জামায়াত-বিএনপির ভুল বোঝাবুঝির পেছনে সরকার : মওদুদ
রাজশাহী এবং সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি এবং জামায়াতের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ার পেছনে সরকার দায়ী বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ। তবে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির কোনো দ্বন্দ্ব নেই জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, তাদের বন্ধন অটুট থাকবে।
শুক্রবার প্রেসক্লাবে এক আলোচনায় বক্তব্য রাখছিলেন মওদুদ। ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি: গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং জনগণের প্রত্যাশা’ শিরোনামে এই আলোচনার আয়োজন করে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম নামে বিএনপিপন্থী একটি সংগঠন।
১৯৯৯ সালে জোটবদ্ধ হওয়া বিএনপি এবং জামায়াতের মধ্যে সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নিয়ে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। সিলেটে জামায়াত মেয়র পদে প্রার্থী দিয়ে তাকে সমর্থন দিতে বিএনপির প্রতি দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু বিএনপি সদ্য সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে বাদ দিয়ে জামায়াতের এহসানুল মাহবুব জুবায়েরকে সমর্থন দিতে চায়নি। আর জামায়াতও প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেনি। ফলে সেখানে বিএনপি-জামায়াত পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে গেছে।
রাজশাহীতে মেয়র পদে জামায়াতের প্রার্থী না থাকলেও ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ১৪টি এবং ১০টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের মধ্যে দুইটিকে প্রার্থী দিয়েছে দলটি।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সমর্থনের বিনিময়ে এই কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থনের শর্ত ছিল জামায়াতের। কিন্তু কোনো দল শর্ত মানেনি, ফলে সেখানেও বিএনপির পাশে নেই জামায়াত।
এর আগে জুনের শুরুতে বিএনপির তিন নেতা নতুন সম্পর্কের বার্তা নিয়ে ভারত সফরে গেলে সে দেশের সরকারের ঘনিষ্ঠতা জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছাড়ার পরামর্শ দেয় বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। আর বিএনপিতে এ নিয়ে মূল্যায়নও চলছে।
এই সময় জামায়াতের আলাদা নির্বাচন করা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নিয়েই নানা গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। তবে মওদুদ বলেন, ‘জামায়াত-বিএনপির জোট নিয়ে সরকার বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করছে।’
‘জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে সরকার নানা ধরনের কৌশল করছেন। সরকার আমাদের মধ্যে (বিএনপি-জামায়াত) একটা ভুল-বুঝাবুঝি সৃষ্টি করতে চায়।’
‘এখানে বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এবং বিভিন্ন খবর দিয়ে আমাদের মাঝে একটা ভুল-বোঝাবুঝি সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা নিষ্ফল হবে।’
জামায়তের সঙ্গে বিএনপির গাঁটছাড়া পুরনো। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরা নিষিদ্ধ দলটিকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে দেশে এসে ভিসার মেয়াদ শেষেও তাকে দেশে থাকার সুযোগও দেয় জিয়াউর রহমান সরকার।
১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনেও গোপন সমঝোতা ছিল বিএনপি-জামায়াতে। আর খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে উচ্চ আদালত গোলাম আযমকে নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়।
১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে যোগ দেয় জামায়াতও আর এ সময় দুই দলে সম্পর্ক খারাপ হয়। তবে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে দুই দল জোটবদ্ধ হয়ে লড়াই করে জিতে যায় এবং স্বাধীনতাবিরোধী দলটির দুই জন নেতা মন্ত্রীও হয়ে যান।
টানা ১৯ বছরের জোটবদ্ধতার পর স্থানীয় নির্বাচনে নিয়ে দূরত্ব জাতীয় নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেও দাবি করেন মওদুদ।
‘বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর কোনও দ্বন্দ্ব নেই। আমাদের যে জোট (২০ দলীয় জোট), সেই জোট ছিল, সেই জোট আছে এবং জোট থাকবে। জোটের মধ্যে কেউ ভাঙন ধরাতে পারবে না। জোট অঁটুট আছে, থাকবে।’
‘সিলেট স্থানীয় নির্বাচন। এটা এমন কোন নির্বাচন না। জামায়াত তাদের একজন দলীয় প্রার্থী দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, তাদের সঙ্গে একটা সমঝোতায় আসতে। আর জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতি এক জিনিস এবং স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতি আরেক জিনিস।’
‘কারণ, বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করে আমরা জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি করব। যাতে করে বর্তমান সরকারকে অপসারণ করতে পারি।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন