জেল হত্যা: ৪৩ বছর পেরিয়ে গেল, রায় কার্যকর হল না
১৯৭৫ সালের আজকের দিনে তৎকালীন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে। তবে, সেই নির্মম হত্যার ৪৩ বছর পেরিয়ে গেলেও, এখনো রায় কার্যকর করা যায়নি অনেক খুনির। চার নেতার পরিবারের সদস্যদের চাওয়া, দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর হোক।
অন্তরালের ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচনের দাবি তাদের। বিশ্লেষকরা বলছেন, খুনিদের ফিরিয়ে আনতে সরকারকেই আরো উদ্যোগী হতে হবে।
তখন মধ্যরাত। পূর্ব পরিকল্পনায় অতর্কিত হামলা। কারাগারের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা চার সূর্য সন্তানকে প্রথমে গুলি তারপর বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে হায়নার দল।
পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ঘাতকদের প্রধান শক্রতে পরিণত হন চার নেতা। আর তাই তাদের হত্যা করে নিশ্চিত থাকতে চাইলেন ষড়যন্ত্রকারীরা। এই হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় ফিরিয়ে নেয়াই ছিল ঘাতকদের পরিকল্পনা।
ইতিহাসবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘৭৫’র ১৫ই আগস্ট যে হত্যাকাণ্ডটি হয়েছিল যার মধ্য দিয়ে জাতীর জনককে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল সেই হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় জেলহত্যা।’
নির্মম জেল হত্যাকাণ্ডের ৪৩ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচারের রায় পূর্ণাঙ্গ কার্যকর করা যায়নি আজও। এর সাথে জড়িত তিনজনের ফাঁসি ও বারো জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হলেও, দশজন আসামী এখনো বিভিন্ন দেশে পালিয়ে রয়েছেন।
এছাড়াও, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে চার নেতার খুনি মেজর খায়রুজ্জামানকে দুই হাজার চার সালে ট্রায়াল কোর্টে জেলহত্যা মামলা থেকে খালাস দেয়া হয়। এভাবে, ন্যায় বিচারের অপেক্ষার প্রহর কেবলই দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
চার নেতার পরিবারের সদস্যদের চাওয়া খুব সামন্যই, কলঙ্কজনক এই অধ্যায়ের আড়ালের ষড়যন্ত্রকারীদের কথা জানুক নতুন প্রজন্ম।
ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আসামিরা যে রাষ্ট্রগুলোতে আছে, আশা করবো তারা তাদের ফেরত দেবে। কারণ, এরা হচ্ছে দণ্ডিত। এরা হচ্ছে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। এদের রক্ষা করা কোনভাবেই মানবতা না।’
সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব দেশের সঙ্গে আমাদের এক্সট্রাডিশন ট্রিটি নাই তাদের সঙ্গে এই চুক্তি করে হলেও ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসা উচিৎ।’
জেল হত্যা দিবসের আগের দিন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক হত্যাকারীদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের কথা বলেছেন। এর আগেও নানা সময় ফিরিয়ে আনার কথা সরকারের মন্ত্রীরা বললেও, কার্যত তা বিলম্বিত হচ্ছে। এ অবস্থায় বিশ্লেষকরা বলছেন, এ বিষয়ে আইন, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আরো উদ্যোগী হতে হবে।
জেল হত্যার সাথে জড়িতদের ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর উপরও জোর দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন