দেয় কে! কিন্তু সেই খুচরোই যদি বাজারে এমন বেবাক অচল হয়ে যায়, তাহলে চলে কী করে? এই বিষয়টাই প্রশাসনের নজরে আনতে বুধবার ডোমকলে অবস্থান বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন কালামরা।

ভিখারিদের বিক্ষোভের ডাক শুনেই নড়েচড়ে বসেছিল পুলিশ। শেষে ব্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দিয়ে মুর্শিদাবাদ প্রতিবন্ধী ইউনিয়নের সেই বিক্ষোভ পুলিশ সামাল দেয়। এ যাত্রা অবস্থান আর করেননি সেন্টু, কালামরা। তবে রোজগারের পয়সা রাস্তায় ছড়িয়ে ‘প্রতীকী প্রতিবাদ’ অবশ্য জানাতে ভোলেননি তাঁরা। সরকার আদৌ বাতিল ঘোষণা করেনি। অথচ কী আশ্চর্য, এ তল্লাটে ব্যাঙ্ক অথবা দোকানদাররা কেউই ছোট এক টাকার কয়েন নিচ্ছে না। কিন্তু তা বলে ভিক্ষে দেওয়ার বেলায় তো আর আমজনতার স্বভাব বদলায়নি।

ভিখারিদের জন্য তো ঘুরেফিরে বরাদ্দ সেই ছোট্ট এক টাকার কয়েন। কাজেই কালামরা প্রশ্ন তুলছেন, আমরা তবে কোথায় যাব? প্রতিবাদে এদিন মুর্শিদাবাদ প্রতিবন্ধী ইউনিয়নের ইসলামপুর শাখার ভিক্ষুকরা স্থানীয় বাসস্ট্যান্ডে রীতিমতো প্রতিবাদ পথসভাও করেন।
ইউনিয়নের সম্পাদক গোলাম মোর্তুজা জানান, বাসস্ট্যান্ডে প্রতিবন্ধী ভিখারির সংখ্যা পঞ্চাশেরও বেশি।

ডোমকল মহকুমার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে এঁরা ইসলামপুরে ভিক্ষা করেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এক-একজনের রোজগার দু’শো থেকে আড়াইশো টাকা। যার বেশিরভাগটাই ওই ছোট এক টাকার কয়েন। আবুল কালামের কথায়, “কিছুদিন ধরে, লক্ষ করছি চায়ের স্টল থেকে মুদি দোকানদার কেউই ওই কয়েন নিচ্ছে না। আমাদের এক একজনের কাছে পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকার পর্যন্ত কয়েন জমা আছে। আমারই তো বাড়িতে দশ হাজার টাকার কয়েন জমা রয়েছে। অথচ গ্রামে গিয়ে চাল-ডাল ভিক্ষা চাইতে হচ্ছে।” বাধ্য হয়েই বুধবার ‘প্রতিবাদ কর্মসূচি’-র ডাক দিয়েছিল ভিক্ষুকদের এই ইউনিয়ন। সামাল দিতে ছুটে আসে ইসলামপুর থানার পুলিশ।

ইউনিয়নের সম্পাদক গোলাম মোর্তুজা জানিয়েছেন, “আমাদের দাবি নিয়ে দোকানদার ও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন বড়বাবু (থানার ওসি)। তাই অবরোধ-বিক্ষোভ আজ বাতিল করা হয়।” এদিকে ওসি অঞ্জন বর্মন জানিয়েছেন, “সরকার নিষিদ্ধ না করা সত্ত্বেও ব্যবসায়ী, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কেন কয়েন নিচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।”-সংবাদ প্রতিদিন