চিরিরবন্দরে মৃৎশিল্পীদের দূর্দিন
মোহাম্মদ মানিক হোসেন চিরিরবন্দর(দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার মৃৎশিল্প ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে ফলে ভালো নেই শিল্পীরা। প্রয়োজনীয় পূজিঁ, বাজার দর, সরকারি পৃষ্ঠপোষক আর কাঁচা মালের অভাবে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে
এ শিল্পের সাথে জড়িত অনেকেই বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। জানা গেছে,এক সময় চিরিরবন্দর উপজেলার নশরত পুর গ্রামের রানীরবন্দর হাট সংলগ্ন নশরতপুর পাল পাড়ার প্রায় ৯০টি পরিবার মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত ছিল। বর্তমানে প্রায় ১৭ থেকে ১৮টি পরিবার কোন রকমে আঁকড়ে ধরে আছে। বর্তমানে এ্যালুমোনিয়াম ও প্লাষ্টিকের জিনিষপত্রের সাথে প্রতিযোগিতায় এবং কাঁচা মাল, বাজার দর ও প্রয়োজনীয় পুজিঁর অভাবে মাটির তৈরি তৈজসপত্র টিকতে পারছেনা।
চিরিরবন্দরের নশরত পুর পাল সম্প্রদায়ের বিরাট একটি অংশ মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত। তারা এলাকায় কুমার বা পাল নামে পরিচিত। অভাব অনটনের মধ্যে ও হাতে গোনা কয়েক জন বাপ-দাদার পেশা আকড়ে ধরে আছে। তাদের অবস্থা অনেকেরই শোচনীয়। এসব কুমারের মধ্যে অনেকেই ভ’মিহীন। মৃৎশিল্পী অনেকেই অভিযোগ করেন,কেউ তাদের খোঁজ-খবর নেয় না,কেউ জানতে চায় না, তাদের সুখ-দুখের খবর। ওই গ্রামের শেফালী রাণী পাল (৬৫), সুবল চন্দ্র পাল (৪৫),ওমল চন্দ্র পাল(৬০),ওতুল চন্দ্র পাল(৬৫) বিমল চন্দ্র পাল (৫৭), ছবি রাণী পাল (৪৭) জানান, হাড়ি-পাতিল ও অন্য সব জিনিস পত্র তৈরি করতে কাঁচা মাল এঁটেল মাটি আমাদের গ্রামের পার্শ্ব দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতি নদী থেকে সংগ্রহ করা যেত। বর্তমানে নদী ভরাট ও ভূমি দস্যুদের কারনে ইছামতি নদী থেকে আর মাটি তোলা হয় না।
তাই পাশ্ববর্তী গ্রাম ১০ কি:মি দুর থেকে পয়সার বিনিময়ে মাটি কিনে আবার ভ্যান যোগে আনতে হয়। হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে মাটির সামগ্রী তৈরী করে রোদে শুকিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে ব্যবহার যোগ্য করে সেগুলো চিরিরবন্দর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলা-উপজেলার গ্রাম-গঞ্জে বিক্রি করা হয়।
জ্বালানী খড়ির দাম বেশী হওয়ায় ভাটা পুড়ে মাল বিক্রি করে নাম মাত্র লাভ হয়। এ লাভ দিয়ে সংসার চলেনা। বাপ-দাদার পুরোনো পেশার ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ পেশা ধরে আছি। কথা হয় অনিল পাল,সুদেব পাল, মহাদেব পালসহ অনেকের সাথে তারা জানায়, কাঁচা মাল, পূঁজির অভাব ও প্রতিয়োগিতায় টিকতে না পারায় বর্তমানে আমাদের দূর্দিন। কুমারদের দাবী সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা, সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রশিষ্কনের ব্যবস্থা করলে মৃৎশিল্পকে পুনজ্জীবিত করা সম্ভব। তাহলেই পাল সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এ পেশা রক্ষা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন