জন্মের পর থেকে ভাত খায়নি তারা!

জন্মের পর থেকে ভাত খায়নি তারা!
বাঙালি ডাল-ভাতে অভ্যস্ত হলেও ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে হুমাইরা (১৩) ও হাসিবের (১৮) বেলায়। ভাতের গন্ধ পেলেই বমি আসে তাদের। ভাত খাওয়াতে গেলে তাদের দুজনের অজ্ঞান হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সন্তানদের অজানা এ সমস্যা সমাধানে চিকিৎসার পেছনে পয়সা খরচ করেও কোনো লাভ হয়নি। শেষে সন্তানদের ভাত খাওয়ানোর চেষ্টা বাদ দিয়েছে তাদের পরিবার।

হুমাইরা পারভীনের বাড়ি কুড়িগ্রাম পৌর শহরের হাসপাতালপাড়া গ্রামে। সে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা মো. হাসান আলী পেশায় এনজিও কর্মচারী। মা বিথী আক্তার পেশায় গৃহিণী। দুই বোনের মধ্যে হুমাইরা বড়।

অন্যদিকে, হাসিবুর রহমান রাহি কুড়িগ্রাম পৌর শহরের পুরাতন স্টেশনপাড়ার মুদি দোকানদার মো. আনোয়ারুল ইসলাম আকাশ ও হাবিবা পারভীন দম্পতির বড় ছেলে।

জানা গেছে, হুমাইরা ও হাসিব দুজনই জেদি প্রকৃতির। তবে হুমাইরার পড়াশোনা, চলাফেরা অন্যদের মতো স্বাভাবিক হলেও হাসিবের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। শত চেষ্টা করেও ছেলেকে পড়াশোনা করাতে পারেননি তার বাবা-মা। কেননা হাসিবের বয়স ১৮ বছর হলেও তার চলাফেরা এখনো তিন/চার বছর বয়সী শিশুদের মতো। সমবয়সীদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া কিংবা খেলাধুলা করা অপছন্দ করেন তিনি। সবসময় শিশুদের খেলনা নিয়ে সময় কাটাতে ভালো লাগে হাসিবের।

কোনো আত্মীয়-স্বজনের বাসায় দাওয়াতে গেলে সন্তানের জন্য বাসা থেকে রুটি-পরোটা সঙ্গে নিয়ে যান বলে জানায় হুমাইরা ও হাসিবের পরিবার।

জন্মের পর থেকে ওই দুজনের ভাত না খাওয়ার খবরে এলাকায় অনেকেই অবাক হলেও সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে পরিবার দুটি। চাল সিদ্ধ ভাত না খেলেও চালের গুড়া দিয়ে তৈরি পিঠা, পুলি, পরোটা খেতে পারে তারা। এছাড়া মাছ, মাংস, দুধ, ডিম কলাসহ অন্য খাবারে আপত্তি নেই তাদের। কেবল সিদ্ধ চালের ভাত ছাড়া সব খেতে পারে তারা।

হুমাইয়ার প্রতিবেশী মো. এমদাদুল হক বলেন, সুমাইয়া দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে ভাত খায় না। প্রথমে বিশ্বাস করতে না পারলেও ওর বাড়িতে গিয়ে দেখেছি পরিবারের সবাই ভাত খাচ্ছে আর ও খাচ্ছে ডিম, রুটি, কলা। ভাত না খেলেও এলাকার অন্য বাচ্চাদের মতো সুস্থভাবে চলাফেরা করতে দেখি।

হাসিবের দাদা মো. সুলতান আলী বলেন, ছোটবেলা থেকে অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু হাসিবের মুখে ভাত তুলে দিতে পারিনি। অনেক টাকা-পয়সা খরচ করেও কোনো লাভ হয়নি। জানি না আল্লাহ পাক কখন নাতিটার মুখের দিকে তাকাবেন। নাতিটা ভাত খেতে পারলে খুব খুশি হতাম।

হাসিবের বাবা মো. আনোয়ারুল ইসলাম আকাশ বলেন, আমি গরিব। তারপরও কোথাও কোনো ডাক্তার যদি সঠিক চিকিৎসা দিতে পারতো তাহলে ঋণ করে হলেও ছেলের চিকিৎসা করাতাম। ছেলের চিকিৎসার পেছনে এখন পর্যন্ত ৩/৪ লাখ টাকা খরচ করেও কোনো লাভ হয়নি।

সুমাইয়ার বাবা মো. হাসান আলী বলেন, আমার মেয়ের জন্মের দেড় বছর পর থেকে ওর মুখে ভাত তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে আসছি। কিন্তু কোনোভাবেই তাকে ভাত খাওয়ানো সম্ভব হয় না। অনেক ডাক্তারের কাছে গিয়েছি, কোনো ডাক্তারই ওর আসল সমস্যার কথা বলতে পারেনি। সব চিকিৎসকই বলেছেন, সুমাইয়ার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর-জবরদস্তি করা যাবে না। পরিণত বয়স হলে আশপাশের সামাজিকতা ও মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কে ধারণা পেলে হয়তো কোনো একদিন সে ভাত খেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, খুবই কষ্ট লাগে আমরা পরিবারের সবাই ভাত খাই, মেয়েটা ভাত না খেয়ে থাকে। কেউ যদি আমার মেয়েকে ভাত খাওয়াতে পারতো আমি একটি খাসি জবাই করে খাওয়াতাম।

হাসিবের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, আমি ভাত খাই না। ভাত খেতে ইচ্ছা করে না। কেক-রুটি খাই।

তবে হুমাইরা বললো, আমি সব খাবার কমবেশি খেতে পারি। কিন্তু সিদ্ধ চালের ভাত দেখলেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। ভাতের গন্ধ পেলে বমি চলে আসে। ভাত না খেলেও আমার কোনো সমস্যা হয় না। বাবাকে বলেছি, আমাকে জোর করো না। রুটি, কলা, ডিম, মাছ, মাংস সব তো খেতে পারি।

কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন মো. মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, এ বিষয় পরিবারের লোকজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অথবা শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন। তবে ভাতের পরিপূরক অন্য খাবার খেয়ে শরীরে পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারলে কোনো সমস্যা নেই।