এহসানের ওপর নৃশংসতা
ছাত্রলীগের সাত নেতাকে ঢাবি থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র এহসান রফিকের ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের সাত নেতাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ড (ডিবি)।
সোমবার তাদের বহিষ্কার করা হয় বলে এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী।
সাতজনের মধ্যে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. ওমর ফারুককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
অন্য ছয়জনকে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজনকে দুই বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এরা হলো সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের সামিউল ইসলাম সামিন, দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের আহসান উল্লাহ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের মো. রুহুল আমিন বেপারী, উর্দু বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের মো. মেহেদী হাসান হিমেল ও লোকপ্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ফারদিন আহমেদ মুগ্ধ।
এ ছাড়া ঘটনা সংঘটিত করার প্ররোচনা দানে সংশ্লিষ্টতার কারণে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মো. আরিফুল ইসলামকে এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ড।
বহিষ্কৃত সাতজনের মধ্যে আরিফুল ইসলাম সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি, মেহেদী হাসান হিমেল উপপ্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, ওমর ফারুক, রুহুল আমিন বেপারী ও ফারদিন আহমেদ মুগ্ধ হল শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক এবং সামিউল ইসলাম সামিন ও আহসান উল্লাহ হল ছাত্রলীগের সদস্য।
এহসান রফিকের ওপর হামলার ঘটনায় এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান হিমেল, ওমর ফারুক ও রুহুল আমিনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় কমিটি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আজ সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ডের সভা হয়। সেখানে ঘটনার সব তথ্য-প্রমাণ ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হল কর্তৃপক্ষের তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে দোষীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিন রকমের বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়।
এই সুপারিশ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী বোর্ড সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর।
গত ১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এহসান রফিককে মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরের দিনও তাঁকে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। মারধরের কারণে একটি চোখে মারাত্মকভাবে আঘাত পান রফিক। এক সময় পালিয়ে ওই কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন এহসান।
এহসান রফিক সাংবাদিকদের জানান, ছাত্রলীগ নেতা ওমর ফারুককে ধার দেওয়া ক্যালকুলেটর ফেরত চাওয়ায় তাঁকে শিবির আখ্যা দিয়ে বেধড়ক মারধর করে রক্তাক্ত করেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্রলীগের একাধিক নেতা।
জানা যায়, ওমর ফারুক ও তাঁর কর্মীরা এহসান রফিককে ধরে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেলের কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে এহসান রফিক শিবিরকর্মী কি না তা যাচাইয়ের চেষ্টা চলে। শিবিরকর্মী হিসেবে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য তাঁকে বেধরক পেটানো হয়।
পরে এহসান রফিককে হল থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন হল শাখার সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল। হলের গেটে আসার পর এহসান রফিক অভিযোগ করেন রুহুল আমিন, ওমর ফারুক ও মেহেদী হাসান হিমেল তাঁকে মারধর করেছেন। এ সময় তিনি চোখে মারাত্মক আঘাত পান। অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সড়ক দুর্ঘটনায় আহতের কথা বলে প্রাথমিক চিকিৎসা করানোর পর আবার হল ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান রাসেলের কক্ষে নেওয়া হয়।
পরের দিন সকালে চোখের অবস্থা আবার খারাপ হলে আরেক দফা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। পরে আবার হলে ফিরিয়ে নিয়ে ছাত্রলীগ নেতার কক্ষে রাখা হয়।
এহসান রফিক জানান, গভীর রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত কোনো খাবার দেওয়া হয়নি তাঁকে। এরপর তিনি কৌশলে পালিয়ে এসে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে গিয়ে অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে এস এম হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল বলেন, ‘তাদের বিষয়টি মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে শিবির করত না।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন