চুয়াডাঙ্গায় পুত্র সেজে প্রতারকচক্রের ফাঁদ; বাবার খোয়া গেল ৫ লাখ টাকা

প্রতিনিয়তই প্রযুক্তির মাধ্যমে যতই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ততই একই প্রযুক্তিতে প্রতারক চক্রের অপরাধও বেড়েইে চলেছে। তেমনই এক ঘটনায় প্রবাসী ছেলের কণ্ঠ নকল করে বাবার কাছ থেকে প্রতারক চক্রের সদস্যরা কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে ৫ লাখ টাকা।

এই নতুনত্ব ফাঁদে ফায়দা লুটেছে চক্রটি। অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে ওই চক্রের ৩ সদস্য। গভীর রাতে বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে রাজশাহী থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করেছে জীবননগর থানা পুলিশ।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে হারুন অর-রশিদ (২৩)। রাজশাহী জেলার বোয়ালিয়া থানার মথুরাডাঙ্গা গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে নাহিদ হোসেন (২৬) ও নরানীনগর সাধুর মোড়ের মৃত সৈয়দ ইয়াসিন আলীর ছেলে আমিরুল ইসলাম (৬০) গ্রেফতারকৃত তিন প্রতারককে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে তদেরকে।

পুলিশ জানায়, মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জীবননগর উপজেলার উথলী এরিয়া অফিসের নাইট গার্ড ফকির মোহাম্মদের (৭২) ছেলে শরিকুল ইসলাম দুবাই প্রবাসী। তারা বাবা-ছেলে মোবাইল ফোনের ইমু অ্যাপে কথা বলতেন। এ অবস্থায় তাদের ইমু আইডি নম্বরটি প্রতারক চক্রটি কৌশলে হ্যাক করে ছেলে সেজে ফকির মোহাম্মদের সাথে কথা বলতে থাকে। এক পর্যায়ে প্রবাসী শরিফুল ইসলাম পরিচয়ে জানায়, দুবাইয়ে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছে তার টাকা লাগবে। এভাবে প্রতারক চক্রের সদস্যরা গত ২৫ অক্টোবর বিকাল ৩ টা থেকে ২৬ অক্টোবর দুপুর সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত ৮ টি বিকাশ নম্বরের মাধ্যমে ৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। এ ব্যাপারে উপজেলার উথলী গ্রামের মৃত আলীহিম মন্ডলের ছেলে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। জীবননগর থানা পুলিশ সেই ডায়েরির সূত্র ধরে বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করেন।

জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে এসআই সাজ্জাদ হোসেন সঙ্গীয় ফোর্সসহ বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংবদ্ধ প্রতারক চক্রের ২জনকে এবং জীবননগর উপজেলার উথলী এলাকা থেকে প্রতারক চক্রের সন্দেহ ভাজন ১জন সদস্যকে গ্রেফতার করেন।

ভুক্তভোগী ফকির মোহাম্মদ বলেন, আমার ছেলে শরিফুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে দুবাই প্রবাসী। প্রতারক চক্র আমার ছেলে সেজে আমার সাথে আমার ছেলের মোবাইল ইমু হ্যাক করে ভয়েস কলের মাধ্যমে কথা বলে। এক সময় আমার নিকট দুবাই ব্যবসার কথা বলে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। হ্যাকাররা আমাদের বাড়ীর সার্বিক অবস্থা হুবহু আমার ছেলের মতই প্রকাশ করায় আমরা বিশ্বাস করি। আমাদের পরিবারের অসুস্থ লোকজনের কথা এবং কিছু টাকা আমার মেজ ছেলের গরু বিক্রি করেও প্রতারক চক্র দিতে বলে আর সব কিছুই আমার ছেলের কণ্ঠের মত হওয়ায় আমরা বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছি।
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল খালেক গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গ্রেফতারকৃত তিন প্রতারক আন্তঃজেলা প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা ভুক্তভোগী ফকির মোহাম্মদকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে মোবাইল বিকাশের মাধ্যমে পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

তাদেরকে থানার এসআই সাজ্জাদ হোসেন বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সনাক্ত করণের পর বুধবার রাতে বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে গ্রেফতার করা হয়। পরে আসামিদের বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।