জাতিসংঘকে মানবিক সহায়তারও অনুমতি দিচ্ছে না মিয়ানমার
রাখাইনে সংঘাত বন্ধে জাতিসংঘের আহ্বানে কর্ণপাত করছে না মিয়ানমার সরকার। এমনকি সেখানে মানবিক ত্রাণ সহায়তার অনুমতি পায়নি বিশ্ব সংস্থাটি। বুধবার সন্ধ্যায় এ কথা জানান জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (উইএনএইচসিআর) এর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মুখপাত্র ভিভিয়ান তান। তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্নভাবে মিয়ানমার সরকারকে সংঘাত বন্ধ ও মানবিক সহায়তা চালু রাখার জন্যে আহ্বান জানিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের প্রতিনিধি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এছাড়া অন্যভাবেও যোগাযোগ করা হয়েছে, কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি।’
ভিভিয়ান তান বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে রাখাইনে সংঘাত চলায় মংডু ও আশপাশের এলাকাগুলোতেও আমাদের প্রবেশাধিকার নেই। মিয়ানমার সরকারকে আমরা মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পুনরায় চালুর অনুরোধ জানিয়েছিলাম, তারা তাতে সাড়া দেয়নি।’
তিনি বলেন, ‘সংঘাত শুরুর পর থেকে নিরাপত্তাজনিত কারণে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন সেখানে কী চলছে আসলে বলা মুশকিল।’
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যা করার তা মিয়ানমার সরকারকেই করতে হবে উল্লেখ করে জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের নিয়ে অনেক কিছু করেছে। ৭০ এর দশক থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, চলমান সংকটে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য কী করা দরকার তা এখনো নির্ধারণ করার সময় আসেনি। কারণ এখনো রোহিঙ্গারা দলে দলে আসছে। আপাতত তাদের খাবার, পানি ও ওষুধ দেওয়া বড় চ্যালেঞ্জ।
ভিভিয়ান তান বলেন, দুটি নিবন্ধিত শিবিরে যেসব রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণের চেষ্টা চলছে, এই সংখ্যা ৩০ হাজারের মত। এর বাইরে কত রোহিঙ্গা কোথায় আছে, তা এখনো জানা যায়নি। এদের অবস্থান ও সংখ্যা জানার পরই তাদের চাহিদা নিরূপণের চেষ্টা করা হবে।
তিনি বলেন, ‘বুধবার পর্যন্ত এক লাখ ৮৬ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা, রোহিঙ্গা নেতা এবং ক্যাম্পে আসা ব্যক্তিদের সংখ্যা একত্রিত করে রোহিঙ্গাদের এই সংখ্যা ধারণা করা হচ্ছে।’
বাংলাদেশে প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের জরুরি ভিত্তিতে নিবন্ধন করতে হবে উল্লেখ করে এই জাতিসংঘ কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘নিবন্ধন করা না হলে এসব রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারের ফেরত পাঠানো কঠিন হবে।’
উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট মধ্যরাতের পর রোহিঙ্গা যোদ্ধারা অন্তত ২৫টি পুলিশ স্টেশন ও একটি সেনাক্যাম্পে প্রবেশের চেষ্টা করলে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়।
এরপর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হেলিকপ্টার গানশিপের ব্যাপক ব্যবহার করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এতে মিয়ানমার সরকারের হিসাবে ৪ শতাধিক রোহিঙ্গা মুসলিম নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে আহত শত শত রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু বাংলাদেশে এসেছেন।
অবশ্য চলতি মাসের শুরুতে রাখাইনে সেনা মোতায়েন করে মিয়ানমার সরকার। ঘোষণা দেয় অভিযানের। এরই মধ্যে গ্রামের পর গ্রাম রোহিঙ্গাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। বর্মি সেনাদের গণহত্যার বদলা নিতেই রোহিঙ্গা স্বাধীনতাকামীরা পুলিশ পোস্টে হামলা ও একটি সেনাঘাঁটিতে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন