জামিনে মুক্তি পেলেও এখনও আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের জেরে আটক শিক্ষার্থীদের দু-একজন বাদে সবাইকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছে। তবে জামিন পেলেও মামলা ঝুলে থাকায় তাদের ক্রমাগত শঙ্কার ভেতরে থাকতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

মুক্তিপ্রাপ্তদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে একথা জানিয়েছে বলে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়।

শিক্ষার্থীরা আপাতত মুক্তি পেলেও যার আটক নিয়ে দেশে বিদেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ দেখা গেছে সেই আলোকচিত্রী এবং অ্যাকটিভিস্ট শহিদুল আলম এখনো কারাগারে।

ঈদের দিন এবং পরদিন শহিদুল আলমের সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাতের পর পরিবারের সদস্যরা তার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা তাকে কারাগারের বাইরে হাসপাতালে নেয়ার দাবি করেছেন।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আটকদের মধ্যে ৫১ জন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের সবাই ঈদের আগে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

জামিনে মুক্তি পাওয়া দু’জন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, মামলা প্রত্যাহার না হওয়ায় এখনো তাদের মধ্যে ভয় রয়েছে। তাদের কয়েকজনের অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বিষয়গুলো নিয়ে আর কথা বাড়াতেই রাজি নন বলে জানান।

এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নেতাদের যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, ঈদের আগে তাদেরও জামিনে মুক্তি মিলেছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ফোরামের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, তাদের আন্দোলনের আটক ১২ জনের মধ্যে এখনো একজন কারাগারে আছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ১২ জনকে ধরা হয়েছিল। ১১জন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তবে আমাদের এক বোন লুমা এখনো মুক্তি পাননি। তার জামিনের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো প্রত্যাহারের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের গ্রেফতারের ঘটনায় একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মাঝে। এ নিয়ে সরকারও সমালোচনার মুখে পড়েছিল।

দেশে-বিদেশে অব্যাহত সমালোচনার প্রেক্ষাপটে ঈদের আগে ওই আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা যেমন মুক্তি পেয়েছেন, তেমনি একইসঙ্গে মুক্তি পেয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাথে জড়িতরাও।

এসব শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা দেয়া, ভাঙচুর বা নাশকতার অভিযোগে ৫০টির বেশি মামলা আছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এসব মামলা প্রত্যাহারের দাবি তুলছে। তবে এমন দাবি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এই মুহূর্তে কিছু বলতে রাজি হননি।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘এখন মামলাগুলো কিন্তু তদন্তাধীন। এই পর্যায়ে মামলা প্রত্যাহার বা মামলার কোনো পদক্ষেপ সম্পর্কেই সরকারের কারও কিছু বলা উচিত না। কারণ তাতে তদন্তে প্রভাব পড়তে পারে।’

‘দেখুন, যেকোনো মামলা প্রত্যাহারের ক্ষমতা সরকারের আছে। কিন্তু আমি আবারও বলছি করছি- এই মামলাগুলো যেহেতু তদন্তে আছে, সেজন্য এগুলো নিয়ে কোনো কথা বলা ঠিক হবে না’ যোগ করেন তিনি।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতারকৃত অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদও জামিনে ঈদের আগের দিন মুক্তি পেয়েছেন।

তবে যাকে গ্রেফতারের ঘটনা নিয়ে দেশে-বিদেশে সবচেয়ে বেশি আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে, সেই আলোকচিত্রী শহিদুল আলম মুক্তি পাননি। ঈদের দিন এবং পরদিন পরিবারের সদস্যদের কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার কারাগারে শহিদুল আলমের সঙ্গে দেখা করার পর তার স্ত্রী অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ বলেন, ‘শহিদুলের কয়েকটি সমস্যা হচ্ছে, যেগুলো আগে কখনও ছিল না। চেস্ট কনজেশন মানে খুব কাশি হচ্ছে এবং ব্যথা।’

‘আরেকটা হচ্ছে- তার দাঁতের মাড়িগুলোতে ভীষণ ব্যথা হয়েছে। এছাড়া চোখেও সমস্যা হয়েছে। আজ দেখলাম, কারা কর্তৃপক্ষ তাকে কারাগারের হাসপাতালে স্থানান্তর করেছে’ যোগ করেন তিনি।

অধ্যাপক রেহনুমা বলেন, ‘কিন্তু ওর সমস্যা শুনে মনে হয়েছে, ওর উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। এই চিকিৎসা বড় হাসপাতালগুলোতে সম্ভব। সেজন্য আমরা কারাগারের বাইরের হাসপাতালে তাকে নেয়ার জন্য আবেদন করেছি।’

তবে কারা কর্তৃপক্ষের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শহিদুল আলমের স্বাস্থ্য উদ্বেগজনক নয় বলে দাবি করেছেন।