গর্ভবতী স্ত্রী জানেন না স্বামী বেঁচে নেই
জীবন সংগ্রামে বেঁচে থাকার তাগিদে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে কংক্রিটের নগরীতে আসেন তিন ভাই সারোয়ার হোসেন, আব্দুল কুদ্দুস ও শাহজাহান। স্বপ্ন ছিল বিশাল, তাই কাজও নেন উঁচু ভবন নির্মাণের শ্রমিক হিসেবে। কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিল না। তাই তিন ভাইকেই মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে একসঙ্গে।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উত্তর বাড্ডায় একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে যে তিন নির্মাণ শ্রমিক মারা যান এরাই সেই তিন ভাই।
নির্মাণাধীন ভবনটির লিফট মেরামত করতে গিয়ে ১০ তলার উপর থেকে পড়ে যান দুই ভাই সারোয়ার হোসেন (২৮) ও আব্দুল কুদ্দুস (২৬)। তাদের বাঁচাতে গিয়ে অপর ভাই শাহজাহানও নিচে পড়ে মারা যান। তাদের নিথর মরদেহ এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। গর্ভবতী স্ত্রী জানেন না স্বামী শাহজাহান বেঁচে নেই।
নিহত তিনজনের মধ্যে দুই সহোদর- শাহজাহান মিয়া (২৮), সারোয়ার হোসেন (২৫)। আর তাদের আপন চাচাতো ভাই আব্দুল কুদ্দুস (২৬)। এছাড়া একই ঘটনায় সারোয়ার হোসেন (২৫) নামেরই আরেক শ্রমিক আহত হন। তাকে স্থানীয় এক হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তাদের বাড়ি নেত্রকোনা কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি গ্রামে। শাহজাহান ও সারোয়ারের বাবার নাম মিজানুর রহমান। আর কুদ্দুসের বাবার নাম আতাবুর রহমান। তারা উত্তর বাড্ডার জি এম বাড়ি বাবুল্লা পাড়ায় থেকে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। রাজধানীর উত্তর বাড্ডা বায়ালিয়াপাড়ায় ছিল তাদের বসবাস।
পরিবারের দাবি, একই সাথে একই পরিবারের তিনজন ভবনের উপর থেকে পড়ে মারা যাওয়াটা অবিশ্বাস্য। তাদের পড়ে যাওয়ার নেপথ্যে অন্য কোনো কারণ রয়েছে বলে দাবি তাদের।
শাহজাহানের ভাই তরিকুল ইসলাম জানান, ১১ তলা ভবনের ১০ তলায় লিফটের ফাঁকা জায়গায় দেয়ালে প্লাস্টারের কাজ করছিলেন তিন জন। সারোয়ার ও কুদ্দুস বাঁশ-কাঠ ভেঙে নিচে পড়ে যেতে লাগলে তাদের ধরার চেষ্টা করেন শাহজাহান। কিন্তু তিনজনই পড়ে যান। প্রথম দু’জন ঘটনাস্থলেই মারা যান। গুরুতর আহতাবস্থায় শাহজাহানকে ঢামেকে নিয়ে এলে তাকেও মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
বাড্ডা থানা পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে সারোয়ার ও কুদ্দুসের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। মর্গে নেয়া হয় শাহজাহানের মরদেহও।
নিহত তিনজনের দুলাভাই আজিজুল ইসলাম বলেন, ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে তাদের ঢাকায় আসা। কিন্তু এভাবে এই বয়সে তিন ভাইয়ের এক সাথে মৃত্যুবরণ কেউ মানতে পারছেন না। সারওয়ার ভাইয়ের বউ গর্ভবতী। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তিনি জানেন না স্বামী বেঁচে নেই।
তিনি বলেন, নিহত তিন ভাই নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন না। ২ জন ছিলেন মিস্ত্রি আর একজন ছিলেন শ্রমিক। শ্রমিক ও মিস্ত্রি এক সাথে কাজ করেন না। তাহলে তারা কিভাবে পড়ে গেছেন? এ প্রশ্নের উত্তর চাই। তাছাড়া এখনও ভবনের মালিকপক্ষের কেউ আমাদের সাথে সাক্ষাত করেননি। কোনো ধরনের সহযোগিতাও করেননি। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক ও সন্দেহের।
এ ব্যাপারে বাড্ডা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী ওয়াজেদ বলেন, এখনও ভবন মালিক থানায় আসেন নি। তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এটি দুর্ঘটনা নাকি ঘটানো হয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। নিহতদের পরিবারের কেউ থানায় অভিযোগ করলে আমলে নিয়েই তদন্ত করা হবে।-পূর্বপশ্চিম।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন