ছেলে বিসিএস ক্যাডার, অনাহারে মরতে বসলেন মা
৮০ বছরের বৃদ্ধা মৃদুল সাহা। ফেনী পৌরসভার মধুপুরের পোদ্দার বাড়ির ঝুপড়ি ঘরে খেয়ে না খেয়ে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে ছিলেন দীর্ঘ চার বছর।
পাঁচ ছেলে-মেয়ে বিলাসী জীবন-যাপন করেও অসুস্থ মায়ের খোঁজ রাখার সময় নেই কারও। মঙ্গলবার বৃদ্ধার ছেলে সুশান্ত সাহার মা মারা গেছে মর্মে পুলিশকে মরদেহ উদ্ধারের জন্য ফোন করলে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০ বছর আগে ফেনী শহরের চালের আড়তের মালিক হরিপদ সাহা মারা যান। বিপুল ধন-সম্পদ রেখে ইহলোক ত্যাগ করেন তিনি। পাঁচ সন্তানকে মানুষ করে রেখে যান স্ত্রীর কাছে।
বাবার মৃত্যুর পর ছেলে বাপ্পি সাহা ও বিপুল সাহা চালের আড়ত দেখাশোনা করছেন। থাকেন বাড়ি থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে ফেনী শহরে। মেজো ছেলে সুশান্ত সাহা বিসিএস ক্যাডার। চাকরি সূত্রে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কক্সবাজারে অবস্থান করছেন তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা মেয়ে শর্বরী সাহা ও গৃহিণী সুমি সাহা থাকেন শ্বশুরবাড়িতে। কিন্তু অসহায় মায়ের খোঁজ রাখেন না কেউ।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু ইউসুফ ভূঁইয়া বাদল বলেন, মঙ্গলবার বৃদ্ধার মেজো ছেলে পুলিশকে খবর দেন তার মা মারা গেছেন, তাকে উদ্ধার করতে হবে। পরে তিনিসহ পুলিশ দরজা ভেঙে জীবিত অবস্থায় বৃদ্ধাকে উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, সিভিল সার্জন ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। বৃদ্ধার সেবায় নিয়োজিত আছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়।
নুর মোহাম্মদ, নয়ন ও সোহাগ নামের তিন প্রতিবেশী জানান, মৃদুল সাহাকে উদ্ধারের পর মেয়ে শর্বরী সাহা হাসপাতালে এলেও মায়ের কাছে যাননি। দূর থেকে খবর নেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে কতক্ষণ আটকে রাখে।
বৃদ্ধার মেজো ছেলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কক্সবাজারের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, আমাদের তিন ভাইয়ের স্ত্রীরা কেউ মাকে সঙ্গে রাখতে চায় না। সেজন্য মাকে আমাদের সঙ্গে রাখতে পারিনি। তবে মা গ্রামের বাড়িতে থাকতে চাইতেন। আমি মায়ের খোঁজ-খবর রাখতাম।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়ের প্রধান সমন্বয়ক মঞ্জিলা আক্তার মিমি বলেন, অসহায় মায়ের সেবায় সহায়ের সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিয়োজিত আছেন। সার্বিক দেখাশুনার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে ওই বৃদ্ধা মাকে।
ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. হাসান শাহরিয়ার করিব বলেন, বৃদ্ধাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ৭২ ঘণ্টা পর বলা যাবে তার শারীরিক অবস্থা কেমন। তিনি স্ট্রোকসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন বলে আমাদের আশঙ্কা।
এ বিষয়ে ফেনীর পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, বৃদ্ধা মাকে সন্তানরা অবহেলা করে মেরে ফেলার পাঁয়তারা করছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন