চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মিঠাছড়া জেনারেল হাসপাতাল ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মিঠাছড়া জেনারেল হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায়’ সানজিদা আক্তার (১৯) নামের এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার জেরে ক্ষুদ্ধ জনতা হাসপাতাল ঘেরাও, করে ভাংচুর করেছে। পরে সেনাবাহিনী ও মিরসরাই থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে এই ঘটনা ঘটে। এঘটনায় স্থানীয় বাজার কমিটি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রোগীর স্বজনদের সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বৈঠকে নবজাতক বাচ্চার চিকিৎসা বাবদ ৭ লাখ টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এরআগে রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে প্রসববেদনা উঠলে স্থানীয় মিঠাছড়া জেনারেল হাসপাতালে সানজিদা আক্তার কে ভর্তি করান স্বজনরা। পরে রাত ৩ টায় নরমাল ডেলিভারি শেষে কন্যা সন্তান প্রসব করার পর সানজিদা আক্তার জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রেফার করেন হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক। নবজাতক কন্যা শিশুটি বর্তমানে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালের এনআইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
সানজিদা আক্তার উপজেলার মিরসরাই সদর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মিঠাছড়া এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের বাড়ির মো. ইকবাল হোসেনের স্ত্রী এবং একই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের শ্রীপুর গ্রামের নুর হোসেনের মেয়ে।
সানজিদার স্বামী মো. ইকবাল হোসেন বলেন, প্রসব বেদনা উঠলে রোববার বিকালে আমার স্ত্রীকে মিঠাছড়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক শারমিন আয়েশা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য বলেন। তিনি আল্ট্রা করে বলেন বাচ্চার সবকিছু ঠিক আছে নরমাল প্রসবের জন্য আমরা চেষ্টা করবো।
রাত ৩ টায় ডেলিভারি করানোর জন্য আমার স্ত্রীকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর নার্সরা এসে জানায় বাচ্চা হওয়ার পর আমার স্ত্রী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে, তাকে দ্রæত চট্টগ্রামে নিয়ে যান। তিনি ভয়ে স্ট্রোক করে ফেলছেন। তখন তারা ওর শরীরে পালস চেক করে দেখছে, ওর পালস বন্ধ ছিলো। ডা. শারমিন আয়েশা যদি আমাদের আগে থেকে বলতো তাহলে আমরা অপারেশন চট্টগ্রামে নিয়ে করতাম।
রাত ৪ টার দিকে আমরা তাকে চট্টগ্রাম শহরের মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরো বলেন, আমার স্ত্রী অন্তসত্তা হওয়ার পর থেকে মিঠাছড়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শারমিন আয়েশার পরামর্শে চিকিৎসা নিয়ে আসছিল। নরমাল ডেলিভারির জন্য টাকা দিয়ে হাসপাতালে রেজিষ্ট্রেশন করে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চলাফেরা করেছেন। অথচ তিনি তাকে মেরে ফেললেন।
সানজিদা আক্তারের ভাই মো. রকিবুল হোসেন বলেন, আমার বোনকে ভোররাতে চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার ইসিজি করে হার্টবিট পায়নি। পরবর্তীতে তাদের আইসিইউ খালি না থাকায় অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন।
সেখান থেকে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে নিয়ে গেলে ওখানে আইসিইউ’তে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে বলেন তার (সানজিদা) অনেক আগে মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার দুপুর ১২টায় আমার বোনের জানাযা শেষে দাপন করা হয়েছে। আমার বোনের নবজাতক কন্যা শিশু বর্তমানে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালের এনআইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় স্থানীয় বাজার কমিটি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে মিঠাছড়া জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা বাবদ ৭ লাখ টাকা দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
মিঠাছড়া জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মো. মাসুদ রানা বলেন, রোববার বিকালে সানজিদা আক্তার হাসপাতালে ভর্তি হয়। রাত ৩ টা ৫০ মিনিটে তার নরমাল ডেলিভারি হয়। ২ থেকে ৩ মিনিট পরে পালস চেক করে দেখা হয় তার জ্ঞান নাই। সম্ভবত তিনি হৃদরোগে আক্তান্ত হয়েছিলেন।
পরবর্তীতে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাত ৪ টায় চট্টগ্রাম মেডিকেলে স্থানান্তর করি। ওই মহিলার চিকিৎসার ক্ষেত্রে হাসপাতালের কোন গাফেলতি ছিলো না। আমরা প্রতি ৩০ মিনিট পরপর রিপোর্ট নিয়েছি। বাচ্চা ডেলিভারির পর রোগী যদি হার্টের সমস্যা দেখা দেয় তখন আমরা কি করতে পারবো। সৃষ্টিকর্তার বাইরে আমাদের কিছু করার থাকে না। চিকিৎসকরাতো সৃষ্টিকর্তা না। সৃষ্টিকর্তা জানে কখন কার মৃত্যু হবে। জীবন মৃত্যু সবকিছু সৃষ্টিকর্তার হাতে।
তিনি আরও বলেন, সোমবার বিকেলে রোগীর স্বজনরা এসে হাসপাতালে থাকা আমার বাসার গেইট ও সিসি ক্যামরা ভাংচুর করে। হাসপাতালে ভাংচুরের চেষ্টা করলে পুলিশ ও স্থানীয়রা এসে বাঁধা দেয়। এই ঘটনায় স্থানীয় মিঠাছড়া বাজার পরিচালনা কমিটির আহŸায়ক কামাল উদ্দিন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা এবং সানজিদা আক্তারের পরিবার সহ একটি বৈঠকে সমস্যা সমাধান হয়েছে বলে তিনি জানান।
মিঠাছড়া জেনারেল হাসপাতালের ডাঃ শারমিন আয়েশা বলেন, বাচ্চা প্রসবের পরও সানজিদার জ্ঞান ছিলো। কিছুক্ষণ পর সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সাথে সাথে তার দু’হাতে ক্যানোলা লাগাই দি। তার পেশার এবং পালস কম ছিলো। আমার ধারণা তিনি স্ট্রোক করার কারণে মারা যেতে পারেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ‘আজতো সরকারি ছুটি ছিলো। কালকে অফিসে গেলে জানবো। এই ঘটনায় ভূক্তভোগী পরিবার যদি লিখিত অভিযোগ দিয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন