গাজীপুর ও খুলনায় থাকছে ইভিএম, সিসি ক্যামেরা
গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট নিতে কিছু কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহার করা হবে। সেই সঙ্গে ভোট কেন্দ্রের ভেতরের দৃশ্য ধারণে থাকবে ক্লোজ সার্কিট-সিসি ক্যামেরা।
আগামী ১৫ মে গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের তফসিল ঘোষণার শেষে শনিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার- সিইসি কে এম নূরুল হুদা সাংবাদিকদেরকে এসব কথা জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব ইভিএম চালানের জন্য। কিছু কেন্দ্রে পরীক্ষামূলক চালানের জন্য চেষ্টা করব। কোনো কোনো কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে।’
কতগুলো কেন্দ্রে এই ব্যবস্থা থাকবে-সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু না বলে সিইসির উত্তর, ‘যতদূর পারি।’
ভোট গ্রহণে পশ্চিমা দুনিয়ার মতো ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশে অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির আপত্তি আছে। তবে নির্বাচন কমিশন স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে এই যন্ত্রের ব্যবহার করে পরে জাতীয় নির্বাচনেও ব্যবহার করতে চায়। এ জন্য স্থানীয় নির্বাচনে যন্ত্রগুলোর ব্যবহার বাড়িয়ে আস্থার পরিবেশ দৃষ্টি করতে চায় কমিশন।
এর আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে উপনির্বাচনে তফসিল ঘোষণা হলেও ভোট আটকে গেছে সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় গাজীপুর এবং খুলনাতেও এমন কিছু হতে পারে কি না-এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, ‘না আমার মনে হয় নেই। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আমাদের বলেছে (পাঁচ সিটি) সিটি করপোরেশনগুলোতে নির্বাচন নিয়ে কোনো আইনি জটিলতা নেই। আর সীমানা নির্ধারণ নিয়েও কোন জটিলতা নেই।’
একসঙ্গে পাঁচ মহানগরে ভোট না করে দুই সিটিতে আগে ভোট নেয়ার বিষয়ে জানতে চা্ইলে সিইসি বলেন, ‘রমজান এসে গেছে। সামনে এইচএসসি পরীক্ষা। ভাগ ভাগ করে দিলাম। তাতে তো কোনো অসুবিধা নেই।’
খুলনা ও গাজীপুর নির্বাচনের আগাম প্রচারণার ব্যপারে সিইসি বলেন, ‘তাদেরকে আমরা নোটিশ দেব এগুলো নামিয়ে ফেলার জন্য। না নামালে তাদের নমিনেশন পেপার দেয়া হবে না। এগুলো আমাদের আইনেই বলা আছে।’
স্থানীয় সরকারের ১৩৩ এলাকায় ভোট প্রসঙ্গ
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকারের ১৩৩টি এলাকায় ভোটে কিছু এলাকায় গোলযোগ নিয়েও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন সিইসি।
সেদিনের ভোটে টাঙ্গাইলে একটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের চেষ্টার সময় পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। কুমিল্লায় তিনটি ইউনিয়নে কারচুপির অভিযোগে ভোট বর্জন করেছেন বিএনপির প্রার্থীরা। সুনামগঞ্জেও একটি কেন্দ্রে গোলযোগের ঘটনা ঘটেছে।
এসব বিষয়ে এক প্রশ্নে সিইসি বলেন, ‘এখানে দুঃখজনভাবে একটা লোককে প্রাণ দিতে হয়েছে। সেটার কারণ ছিল, ব্যালট ছিনতাইয়ের সময় পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তা মোকাবেলা করেছে। একটি জীবন অত্যন্ত মূল্যবান। আমরা এর জন্য শোক প্রকাশ করতে পারি।
‘আর যেসব অভিযোগ এসেছে সেগুলো তদন্ত করে দেখবো। যেখানে আমার অভিযোগ পেয়েছি, সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে প্রিজাইডিং অফিসারে নেতৃত্বে সেখানে নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছি।’
‘এমন দুইটি সেন্টারে হয়েছে। আমাদের জানার মতো যে ঘটনা হয়েছে, সেগুলো তদন্ত করে দেখব। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেটা বলা যাবে না।
এই অভিজ্ঞতা থেকে সিটি নির্বাচনে বাড়তি কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে-এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, ‘আমরা সতর্ক থাকব। এখানে একটা বিষয় ১৩৩ টি জায়গায় নির্বাচন স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হয়েছে, সেখানে যেসব ঘটনা ঘটেছে সেটা সামগ্রিক নির্বাচনকে ব্যাহত করে না।’
আপনারা কি তবে এর চেয়ে বেশি সহিংসতার আশঙ্কা করেছিলেন?- এমন প্রশ্নে জবাবে সিইসি বলেন, ‘না আশঙ্কা করিনি। তবে হতে পারে। এ সমস্ত ঘটনা দেশে পরিপূর্ণভাবে শেষ করা যায়নি। সেটা যাতে না হয়, আমরা ভবিষ্যতে এর ব্যবস্থা নেব।’
স্থানীয় সরকারের ১৩৩ এলাকার সব জায়গায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করা যায়নি। তাহলে সারা দেশে ৩০০ সংসদীয় আসনে কী হবে?-এমন প্রশ্নও ছিল সিইসির কাছে।
জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীক লোক থাকবে, সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে, আমদের যারা নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত তারা থাকবে, পুলিশ থাকবে, বিজিবি থাকবে, র্যাব থাকবে, সেনাবাহিনীও থাকতে পারে।’
‘দলীয় প্রতীকে হওয়ায় স্থানীয় নির্বাচনে সহিংসতা বেড়েছে কি না, এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, ‘এটা তো বিশ্লেষণের বিষয়। এটা তাৎক্ষণিকভাবে উত্তর দিতে পারব না।’
রাজশাহী, বরিশাল, সিলেটে ভোট ঈদের পর
এর আগে আগামী ১৫ মে ভোটের দিন ধরে গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি। জানান, বাকি তিন মহানগর রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেটে ভোট হবে রোজার ঈদের পর।
তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ১২ এপ্রিল। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ১৫ ও ১৬ এপ্রিল। কারও প্রার্থিতা বাতিল হলে আপিল করা যাবে ১৭ থেকে ১৯ এপ্রিল। আপিল নিষ্পত্তি হবে ২০ থেকে ২২ এপ্রিল।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৩ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ হবে তার পর দিন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করবেন ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রকিবউদ্দিন মণ্ডল। খুলনায় রিটার্নিং কর্মকর্তা থাকবেন খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ইউনুস আলী।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সবশেষ ভোট হয় ২০১৩ সালের ৬ জুলাই। প্রথম সভা হয় ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। আইন অনুযায়ী এ সিটি করপোরেশনের মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর। ৮ মার্চ নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হয়েছে এ সিটির।
খুলনা সিটিতে ভোট হয়েছে ২০১৩ সালের ১৫ জুন। প্রথম সভা হয় ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। এ সিটি করপোরেশনের মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর। ৩০ মার্চ নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হয়েছে।
বাকি তিন মহানগরের মধ্যে সিলেট সিটিতে ভোট হয়েছে ২০১৩ সালের ১৫ জুন। প্রথম সভা হয় ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর। এ সিটি করপোরেশনের মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী ৮ অক্টোবর। এ সিটিতে ১২ এপ্রিল নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হবে।
রাজশাহীতে ভোট হয়েছে ২০১৩ সালের ১৫ জুন। প্রথম সভা হয় ২০১৩ সালের ৬ অক্টোবর। এ সিটি করপোরেশনের মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী ৫ অক্টোবর। ৯ এপ্রিলেএই নগরে ভোটের দিন গণনা শুরু হবে।
বরিশালে ভোট হয়েছে ২০১৩ সালের ১৫ জুন। প্রথম সভা হয় ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর। এ সিটি করপোরেশনের মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী ২৩ অক্টোবর। ২৭ এপ্রিল নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হবে।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী, পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ছয় মাস আগে যে কোনো সময় ভোট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন