জমায়েত দূরের কথা, বিএনপিকে দাঁড়াতেই দেবে না পুলিশ

খালেদা জিয়ার মামলার রায় ঘোষণার দিন ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় জমায়েত তো দূরের কথা, দাঁড়াতেই দেবে না পুলিশ। বাইরে থেকে বিএনপি যাতে লোকজন আনতে না পারে, সে জন্য ঢাকার প্রবেশপথে পাহারা বসানো হবে। বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে ধরপাকড় অব্যাহত থাকবে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তরে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, অরাজকতা হলে মানুষের জানমাল রক্ষায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নতুন আইজিপি সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে ঢাকা মহানগরে কর্মরত পুলিশের কর্মকর্তারা ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জসহ আশপাশের জেলার পুলিশ সুপাররা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে মোকাবিলার নির্দেশ দিয়েছেন আইজিপি।

গত মঙ্গলবার পুলিশের ওপর হামলা এবং প্রিজন ভ্যান থেকে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনার পর থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ। গত তিন দিনে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ২৫০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবারের ঘটনায় শাহবাগ ও রমনা থানায় করা তিন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

রিমান্ডে আরও ৫৮ জন
ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মিরাশ উদ্দিন গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বিএনপির ৬৭ জন নেতা-কর্মীকে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে ৫৮ জনের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত।

আসামিপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদিন মেজবাহ বলেন, রমনা থানার মামলায় গ্রেপ্তার ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারীসহ ৩০ জনের পাঁচ দিন, একজনের এক দিন এবং শাহবাগ থানার পৃথক দুই মামলায় ২৭ জনের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। অসুস্থ থাকায় দুজন এবং সাতজন নারী নেতা-কর্মীর রিমান্ড আবেদন নাকচ করেছেন আদালত।

এর আগের দিন বুধবার একই ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫৫ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এ নিয়ে মোট ১১৩ জনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেল পুলিশ। প্রথম দিন গ্রেপ্তার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে কারাগারে পাঠানো হয়।

তরিকুলের দুই ছেলে গ্রেপ্তার
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম গতকাল বলেন, বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের বড় ছেলেকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তরিকুলের ছোট ছেলে ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলামকে মঙ্গলবার রাতে শান্তিনগরের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার রাতে হাজতে তাঁকে খাবার পৌঁছে দিতে গেলে তাঁর বড় ভাই সুনিন্দ্য ইসলামকেও আটক করে পুলিশ।

বাসায় বাসায় অভিযান
বিএনপি অভিযোগ করেছে, পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের জন্য বাসায় বাসায় অভিযান চালাচ্ছে।

গতকাল নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বুধবার রাতে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, দলের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ফাওয়াজ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী, যুববিষয়ক সহসম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, মহানগর দক্ষিণের সহসভাপতি মীর আশরাফ আলীর বাসায় পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। একই রাতে কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের বাসায়ও যায় পুলিশ। তিনি অসুস্থ থাকায় পুলিশ ফিরে আসে বলে জানা গেছে। এর আগের রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খানের বাসায় তল্লাশি চালানো হয়।

গতকাল রাজধানীতে বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে এক সেমিনারের পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, বিএনপির কোনো নেতা-কর্মীকে বেছে বেছে আটক করা হচ্ছে না। পুলিশের ওপর আক্রমণে যাদের সম্পৃক্ততা আছে, যারা হামলার পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র করছে, তাদের আটক করা হচ্ছে।

ঢাকার বাইরেও গ্রেপ্তার
বিএনপি অভিযোগ করে, ঢাকার বাইরেও বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। নোয়াখালীর কাবিলপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সেনবাগ উপজেলা যুবদলের সভাপতি মির্জা মোস্তফা ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, মুন্সিগঞ্জ জেলা যুবদলের সহসভাপতি আবদুস সালাম, যুবদল নেতা সেলিম, চাঁদপুর জেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সম্পাদক মো. মানিক মিয়া, কচুয়া উপজেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি বোরহান উদ্দিন, উপজেলা বিএনপির নেতা লিটন, বাঘা উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আরমান মৃধাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০-দলীয় জোটের শরিক ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল শওকত সরদারকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযান চলবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবারে পুলিশের ওপর হামলার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করার নির্দেশনা এসেছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার রায় হওয়ার পরেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারেন, সে জন্য কঠোর তৎপরতা চালাবে পুলিশ। তবে আদালতে যাওয়া-আসার পথে খালেদার গাড়িবহরে কোনো প্রকার বলপ্রয়োগ করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত রয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন উপকমিশনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে মঙ্গলবার পুলিশের ওপর হামলা এবং প্রিজন ভ্যান থেকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ভিডিও ও স্থিরচিত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো দেখে প্রত্যেকটা মুখ আলাদা করে শনাক্ত করা হচ্ছে। এখন এসব নেতাকে ধরতে তাঁদের বাড়ি বাড়ি অভিযান ও তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এটা অব্যাহত থাকবে।-প্রথম আলো’র সৌজন্যে