ঘুরে এলাম ইলিশের বাড়ি
আবু রায়হান মিকাঈল : লঞ্চে চড়ে ইলিশের বাড়ি যাওয়ার স্মৃতি কখনোই ভোলা যায় না। যতক্ষণই থাকবেন, ততক্ষণই মুগ্ধ হবেন। তাই যখন-তখনই হাজির হতে পারেন। সম্প্রতি ইলিশের বাড়ি থেকে ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা ও ভালো লাগার কথাগুলো জানাচ্ছি আজ।
চাঁদপুর, ইলিশের বাড়ি খ্যাত একটি জেলা। হঠাৎ সিদ্ধান্তে চাঁদপুর ভ্রমণ। সঙ্গে ছিলেন নগরপরিকল্পনাবিদ এস এম সাইফ রহমান ও তার ছেলে। সকাল ৮টায় গিয়ে পৌঁছালাম রাজধানীর সদরঘাটে। দ্রুত টিকিট কেটে উঠে পড়লাম চাঁদপুরগামী লঞ্চে।
সকালের নাস্তাটা সেদিন লঞ্চেই করেছিলাম। লঞ্চের ক্যান্টিনে নাস্তা, লাঞ্চ, ডিনারসহ চা, কফি ইত্যাদি অনেক কিছুই পাওয়া যায়।
নতুনদের অবগতির জন্য লঞ্চের ভাড়ার বিষয়টা একটু বলে রাখি। লঞ্চের টিকিট : ডেক ১০০/-, সেকেন্ড ক্লাস চেয়ার ১৫০/-, ফার্স্ট ক্লাস এসি চেয়ার ২০০-২২০/-, বিজনেস ক্লাস এসি চেয়ার ২৭০/-, সিঙ্গেল নন এসি কেবিন ৪০০-৪৫০/- আর এসি সিঙ্গেল কেবিন ৫০০/-। আপনি যদি নদী ও এর তীরবর্তী সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তাহলে ডেক-এ টিকেট কাটাই ভালো। তবে, যে টিকিটই কাটেন না কেন পুরো লঞ্চটি ঘুরে দেখার সুযোগ আছে আপনার।
ঢাকা থেকে চাঁদপুর যেতে সাড়ে ৩ ঘণ্টার মতো সময় লাগে। তবে পুরো সময়টা আপনার চোখের পলকে কেটে যাবে যদি আপনি নদীর প্রেমে পড়ে যান। নদীর প্রেমে হাবুডুবু খেতে খেতে কখন যে পৌঁছে যাবেন ইলিশের বাড়ি বুঝতেই পারবেন না!
আমাদের লঞ্চ ছাড়ল ১৫ মিনিট দেরিতে। দূষিত বুড়িগঙ্গা পার হয়ে ধলেশ্বরী থেকে যখন মেঘনা নদীতে পৌঁছালাম তখন মনে হলো কোনো এক সমুদ্রের বুকে আছি। যেদিকে তাকায় শুধু অথৈ জল। লঞ্চের ছাদ থেকে নদীর সৌন্দর্যটা বেশি উপভোগ করা যায়। তাই চলে গেলাম লঞ্চের ছাদে। হিমেল হাওয়ার পরশে সেদিন রোদ্দুরটাও বন্ধু হয়ে গেল। রৌদ্রের ছটা নদীর জলে পরে বাড়িয়েছে ভালোবাসার গভীরতা!
ইলিশ বিক্রেতাদের হাঁকডাক আর ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ লেখা বিশাল সাইনবোর্ড দেখে বুঝে গেলাম পৌঁছে গেছি আমাদের গন্তব্যে। চাঁদপুর পৌঁছে লঞ্চ থেকে নেমে প্রথমে চলে গেলাম কালীবাড়ি মোড়ে। সেখানে রয়েছে চাঁদপুরের বিখ্যাত ‘ওয়ান মিনিট’ আইসক্রিম ও মিষ্টির দোকান। সেখানকার আইসক্রিমের স্বাদ মনে রাখারই মতো।
ওয়ান মিনিট আইসক্রিমের স্বাদ নিয়ে চলে গেলাম মোহনায়। যে মোহনায় একসঙ্গে মিশেছে পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া। ৩ নদীর মিশ্রিত স্রোত দেখে মনে একটু ভয়ের সঞ্চার হলেও ভালোলাগার কমতি ছিল না। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ছুঁটে আসে মোহনার টানে। পড়ন্ত বিকেলে মোহনার পাড় সদ্য ফোটা গোলাপের মতো রোমাঞ্চ ছড়ায়। এদিকে, মোহনার বুকে জেগে ওঠা দ্বীপটি এখন হয়ে গেছে প্রকৃতিপ্রেমীদের চরণভূমি। তাই ট্রলারে চড়ে দলে দলে যাচ্ছে সবাই দ্বীপান্বিতার পানে।
মোহনায় মুগ্ধ হয়ে চলে গেলাম চাঁদপুর মাছঘাটে। দূরত্ব খুব বেশি নয়, তাই মোহনা থেকে পায়ে হেঁটেই গেলাম। এই ঘাটেই কেনাবেচা হয় ইলিশ। পাইকারি-খুচরা সব রকমই বিক্রি হয়। জেলেদের সদ্য ধরে আনা একদম তরতাজা ইলিশের সমাহার সেখানে। সেখান থেকে ঢাকা সহ বিভিন্ন স্থানে ইলিশ সরবরাহ হয়ে থাকে।
মাছঘাটে ইলিশের সরগরম থাকে বেশ সকালে ও শেষ বিকেলে। এজন্য এই দুই সময়ের বাহিরে গেলে বাজারটা একটু নিরামিষ মনে হতে পারে।
মাছঘাটের আশপাশে রয়েছে বেশ কিছু হোটেল। আর এখানে আছে দারুণ একটা সুবিধা। আপনি বাজার থেকে পছন্দমতো ইলিশ মাছ কিনে পাশের কোনো হোটেলে দিতে পারেন। তারা আপনার সামনেই কেটেবেছে মাছটা ভেজে দিবে। এ জন্য সামান্য কিছু চার্জ নিবে তারা। তাছাড়া সেখানকার প্রত্যেকটা হোটেগুলোতেও ইলিশ পাবেন। হোটেলভেদে প্রতি পিস ইলিশ ৮০-১২০ টাকা দাম নিবে। ভাত, ইলিশ ভাজি আর সঙ্গে খেতে পারেন ইলিশের লেজের ভর্তা। স্বাদে-গন্ধে যোগ হবে নতুন মাত্রা।
সেদিন আমাদের কাছে তাজা ইলিশের স্বাদটা ছিল সত্যি অন্যরকম। তাই ইলিশ ভোজনে পূর্ণতা পেয়েছিল ইলিশের বাড়ি ভ্রমণের শূন্যতা।
এবার ঢাকায় ফেরার পালা। সন্ধ্যায় এলাম চাঁদপুর লঞ্চঘাটে। ঢাকাগামী লঞ্চে উঠলাম। কিছুক্ষণ পর একটু জোরেসোরে হর্ণ বাজিয়ে লঞ্চ ছেড়ে দিল। লঞ্চের ছাদ থেকে সন্ধ্যাতারার আকাশটা অসম্ভব সুন্দর লাগছিল। মৃদু হাওয়া সঙ্গ দিয়ে যখন একটু রাত নামলো তখন এক পৃথিবী ভালোবাসা যেন আমার হাতের মুঠোয় চলে এলো। বিশাল মেঘনার বুকে দুর্বার গতির লঞ্চের ছাদে দাঁড়িয়ে যেন জীবনের সেরা একটি মুহূর্ত অবলোকন করলাম।
লেখক : গণমাধ্যম কর্মী
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন