জাদুঘর হচ্ছে সেই থাই গুহা
জলমগ্ন গুহার গভীরে থেকে থাই কিশোর ফুটবল দলকে বের করে আনতে উদ্ধারকারীদের দুঃসাহসিক অভিযানের স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে থাইল্যান্ড। দেশটির সরকার বলছে, শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের নেপথ্যের নায়কদের কাজের স্বীকৃতি দিতে এ গুহাটিকে জাদুঘর হিসেবে তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, কিশোর ফুটবল দল উইল্ড বোরের সদ্যস্যদের উদ্ধারে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গুহার ভেতরে কাজ করা উদ্ধারকারী, ডুবুরি ও চিকিৎসকদের নায়কোচিত অভিযানকে কেন্দ্র করে সিনেমা তৈরি করতে থাইল্যান্ডে হলিউডের একটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পৌঁছেছে।
কিশোরদের গুহা থেকে নাটকীয় উদ্ধারের ভিডিও ফুটেজ বুধবার প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, গুহায় আটকা ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোরদের স্ট্রেচারে শুইয়ে গুহার প্রবেশমুখ থেকে বাইরে নিয়ে আসছেন থাই নেভি সিলের সদস্যরা।
অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, থাই কিশোররা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে। তাদেরকে হাসপাতালের আলাদা ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে গুহায় থাকার কারণে তাদের শরীরে কোনো ধরনের ইনফেকশন হয় কি-না তা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন চিকিৎসকরা। বুধবার হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলেছেন, কিশোররা সুস্থ্য রয়েছে। তবে ১৭ দিন অন্ধকার গুহায় অনাহারে থাকায় তাদের ওজন দুই কেজি করে কমেছে।
উদ্ধার মিশনের প্রধান ও চিয়াং রাই প্রদেশের গভর্নর ন্যারংস্যাক ওসোত্তানাকর্ন বলেছেন, থ্যাম লুয়াং গুহাকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হবে। নাটকীয় উদ্ধারের সময় উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের ব্যবহৃত কাপড়, অন্যান্য সরঞ্জাম সেখানে প্রদর্শিত হবে।
তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস, এটা থাইল্যান্ডের অপর একটি পর্যটন কেন্দ্র হবে। পর্যটকরা এটি দেখতে আসবেন।
থাই ন্যাশনাল পার্ক রেঞ্জারের কর্মকর্তা পিনিটপং ওংমা বলেছেন, এখনো গুহায় ৫০ জনের মতো কাজ করছেন। আগামী রোববার পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করেছেন তিনি। তিনি বলেন, উদ্ধার মিশন শেষ হওয়ার পর থেকে গুহায় পানি বাড়ছে। এছাড়া সেখানে এখনো অনেক সরঞ্জাম রয়েছে। যে কারণে গুহার ভেতরে কাউকে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না।
গুহা থেকে থাই কিশোরদের উদ্ধারের ঘটনায় দেশটিতে এখনো আনন্দের আমেজ চলছে। উইল্ড বোর ফুটবল দলের ১২ সদস্য ও ২৫ বছর বয়সী কোচ বর্তমানে চিয়াং রাই প্রদেশের প্রধান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
থাইল্যান্ডের ইংরেজি দৈনিক দ্য ন্যাশন বৃহস্পতিবার প্রথম পৃষ্ঠায় বৈশ্বিক সহযোগিতার জয় শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে ব্যাংকক পোস্ট উদ্ধারকারীদের কয়েকটি ছবি একসঙ্গে জুড়ে দিয়ে শিরোনাম করেছে ‘তোমরাই নায়ক।’
থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য বিভাগের পরিদর্শক থংচ্যাই লার্তউইলায়ার্যাত্তানাপং বলেন, ‘মঙ্গলবার উদ্ধার হওয়া সর্বেশেষ গ্রুপটির ফুঁসফুঁসে সংক্রমণ হয়েছে। তাদের র্যাবিজ এবং টিটেনাসের ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে।
গত ২৩ জুন থেকে গুহায় উইল্ড বোর ফুটবল দলের ১২ কিশোর সদস্য ও তাদের কোচ আটকা ছিলেন। ২ জুলাই ৯ দিনের এক অভিযানের পর দুই ব্রিটিশ ডুবুরি গুহার ভেতরে কিশোর ফুটবল দলের সদস্যদের খুঁজে বের করেন। দীর্ঘ প্রায় ৪ কিলোমিটার সংকীর্ণ ও উঁচু-নিচু জলমগ্ন পথ পাড়ি দিয়ে কিশোরদের উদ্ধারে শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান শুরু হয় রোববার।
প্রথম দিকে থাই কর্তৃপক্ষ জানায়, গুহায় বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় ও বর্ষা মৌসুমে বর্ষণের কারণে তাদের এখনই উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। আগামী ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের উদ্ধারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
কিন্তু রোববার নাটকীয়ভাবে বন্যার পানি কিছুটা কমে যাওয়ায় এবং বর্ষণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর উদ্ধার মিশনের প্রধান ও চিয়াং রাই প্রদেশের গভর্নর ন্যারংস্যাক ওসোত্তানাকর্ন জানান, কিশোরদের উদ্ধারে এখনই উপযুক্ত সময়। রোববার প্রথম দফায় চারজন ও সোমবার দ্বিতীয় দফায় চারজনকে উদ্ধার করা হয়। কোচসহ বাকি চারজনকে মঙ্গলবার বের করে আনেন উদ্ধারকারীরা।
চিয়াং রাই প্রদেশের গুহায় আটকা ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে উদ্ধারে ১৩ বিদেশি ডুবুরি ও থাইল্যান্ডের নৌবাহিনীর অভিজাত শাখা থাই নেভি সিলের পাঁচ সদস্য কাজ করেন। এছাড়া গুহার ভেতরে ও প্রবেশ পথে আরো অন্তত ৯০ জন ডুবুরি উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত ছিলেন। তবে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে গত শুক্রবার অক্সিজেনের অভাবে থাই নেভি সিলের সাবেক এক সদস্য গুহার ভেতরে মারা যান।
সূত্র : এএফপি, ব্যাংকক পোস্ট
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন