চামড়ার দরপতন কেন?
লোকসানে মাথায় হাত চামড়ার ব্যাপারিদের। কারণ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাজধানীর আড়তগুলোতে চামড়া এনে অর্ধেক দামেও বিক্রি করতে পারেননি তাঁরা। আড়ৎদাররা বলছেন, তাদের মূলধন ঘাটতি, চামড়া শিল্প সাভারে স্থানান্তর এবং চামড়া সংরক্ষণের খরচ বৃদ্ধিসহ নানা কারণে চামড়ার এই দরপতন।
সিলেট থেকে দেড় হাজার পিস চামড়া কিনে ঢাকার পোস্তায় এসেছেন আইনুদ্দিন। দুই ট্রাক চামড়া নিয়ে এক আড়ত থেকে অন্য আড়তে ঘুরেছেন বৃহস্পতিবার ভোর থেকে। দুপুর পর্যন্ত কারো কাছে চামড়া বিক্রি করতে পারেননি তিনি। কারণ কেনা দামের চেয়ে অনেক কম দাম বলছেন আড়ৎদাররা।
আইনুদ্দিন বলেন, ‘চামড়াটা নিয়া আইসলাম, চামড়াডা বিক্রি হইছে না। কেউ দামও করে না, লবণ নাই। কেউ বলে, ট্যাকা নাই। চামড়াডা লওয়া আসলা ৮০০ ট্যাকা করি, কেউ ২০০ টাকা কন না।’
এরপরই কাঁদতে শুরু করেন আইনুদ্দিন। চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, ‘কীভায় আমরায় বাঁচতাম।’
আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্যাপারি নজরুল ইসলাম তো প্রায় পাঁচশ পিস চামড়া বিক্রি করেন কেনা দামের অর্ধেক দামও পাননি।
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সারা দিন ঘুইর্যা হপায় বেচলাম আড়াইশ ট্যাকা কইরা। গোড়াত কেনা সাড়ে পাঁচশ টাকা করে, তারপর গাড়ি ভাড়া দিয়া আনছি।’
আড়ৎদাররা বলছেন, চামড়া সংরক্ষণের প্রতিটি স্তরে খরচ বেড়েছে। তাই বেশ সতর্ক অবস্থানে থেকে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই চামড়া কিনেছেন তাঁরা।
এক আড়ৎদার (৬৫) বলেন, ‘ক্যামিকেলের দাম বাড়তি, লবণের দাম বাড়তি, কারখানা হেমায়েতপুর গেছে সেটাও খরচ বাড়তি। সবটা এসে তো চামড়ার উপরেই পড়ে।’
আড়তে চামড়ায় লবণ দেওয়ার কাজে তদারককারী এক যুবক (২৫) বলেন, ‘উনারা যে রেট দিবেন সেই রেটেই কিনতে হবে, এর বেশি হলে উনারা কিনবেন না।’
তবে ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, চামড়া শিল্প হাজারিবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তর জটিলতায়, চামড়া কিনতে আড়ৎদারদের টাকা দেয়নি ট্যানারি মালিকরা। তাই আড়ৎদারদের মূলধন ঘাটতির প্রভাব পড়েছে চামড়ার দামে।
এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দরপতনের কারণেও দামের ব্যাপারে সতর্ক ছিলেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. টিপু সুলতান বলেন, ‘অনেক চামড়া রীতিমতো রাস্তায় পড়ে আছে। কিন্তু সংরক্ষণ করার মতো জনবল নেই, লবণ নেই এবং গুদামও নেই। এ ছাড়া যতটুকু হওয়ার রাতে আমাদের হয়ে গেছে। এখন ক্যাপাসিটির বাইরে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, টাকাও নাই আমাদের কাছে।’
তবে নিজেদের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ চামড়া সংরক্ষণ করতে পেরেছেন বলে জানান আড়ৎদাররা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন