জাতিসংঘে শেখ হাসিনা : রোহিঙ্গা সংকট কি আরো জটিল হলো?
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেবার বিষয়ে মিয়ানমারের কোন কার্যকর ভূমিকা না নেয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবার কথা মিয়ানমার মৌখিকভাবে বললেও বাস্তবে তারা কোন কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা আশাহত হয়েছি কারণ, আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী ও টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হয়নি।”
“মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী দেশ। প্রথম থেকেই আমরা তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার একটা শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
রোহিঙ্গাদের উপর ঘটে যাওয়া অত্যাচার এবং অবিচারের বিষয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো, বিশেষ করে জাতিসংঘ, গুরুত্বসহকারে দেখবে বলে আশা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কি যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে?
এ সংকট শুরুর পর থেকে মিয়ানমারের নিন্দায় সরব হয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। শরনার্থিদের সহায়তার জন্য অনেকে নানা ধরণের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসসহ বিভিন্ন দেশ এবং সংস্থার প্রধানরা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনও করেছে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মিয়ানমার যাতে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয় সেজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কতটা চাপ দিতে পারছে সেটি নিয়ে বেশ সন্দিহান বিশ্লেষকরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক রোখসানা কিবরিয়া মনে করেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
“এখানে দেখা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে ভূমিকা সেখানে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠনোর ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।”
রোহিঙ্গারা যাতে দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ভালোভাবে থাকতে পারে সেদিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এমনটাই মনে করেন অধ্যাপক রোখসানা কিবরিয়া।
এখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা নিয়ে ‘জটিলতা আছে’ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেনও বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ ছাড়া রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য মিয়ানমার অগ্রসর হবে না। গত এক বছরে সেটি প্রমাণিত হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
যে কোন দেশে শরনার্থী সংকটের সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সংকট সমাধানের জন্য প্রকৃত কাজ করার চেয়ে বিভিন্ন বক্তব্য বিবৃতির মধ্যেই বেশি সীমাবদ্ধ থাকে বলে উল্লেখ বাংলাদেশের সাবেক এ পররাষ্ট্র সচিব।
রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেনি বলে তিনি মনে করেন। কারণ, প্রয়োজনীয় অর্থের এক-তৃতীয়াংশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে পাওয়া গেছে।
চীনের ভূমিকা
এরই মধ্যে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের উদ্যোগের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে চীন।
এমন প্রেক্ষাপটে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন মনে করেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য চীনের উপর নির্ভর করা বাংলাদেশের উচিত হবে না।
মি: হোসেন বলেন, “চীন বাংলাদেশেরও বন্ধু, মিয়ানমারেরও বন্ধু। চীন সত্যিকার অর্থে অনেস্ট ব্রোকার-এর (সৎ মধ্যস্থতাকারী) ভূমিকা পালন করতে পারতো। কিন্তু তারা সেটা করেনি।”
“চীন খুব সুস্পষ্টভাবে, শক্তভাবে মিয়ানমারের অন্যায় এবং লজ্জাজনক ভূমিকার পক্ষে দাঁড়িয়েছে।”
রোহিঙ্গা সংকট শুরুর প্রায় তিনমাস পর গত বছরের নভেম্বর মাসে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ঢাকা সফরে এসছিলেন। এর এক সপ্তাহের মধ্যেই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবার বিষয়ে মিয়ানমারের সাথে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ।
ধারণা করা হচ্ছিল যে চীনের চাপে পড়েই বাংলাদেশ সে সমঝোতা স্বাক্ষর করে। এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতিসংঘে বলেছেন, মিয়ানমার সে অনুযায়ী কাজ করছে না।
কিন্তু মিয়ানমার প্রশ্নে চীন এখনো তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেনি।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, “চীনকে খুশি রেখে এ সমস্যার সমাধান করবো আমরা, এ ধরণের কল্পনা না করাই ভালো।”
মি: হোসেন বলেন, বাংলাদেশের দিক থেকে চীনকে স্পষ্টভাবে বলা প্রয়োজন যে চীন যে ভূমিকা পালন করছে তাতে আমরা খুশি না।
রোহিঙ্গা সংকট জটিল করার পেছনে চীনের ভূমিকা আছে বলে তিনি মনে করেন। কারণ, চীনের শক্ত সমর্থনের কারণের মিয়ানমার সংকট সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা রাখছে না।
-বিবিসি বাংলা
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন