জিয়া ও খালেদা পাকিস্তানের এজেন্ট ছিলেন : শেখ সেলিম
প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধীদলীয় সদস্যদের অধিকাংশই টানা তিনবার সরকার গঠনকারী দল আওামী লীগের গৌরবোজ্জল ইতিহাসের স্মৃতিচারণ করেছেন। আলোচনার এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী খালেদা জিয়া পাকিস্তানের এজেন্ট ছিলেন বলে দাবি করেছেন। আগামীতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা।
আজ রবিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রথমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও পরে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে এই আলোচনা হয়। আলোচনায় আরো অংশ নেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ ও আমির হোসেন আমু, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সরকারি দলের ইমাজ উদ্দিন প্রমাণিক, আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, সালাম মোর্শেদী, একেএম রহমতুল্লাহ, আবিদা আনজুম মিতা, নজরুল ইসলাম বাবু, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও মোরশেদ আলম এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান ও গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ দলের জন্মদিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, পৃথিবীতে অনেক বড় বড় নেতা আসবেন, যাবেন, কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা কোনদিন আসবে না। তাঁর হৃদয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছাড়া আর অন্য কিছু ছিল না। তিনি শুধু এশিয়া নয়, সারাবিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের নেতা ছিলেন।
সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আরো বলেন, দুটি স্বপ্ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। এক দেশের স্বাধীনতা, অন্যটি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাকি কাজ বাস্তবায়ন করছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরে আসেন, তখন আমরা দেখেছিলাম বঙ্গবন্ধুই যেন শেখ হাসিনার বেশে আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন। প্রস্তাবিত বাজেট চমৎকার হলেও কিছু কিছু অসামাঞ্জস্য রয়েছে, তা ঠিক করার আহ্বান জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের জন্মদিনে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা- এক ও অভীন্ন। পাকিস্তানীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলে আমাদের দুঃখ থাকতো না, তাঁকে হত্যা করলো এই দেশেরই কিছু কুলাঙ্গার বেঈমান মোশতাক- জেনারেল জিয়া গংরা। প্রমাণ আছে, জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের এজেন্ট ছিল। জিয়ার বাবা-মা কোনদিন বাংলাদেশে আসেননি, তাদের কবরও পাকিস্তানে। আর খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকি জেনারেল জানজুয়ার আতিথ্য নিয়ে পাকিস্তানের ক্যান্টনমেন্টে আরাম-আয়েশে ছিলেন। সে কারণে জানজুয়া মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়া শোক দিয়েছেন ও পাকিস্তানে গিয়ে তার মাজার পর্যন্ত জিয়ারত করেছে। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবন দিয়ে আওয়ামী লীগকে গড়ে তুলেছেন। তাঁর আদর্শ মেনে তাঁর স্বপ্ন আমাদের পূরণ করতেই হবে। এতে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বে প্রবেশ করবে।
আওয়ামী লীগের দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, জন্ম লগ্ন থেকেই লড়াই করছে আওয়ামী লীগ। দেশ ও জনগণের স্বার্থে ক্ষমতাসীন পাকিস্তানীদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি সংগ্রাম গড়ে তুলেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে কারণে দেশবাসী বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছিলো। সত্তরের নির্বাচনে শুধু ভোট প্রদান নয়, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধেও তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। সে কারণে আমরা স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেয়েছি। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। শেখ হাসিনার সুনাম আজ বিশ্বব্যাপী। তার উন্নয়নের ধারা সারাবিশ্বকে আলোড়িত করেছে। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন সম্ভব। এই উন্নয়ন কাজে সহযোগিতার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, বিএনপি এখনও স্বাধীন বাংলাদেশে বিশ্বাস করে না। এরা ক্ষমতায় থাকতে দেশের উন্নয়নে কিছুই করেনি। একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা এখনও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। যারা বাজেট নিয়ে নিন্দা করেন, তারা একটু গ্রামে গিয়ে দেখুন প্রতিটি ঘরে কীভাবে বিদ্যুতের আলো জ্বলছে, রাস্তা-ঘাট পাকা হয়ে গেছে।
গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর অনুসারী হিসেবে সংসদে শপথের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, তা সঠিক ছিল। এ কারণেই বিএনপির বাকি সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। আমার ওদিকেই (সরকারি দল) থাকার কথা ছিল, কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আমরা এখন এদিকে (বিরোধী দল)। ২০০৮ সালের পর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলাম। আমি কখনো আওয়ামী লীগ ছাড়িনি, আওয়ামী লীগ আমাকে কখনও বহিস্কার করেনি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতেই বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ড. কামাল হোসেনের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছি।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, জাতি হিসেবে আমরা উচ্চাভিলাষী না হতাম তবে স্বাধীন একটি রাষ্ট্র আমরা পেতাম না। তাই উচ্চাভিলাষী হতেই হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত তিন দশকে সারাবিশ্বে উন্নয়ন-অগ্রগতির ক্ষেত্রে রোলমডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত তাঁর রিপোর্টে তারেক রহমানকে দুর্ধর্ষ একজন লোক ছাড়াও বড় দুর্নীতিবাজ হিসেবে উল্লেখ করে গেছেন।
বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ৫ বছর ক্ষমতায় থেকে বিএনপি-জামায়াত জোট এক মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারেনি। টানা ১৬ থেকে ১৭ ঘন্টা জাতিকে অন্ধকারে রেখেছে। ছায়া সরকার হাওয়া ভবন এবং খালেদা জিয়া-তারেক-মামুনরা বল্লাহীনভাবে দুর্নীতি করেছে। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে ৬০ মন্ত্রীসভার এক তৃতীয়াংশ বিপুল অর্থের মাধ্যমে বিক্রি করেছেন তারেক রহমান। আন্তর্জাতিক তদন্তে এসব বেরিয়ে এসেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সালাম মোর্শেদী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটটি শুধু ব্যবসাবান্ধব নয়, জনকল্যাণমূলক, বৈষম্যমূলক উন্নয়নমূলক বাজেট। বিএনপির কয়েকজন সংসদ সদস্য শেষ পর্যন্ত সংসদে যোগ দিয়ে মিথ্যাচারের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান বলেন, ঋণ খেলাপীরা ঋণ নিয়ে আর্থীক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা সরকারকেই নিতে হবে। চীনের মতো ঋণ খেলাপীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
আওয়ামী লীগের একেএম রহমতুল্লাহ বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ১৯৯১ সালে এবং ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে রাজধানীর লেক ও খালগুলো গণহারে ভরাট করে গণহারে বিএনপির লোকদের প্লট দিয়েছে। বিএনপি পল্লী বানিয়েছে। অথচ সংসদে এসে তারা মিথ্যাচার করছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন