জাতীয় নির্বাচন: বেগম খালেদা জিয়ার ১৩ দফা গাইডলাইন
আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য দেশব্যাপী ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরিসহ বেশ কিছু প্রস্তাব দেবে বিএনপি। এ বিষয়ে দলীয় নেতৃবৃন্দকে ইতিমধ্যেই ১৩ দফা গাইডলাইন দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
চিকিৎসার্থে লন্ডন যাওয়ার দুই দিন আগে ১৩ জুলাই গুলশানে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে সিনিয়র নেতাদের এ গাইডলাইন দিয়ে গেছেন তিনি। বিএনপির নীতিনির্ধারক একাধিক সূত্র এ তথ্য দিয়েছে। চেয়ারপারসনের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী ইসির সংলাপে বিএনপির প্রস্তাবগুলোর মধ্যে নির্বাচনের কমপক্ষে ছয় মাস আগে সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া থাকছে— নির্বাচনের সময় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়কে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য করার তাগিদ। নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার প্রাক্কালে নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় যথা প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, অর্থ, তথ্য, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, পররাষ্ট্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়কে সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য করার কথাও বলবে দলটি। যা সাধারণ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচিত নতুন সরকার দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত এ ব্যবস্থা বলবৎ রাখতে হবে। সূত্রগুলো জানায়, বিএনপির প্রস্তাবে আরও থাকবে— সংসদীয় আসন এলাকার সীমানা পুনর্বিন্যাস। নির্বাচনকালে প্রতিরক্ষা (সেনা) বাহিনী মোতায়েনের ব্যবস্থা। প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল ক্ষমতা প্রদান করে ভোট গ্রহণ দিবসের সাত দিন আগে থেকে নির্বাচনী ফলাফলের গেজেট প্রকাশনা পর্যন্ত সব নির্বাচনী এলাকায় টহলসহ ভোট কেন্দ্রে ও বিশেষ বিশেষ স্থানে সেনা মোতায়েনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ ও নতুন ভোটার নিবন্ধীকরণ। বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীন একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের পরিচালনা। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা প্রণয়ন। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর কার্যকর ও শক্তিশালীকরণ এবং জনপ্রতিনিধিত্বমূলক আইনসহ (আরপিও) অন্যান্য নির্বাচনী বিধিবিধান সময়োপযোগী ও যৌক্তিকীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের তাগিদ দেবে বিএনপি। নির্বাচন কমিশনকে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এবং সকল পর্যায়ের নির্বাচনী কর্মকর্তা অর্থাৎ রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, আপিল কর্তৃপক্ষ, প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তা, রেজিস্ট্রেশন অফিসার, সহকারী রেজিস্ট্রেশন অফিসার, রিভাইজিং অথরিটি, নির্বাচনকার্যে নিয়োজিত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার কথাও বলা হবে সংলাপে। এ ছাড়া নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ ব্যক্তির দ্বারা সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন হবে বিএনপির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ইসির সঙ্গে আলোচনায় বিএনপির পক্ষ থেকে সম্ভাব্য প্রস্তাবের ভিতরে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রতি প্রকাশ্য আনুগত্য পোষণকারী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে অতিসত্বর প্রত্যাহার করে নেওয়াসহ প্রত্যাহারকৃত কর্মকর্তাদের যে কোনো ধরনের নির্বাচনী দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখার কথা বলা হবে। প্রেষণে নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত প্রকাশ্য রাজনৈতিক মতাবলম্বী নির্বাচন কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন থেকে বাদ দেওয়া। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় মাঠপর্যায়ে কর্মরত জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের প্রত্যাহার করে নতুন কর্মকর্তা পদায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। নতুন কর্মকর্তা পদায়নে বিগত পাঁচ বছর বিভিন্ন পদমর্যাদায় ওই জেলায় চাকরিরত ছিলেন এমন কর্মকর্তাদের একই জেলায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার পদে পদায়ন না করা। একইভাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় প্রত্যেক উপজেলা এবং থানায় কর্মরত উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলবে বিএনপি।
তবে ইসির পাশাপাশি সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সংলাপে আগ্রহী বেশির ভাগ দলীয় নীতিনির্ধারক। তারা মনে করেন, ইসির সংলাপের আগে একাদশ জাতীয় নির্বাচন কার অধীনে কীভাবে হবে, তার ফয়সালার জন্য সরকারের উচিত দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করা। অন্যথায় বিদ্যমান নির্বাচনী সংকট নিরসন কিছুতেই সম্ভব নয়। সংলাপের আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে দেশে ফিরে এলে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকে এ বিষয়ে আরেক দফা আলোচনা করে নেবেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ বিষয়ে বলেন, বর্তমান ইসি এখন পর্যন্ত নিজেদের ওপর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা তৈরি করাতে পারেনি। এর পরও দেশ, জাতি ও জনগণের স্বার্থে বিএনপি ইসির এই সংলাপে অংশ নেবে। কারণ বিএনপি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল বলেই সংলাপ তথা আলোচনার মাধ্যমে সমস্য সমাধানে বিশ্বাস করে।
দলের স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মতে, জাতি ও দেশের জনগণের স্বার্থে বিএনপি এই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেবে। তবে এই নির্বাচন কমিশন সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ কমিশন নয়। প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী-এমপিরা সরকারি টাকায় বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে জনসভা করে নৌকায় ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। অথচ বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ দূরের কথা, ঘরোয়াভাবেও আলোচনা করতে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। এসব নিয়ে বর্তমান ইসির কোনো মাথাব্যথা নেই। প্রসঙ্গত, ৩০ জুলাই সুশীলসমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করে ইসি। তারই ধারাবাহিকতায় ১৫ অক্টোবর বিএনপি ও ১৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি।- বাংলাদেশ প্রতিদিন
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন