চার ছেলের হাতে মার খাওয়া বাবা ক্ষমা করে দিলেন সন্তানদের
পাঁচ ছেলের চারজনের হাতেই মার খেয়েছেন শতবর্ষী বাবা জামির উদ্দিন শেখ। মার খেলেও বাবা জামির উদ্দিন শেখ সন্তানদের ক্ষমা করে দিয়েছেন।
আজ বুধবার ঝিনাইদহের শৈলকুপার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উসমান গণির অফিসে সন্তানদের উপস্থিতিতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তিনি সন্তানদের ক্ষমা করে দেন।
জামির উদ্দিন শেখের বাড়ি শৈলকুপার বিপ্র বগদিয়া গ্রামে।
উসমান গণির অফিস কক্ষে সকালে শুনানির একপর্যায়ে সন্তানেরা তাঁদের ভুল বুঝতে পারেন। বড় ছেলে সাহেব আলী বাবার পা ধরে ক্ষমা চান। ছেলেরা বাবার সঙ্গে আর কোনো দিন খারাপ ব্যবহার করবেন না বলে অঙ্গীকারও করেন। তাঁরা এখন থেকে বাবার ভরণপোষণ, চিকিৎসার খরচসহ যাবতীয় দায়িত্ব পালন করবেন। দ্বিতীয় সন্তান ঢাকায় অবস্থান করায় তাঁকে ফোনে অবহিত করা হলে তিনি সব বিষয়ে একমত পোষণ করেন।
বাবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছেন বড় ছেলে সাহেব আলী। ছবি: সংগৃহীতশুনানির পর নিম্নোক্ত বিষয়ে আপসের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয়—
*ছোট ছেলের সংসার না থাকায় এখন থেকে বাবা চার ছেলের বাড়িতে এক মাস করে অবস্থান করবেন। এ সময় অবস্থানকালে বাবাকে যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই বাবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা যাবে না।
*সন্তানের বাড়িতে অবস্থানকালে বাবার যাবতীয় ভরণপোষণ ও যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
*বাবাকে মামলা পরিচালনা বা আইনের আশ্রয় গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনোরূপ বাধা প্রদান করা যাবে না।
*পরিবারের অন্য কোনো সদস্য বাবার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে তিনি তা সন্তানকে অবহিত করবেন। সন্তান এ বিষয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
* শুনানিতে উপস্থিত সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য এবং আবেদনকারীর ভাতিজা গোলাম রসুল এ বিষয়ে তদারকি করবেন। তাঁরা ইউএনওকে সময়ে সময়ে বিষয়গুলো অবহিত করবেন।
*উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরেজমিনে বৃদ্ধ লোকটির বাসস্থান পরিদর্শন করবেন এবং তাঁর অবস্থা ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করবেন।
*চার মাস পর ইউএন জামির উদ্দিন শেখের সঙ্গে কথা বলবেন। কোন ছেলে বেশি যত্ন করেছেন, তা তিনি ইউএনওকে অবহিত করবেন।
*কোনো শর্ত কোনো সন্তান অমান্য করলে বাদী পিতা-মাতা ভরণপোষণ আইন-২০১৩ বা অন্য কোনো উপযুক্ত আইনের আশ্রয় গ্রহণ করবেন। এ বিষয়ে পিতাকে দায়ী করা যাবে না।
এসব শর্ত ছেলেরা বিনা বাক্যে মেনে নিয়েছেন।
শৈলকুপার ইউএনওর উসমান গণির সঙ্গে শতবর্ষী বাবা ও তাঁর সন্তানেরা। ছবি: সংগৃহীতশৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উসমান গণি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাদী জামির উদ্দিন এ মাসের ৮ তারিখে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গণশুনানিতে উপস্থিত হন। জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিক টেলিফোনে আমাকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে বাদী জামির উদ্দিন চলতি মাসের ১০ তারিখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে উপস্থিত হয়ে সন্তানদের বিরুদ্ধে মারধর ও ভরণপোষণ না দেওয়ার অভিযোগ দেন। বুধবার সব সন্তানের উপস্থিতিতে শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়। শুনানিতে ছেলেরা বাবার সঙ্গে আর কোনো দিন খারাপ ব্যবহার করবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন। বাবার ভরণপোষণ, চিকিৎসার খরচসহ যাবতীয় দায়িত্ব পালন করবেন তাঁরা। শুনানিতে কয়েকটি বিষয়ে আপসের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়।
‘পাঁচ ছেলের চারজনের হাতেই মার খেয়েছেন শতবর্ষী বাবা’ শীর্ষক এক খবর প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত হয়। এরপরই জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক শৈলকুপার ইউএনওকে ফোন করে বিস্তারিত জানতে চান। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন