গ্রেনেড হামলা: পলাতক আসামিরা কে কোথায়?
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট, সারাদেশে জঙ্গিদের বোমা হামলা এবং গোপালগঞ্জে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিকেলে এক সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশের প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা একটি ট্রাকের ওপর তৈরি মঞ্চে ২০ মিনিটের বক্তৃতা শেষে বিক্ষোভ মিছিল শুরুর ঘোষণা দেন। শেখ হাসিনা মঞ্চ থেকে নিচে নেমে আসতে থাকেন। ঠিক এমন সময় শুরু হয় মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা। মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে বিস্ফোরিত হয় ১১টি শক্তিশালী গ্রেনেড।
সেদিনের সেই গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন কয়েকশ নেতাকর্মী।
ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা দুই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ (বুধবার)। ১৪ বছর এক মাস ২০ দিন পর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হচ্ছে।
আলোচিত এ মামলার মোট আসামি ৪৯ জন। এর মধ্যে বিভিন্ন দেশে পলাতক রয়েছেন ১৮ জন। তবে বিচার কাজ শেষ হতে গেলেও আসামিদের দেশে ফেরানো সম্ভব হয়নি।
পলাতকদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, বিএনপির প্রভাবশালী নেতা হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ।
অন্যরা হলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জেহাদের কর্মী মাওলানা তাজউদ্দিন, রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু ওরফে রাতুল, মহিবুল মুত্তাকীন, আনিসুল মুরসালিন, মুফতি শফিকুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. খলিল, মো. ইকবাল, মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের, মুফতি আবদুল হাই, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, পুলিশের সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান (২০০৪ সালে ডিসি, ঢাকা দক্ষিণ) ও পুলিশ সুপার মো. ওবায়দুর রহমান খান (সাবেক ডিসি, ঢাকা পূর্ব)।
তারেক রহমান-
মামলার তদন্তের দ্বিতীয় ধাপে তারেক রহমানকে আসামি করা হয়। তার অনুপস্থিতিতেই মামলার কার্যক্রম চলে। বর্তমানে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন। ইন্টারপোলের মাধ্যমেও তাকে দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হন তিনি। এরপর তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, আয়কর ফাঁকি, অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা হয়। এসব মামলায় প্রায় দেড় বছর কারাভোগ করার পর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি। পরে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে চলে যান।
হারিছ চৌধুরী-
বিএনপির প্রভাবশালী নেতা হারিছ চৌধুরীও প্রায় দশ বছর ধরে বিদেশে গা ঢাকা দিয়ে আছেন। চার্জশিটে তার নাম আসার পর থেকেই তিনি পলাতক। তার বিরুদ্ধে আরো কয়েকটি মামলা রয়েছে।মালয়েশিয়ায়, লন্ডন, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্রে তার যাতায়াত রয়েছে বলে জানা যায়।
কর্নেল সাইফুল ও মেজর জেনারেল আমিন-
গ্রেনেড হামলা মামলা অন্যতম আসামি ডিজিএফআইয়’র সিটিআইবির সাবেক জিওএস-১ লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার ও পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই পালিয়ে যান। জোয়ার্দার বর্তমানে কানাডায় ও এটিএম আমিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।
মাওলানা তাজউদ্দিন-
গ্রেনেড হামলার পর তারেক রহমান মাওলানা তাজউদ্দিনকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেন বলে অভিযোগ আছে। তবে তার সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ-
কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে পাঁচবারের নির্বচিত সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন ২০০৯ সালে শারীরিক অসুস্থতার অজুহাতে সংসদ থেকে ছুটি নেন। এরপর চিকিৎসার জন্য তিনি সিঙ্গাপুরে চলে যান। এরপর আর দেশে ফেরেননি।
অন্যান্যরা-
জঙ্গি নেতা মুফতি শফিকুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. খলিল, মো. ইকবাল, মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের ও মুফতি আবদুল হাই তারা অনেক আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। বর্তমানে তারা ভারত ও পাকিস্তানে আছেন বলে জানা গেছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন