গলছে সমুদ্র পথ, শঙ্কিত বিজ্ঞানীরা
নর্থওয়েস্ট প্যাসেজ। উত্তর মেরু দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে দুর্গম এই সাগর-পথ।
এই পথে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখতেন ভ্রমণপিপাসু অভিযাত্রী থেকে শুরু করে গবেষকরা। অথচ তা করতে গেলে আগে বহু কাঠখড় পোড়াতে হতো।
কিন্তু আজকাল অনায়াসেই পাড়ি দেওয়া যাচ্ছে সেই দুর্গম নর্থওয়েস্ট প্যাসেজে। কারণ ধীরে ধীরে গলতে শুরু করেছে এখানকার জমাট বেঁধে থাকা সেই সমুদ্র। পথ সুগম হওয়ার দরুন এ পথ দিয়ে যেতে এখন সময় লাগছে আগের চেয়ে কম।
এমএসভি নর্ডিকা নামে ফিনল্যান্ডের এক বরফ ভাঙা জাহাজ সব চেয়ে কম সময়ে ওই সাগর-পথে ১০ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি পথ পেরিয়ে রেকর্ড গড়ে ফেলেছে। এতটা রাস্তা যেতে জাহাজটি সময় নিয়েছে মাত্র ২৪ দিন।
এই খবর খানিক স্বস্তি দিলেও এর ভিতরেই রয়েছে অশনি সঙ্কেত। কারণ, সমুদ্রের ওই বরফ গলার পিছনে বিজ্ঞানীরা দায়ী করছেন বিশ্ব উষ্ণায়নকে। তাদের দাবি, এই হারে উষ্ণায়ন চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে নর্থওয়েস্ট প্যাসেজ পুরোপুরি বরফমুক্ত হয়ে যাবে। প্রাণীকূলের জন্য যা মোটেও সুখবর নয়।
বহু বছর ধরে সহজ পথে এশিয়া যাওয়ার রাস্তা খুঁজতেন ইউরোপীয় ব্যবসায়ীরা। কিন্তু পাথরের মতো জমাট বরফ ভেঙে এগোনো সহজ ছিল না। ফলে বাণিজ্য নয়, মূলত অভিযানের পথ হয়েই থেকে গিয়েছিল নর্থওয়েস্ট প্যাসেজ। কিন্তু উষ্ণায়নের দাপটে বরফ গলে যাওয়ায় গ্রীষ্মে আগের চেয়ে সহজে যাত্রা করা যাচ্ছে এই পথ দিয়ে। যেটা করে দেখিয়েছে ফিনল্যান্ডের ওই জাহাজটি।
কানাডার সমুদ্র ও মৎস্য দফতরের রেকর্ড বলছে, এর আগে ২০০৮ সালের ৫ জুলাই কানাডার উপকূলরক্ষী বাহিনীর একটি জাহাজ নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জনস থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। সেটি গন্তব্যে পৌঁছেছিল ৩০ জুলাই। কিন্তু এ বার এক দল গবেষক এবং সাংবাদিকদের নিয়ে গত ৫ জুলাই ভ্যাঙ্কুভার থেকে রওনা দেয় এমএসভি নর্ডিকা। ২৯ জুলাই ওই জাহাজটি গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুকে পৌঁছে যায়।
সেই যাত্রাপথের বর্ণনা দিয়ে সাংবাদিকের ওই দলটি জানিয়েছে, কানাডা দ্বীপপুঞ্জে ঢোকার পরে চোখে পড়েছে শুধু একটি চিনা মালবাহী জাহাজ, আলাস্কার একটি মাছ ধরার নৌকা এবং একটি জার্মান প্রমোদতরী। তবে দুর্গম ওই পথের বেশির ভাগটাই জাহাজটিকে সঙ্গ দিয়েছে উত্তর মেরু সাগরের পাখি, সিল আর কিছু তিমি। ভিক্টোরিয়া প্রণালীতে ঢোকার পরে জাহাজের এক যাত্রী একটি মেরু ভালুকও দেখতে পেয়েছেন। জলবায়ু দ্রুত বদলে যাওয়ার ফলে সঙ্কটে এই এরাও।
যাত্রাপথের ছবিও প্রকাশ করেন সাংবাদিকরা। জাহাজ থেকে তোলা সেই ছবিতে দেখা গেছে, বরফের স্তর চিরে উঁকি দিচ্ছে নীল রঙা অপূর্ব সমুদ্র, যা আসন্ন বিপদেরই সঙ্কেত!
সূত্র: আনন্দবাজার
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন