জাতীয় সংসদে হুইপদের কাজ ও যে সুবিধা পান তারা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু ৩০ জানুয়ারি। এই সংসদে কারা কী দায়িত্ব পালন করবেন সেটা এখন পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে। সবশেষ মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ও হুইপ নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে।

এতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ হিসেবে মাদারীপুর-১ থেকে নির্বাচিত নূর-ই-আলম চৌধুরীকে নিযুক্ত করেছেন রাষ্ট্রপতি।

সংসদ সচিবালয়ের মানবসম্পদ শাখা-১ থেকে জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আব্দুস সালাম স্বাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপন জারি হয়।

আলাদা আরেকটি প্রজ্ঞাপনে আরও পাঁচজনকে হুইপ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

নবনিযুক্ত হুইপরা হলেন- ইকবালুর রহিম এমপি (দিনাজপুর-৩), আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি (জয়পুরহাট-২), মো. নজরুল ইসলাম বাবু এমপি (নারায়ণগঞ্জ-২), সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি (কক্সবাজার-৩) এবং মাশরাফি বিন মর্তুজা এমপি (নড়াইল-২)।

হুইপ আসলে কী

হুইপ হচ্ছে পার্লামেন্ট বা আইনসভার সদস্য। হুইপের কাজ হলো নিজ দলের সদস্যদের পার্লামেন্ট বা আইনসভায় হাজির করা। হুইপ তাগাদা দিয়ে তার দলের সদস্যদের পার্লামেন্টে হাজির করান। সাধারণত কোনো প্রশ্নে ভোটাভুটি করার সময় সরকার ও বিরোধী দল উভয়পক্ষের প্রয়োজন পড়ে স্ব স্ব পক্ষের যথাসম্ভব অধিকসংখ্যক সদস্যকে পার্লামেন্টে হাজির রাখার। এই দায়িত্বটিই হুইপের ওপর ন্যস্ত থাকে।

এমনিতে হুইপ করার মানে হচ্ছে সচেতন করা। সরকারি দল ও বিরোধী দল উভয়েই স্ব স্ব হুইপ নিয়োগ করে। তারা মূলত সংসদ অধিবেশন সুশৃঙ্খলভাবে চলতে স্পিকারকে সহযোগিতা করেন। তাদের মধ্যে যিনি প্রধান তাকে বলা হয় চিফ হুইপ।

হুইপের পদমর্যাদা

রাষ্ট্রীয় মর্যাদাক্রম অনুযায়ী, চিফ হুইপ পূর্ণ মন্ত্রীর পদমর্যাদা ভোগ করেন। আর হুইপরা ভোগ করেন প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা।

১৯৭২ সালের ‘দ্যা বাংলাদেশ (হুইপস) অর্ডার্’ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি এই নিয়োগ দেন। চিফ হুইপ মন্ত্রী মর্যাদার এবং হুইপরা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পান।

মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের সুযোগ-সুবিধা:

একজন মন্ত্রী প্রতিমাসে বেতন বাবদ এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা পাবেন। প্রতিমন্ত্রীর বেতন ৯২ হাজার টাকা। মন্ত্রীরা সরকারি ব্যয়ে সুসজ্জিত বাসভবন পাবেন, সেজন্য তাদের ভাড়া দিতে হবে না। প্রতিমন্ত্রীরাও এ সুবিধা পাবেন।
তবে কোনো মন্ত্রী সরকারি বাড়িতে থাকতে না চাইলে বাসাভাড়া বাবদ মাসে ৮০ হাজার টাকা করে পাবেন ভাতা হিসেবে। প্রতিমন্ত্রী হলে পাবেন ৭০ হাজার টাকা। নিজ বাড়ি বা ভাড়া বাড়িতে থাকলে ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তিন মাসের বাড়ি ভাড়ার সমপরিমাণ টাকা তারা প্রতিবছর পাবেন। বাসভবনে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও টেলিফোনের জন্য যাবতীয় ব্যয় সরকার বহন করবে। সরকারি বাড়ির সাজসজ্জার জন্য একজন মন্ত্রী পাঁচ লাখ টাকা এবং প্রতিমন্ত্রী চার লাখ টাকা পাবেন প্রতি বছর।
মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা সরকারি খরচে গাড়ি পাবেন। সরকারের পরিবহন পুল থেকে এই গাড়ি সরবরাহ করা হবে। প্রতিদিন ১৮ লিটার জ্বালানি তেলের দাম পাবেন গাড়ির জন্য।
সরকারি প্রয়োজনে বা নির্বাচনী এলাকায় ভ্রমণের সময় মন্ত্রণালয়ের অধীন যেকোনো সংস্থা বা দফতর থেকে একটি জিপ পাবেন তারা। দেশের ভেতরে কোথাও ভ্রমণে গেলে দৈনিক ভাতা পাবেন দুই হাজার টাকা করে। বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে বছরে ১০ লাখ টাকা বিমাসুবিধা পাবেন তারা।
মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী অসুস্থ হলে চিকিৎসার পুরো ব্যয়ভার বহন করবে সরকার। সেই খরচের কোনো সীমা আইনে বেঁধে দেওয়া হয়নি। তবে খরচের ভাউচার দিতে হবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে।
দেশি-বিদেশি অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য একজন মন্ত্রী মাসে ১০ হাজার টাকা করে আপ্যায়ন ভাতা পাবেন। আর প্রতিমন্ত্রী পাবেন সাড়ে ৭ হাজার টাকা।

মন্ত্রীরা নিজেদের পছন্দমত উপসচিব পদমর্যাদার একজন একান্ত সচিব (পিএস) নিতে পারেন। এ ছাড়া একজন সহকারী একান্ত সচিব, দুজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, দুজন অফিস সহায়ক, একজন পাচক, একজন জমাদার এবং একজন আরদালি তারা পাবেন। প্রতিমন্ত্রীরা একজন একান্ত সচিব, একজন ব্যক্তিগত সহকারী, একজন অফিস সহায়ক, একজন জমাদার এবং একজন আরদালি পান।

নিজের নির্বাচনী এলাকার মসজিদ, মন্দির উন্নয়নসহ এলাকার মানুষের দাতব্য কাজে একজন মন্ত্রী বছরে ১০ লাখ টাকা পাবেন। আর প্রতিমন্ত্রী পাবেন সাড়ে সাত লাখ টাকা। এ টাকার মধ্যে মন্ত্রী একজন ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা দিতে পারবেন। প্রতিমন্ত্রী দিতে পারবেন ৩৫ হাজার টাকা। এই টাকার কোনো নিরীক্ষা হবে না।