জাবিতে শিক্ষক রাজনীতির যাতাকলে শিক্ষার্থীরা

জাবিতে উপাচার্য পন্থী ও উপাচার্য বিরোধী শিক্ষকদের রাজনীতি থামছেই না। কদিন পর পর ই এক একটা ইস্যুকে সামনে নিয়ে এসে নিজেদের বিবাদ জানান দিচ্ছেন তারা। তাদের এই বিরোধে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

এই শিক্ষক রাজনীতির কোন্দলে আজ মঙ্গলবার (১০ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের ব্যবহৃত একটি রুম দখল করেছে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ।

খবর নিয়ে জানা যায়, গতকাল (৯ জুলাই) আইন ও বিচার বিভাগের সভাপতি বরারর একটি চিঠিতে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সভাপতি সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ৩৪০ নং কক্ষটি ব্যবহার না করার অনুরোধ করেন। তার পেক্ষিতে তারা আজ (১০ জুলাই) ৩৪০ নং কক্ষের চাবি আইন ও বিচার বিভাগ থেকে নিয়ে নেয় ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার দুপুর ২ টায় সাংবাদিক সম্মেলন ডাকেন আইন ও বিচার বিভাগ। সেখানে আইন ও বিচার বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ জানান,“আইন ও বিচার বিভাগ ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৩০৪ নং কক্ষটি ব্যবহার করে আসছে। তাছাড়া সমাজ বিজ্ঞান অনুষদে আইন ও বিচার বিভাগের আর কোন ক্লাস কক্ষ নেই। বাকি দুইটি কক্ষ বিশ^বিদ্যালয়ের অডিটেরিয়ামে। সমাজ বিজ্ঞান থেকে অডিটেরিয়ামে গিয়ে ক্লাস নেওয়া খুবই কষ্টসাধ্য। এই কারণে আইন ও বিচার বিভাগের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এভাবে একদিনের নোটিশে একটি কক্ষ নিয়ে নেওয়া অমানবিক”।

এই ব্যাপারে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহেদুর রশিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,“ ২০০৪ সালের ১ লা ডিসেম্বর থেকে রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত বরাদ্দপত্র মূলে এই রুমটি আমাদের বিভাগের। ২০১২ সাল থেকে এটি মৌখিক ভাবে আইন ও বিচার বিভাগের সাথে আমরা শেয়ার করে ব্যবহার করি। কিন্তু সম্প্রতি আমাদের বিভাগের কক্ষ সংকট হওয়ায় আমাদের কক্ষটি আমরা বুঝিয়ে দিতে বলি। আইন ও বিচার বিভাগ আমাদের সাথে খুবই সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ করে রুমটি বুঝিয়ে দিয়েছে”।

এদিকে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ,সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ,চারুকলা বিভাগ,পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিভস বিভাগ ও আইন ও বিচার বিভাগ হয়। সব বিভাগের নির্দিষ্ট ভবন থাকলেও আইন ও বিচার বিভাগের এখনো নিজস্ব কোন ভবন নেই।

নিজস্ব ভবনের দাবিতে ২০১৫ সালে আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করতে চাইলে বিভাগ থেকে তাদের কে শোকজ নোটিশ দেয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইন ও বিচার বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন,“আইন ও বিচার অনুষদের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত ডিন বশির আহমেদ স্যারের সাথে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহদেুর রশিদ স্যারের রাজনৈতিক কোন্দলের কারণে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ ৩৪০ নং কক্ষটি দখল করে নেয়”। আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন,রাজনীতির মারপ্যাঁচ আমরা বুঝি না ,আমরা ক্লাস রুম চাই ,ক্লাস করতে চাই। এভাবে ক্লাস রুম বিহীন বেওয়ারিশভাবে একটা বিভাগ ত চলতে পারে না।

প্রসঙ্গত, গত ১৪ মার্চ সন্ধায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. আমির হোসেনকে ডিন পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে অধ্যাপক রাশেদা আখতারকে ভারপ্রাপ্ত ডিন হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। অন্যদিকে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হককে অব্যাহতি দিয়ে আইন অনুষদে অধ্যাপক বশির আহমেদকে ভারপ্রাপ্ত ডিন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এই ডিন নিয়োগে বিশ^বিদ্যালয় এ্যাক্ট ভঙ্গের অভিযোগ এনে নিয়োগ বাতিলের দাবি জানান বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ। আইন ও বিচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. রবিউল ইসলামের পদোন্নতি আটকে রেখে তাঁর ন্যায়সঙ্গত অধিকার থেকে বঞ্চিত করে অধ্যাপক বশির আহমেদকে ডিন পদে নিয়োগ দিয়েছেন বলে দাবি করেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ।

উল্লেখ্য অধ্যাপক বশির আহমেদ ও অধ্যাপক ড.মোঃ শাহেদুর রশিদ উভয়ে পূর্বে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের রাজনীতি করলেও উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে‘ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক সমাজ’ নামে নতুন প্যানেল গঠন করেন অধ্যাপক বশির আহমেদ। এ সংগঠনের ব্যানারে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ৮টি পদে জয়লাভ করে। অধ্যাপক বশির আহমেদ সাধারণ সম্পাদক পদে জয়লাভ করেছেন।

মূলত ডিন নিয়োগে দুই প্যানেলের বিরোধের জেরেই আইন ও বিচার বিভাগের ৩৪০ নং কক্ষটি দখল করেছে এমন অভিযোগ বিভাগের শক্ষার্থীদের। বিভাগের শিক্ষকরা দীর্ঘদিন এভাবে কক্ষ ছাড়া থাকায় ক্ষোভ জানিয়ে বলেন,আমরা শিক্ষক রাজনীতি করি না বলেই আমাদের বিভাগে পর্যাপ্ত কক্ষ বরাদ্দ নেই।