‘জ্বীনের বাদশা’ স্বপ্ন দেখিয়ে জলিলের সব নিয়ে গেল
গভীর রাতে ফোনে রিং। ‘বাবা আমি আজমির শরিফ থেকে বলছি। তুই ভাগ্যবান। কয়েকদিনের মধ্যে তুই কোটিপতি হয়ে যাবি। তাই তোকে বাবার দরবারে কিছু জায়নামাজ কিনে দিতে হবে।’ পরদিন আবার ফোন, ‘দরবারের কিছু ল্যাংড়া ছেলেদের খাওয়াতে হবে।’
এভাবেই জ্বীনের বাদশা সেজে প্রতারক চক্র বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি আর ধর্মীয় অনুভূতির দোহায় দিয়ে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখানো হয় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দোস্ত গ্রামের আমতলা পাড়ার খলিলের ছেলে ভ্যানচালক আব্দুল জলিলকে। সেই স্বপ্নে বিভোর হয়ে প্রতারণার ফাঁদে পা দেন জলিল।
বিভিন্ন সময় বিকাশের মাধ্যমে প্রতারক চক্রের হাতে তুলে দেন দেড়লাখ টাকা। বিনিময়ে প্রতারক চক্র জলিলকে বগুড়ায় নিয়ে গিয়ে লাল কাপড়ে মোড়ানো একটি পিতলের মূর্তি ধরিয়ে দেয় হাতে। কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন ভাঙলে দিশেহারা হয়ে পড়েন হতদরিদ্র ভ্যানচালক জলিল।
ভুক্তভোগী ভ্যানচালক আব্দুল জলিল জানান, জ্বীনের বাদশা প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়েছেন তিনি। তাকে বিভিন্ন সময় দরবারে জায়নামাজ, ল্যাংড়া ছেলেদের খাওয়ানো, দরবার শরিফ নির্মাণ করে দিলে কোটিপতি হয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখায় প্রতারক চক্র।
কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে ধারকর্য এবং স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে দিনাথপুর করিমের বিকাশের দোকান ও দর্শনা বাসস্ট্যান্ড মর্ডান স্টোরের জাফরের বিকাশের দোকান থেকে কয়েক দফায় ‘জ্বীনের বাদশা’ মরজেমের বিকাশ নম্বর ০১৭৮৬৯০৩৯৩৬-এ ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা পাঠান।
বিনিময়ে গত শনিবার রাত ১০টার দিকে বগুড়ার কোনো এক জায়গায় নিয়ে গিয়ে প্রতারকচক্র তার হাতে লালকাপড়ে মোড়ানো একটি পিতলের মূর্তি তুলে দেয়। বিষয়টি ৭ দিনের মধ্যে কাউকে না জানানোর জন্যও বলে দেয়। আর এই ৭ দিনের মধ্যে ঘরের মধ্যে ৭ হাঁড়া মূল্যবান মোহর পাবেন বলে জানায়। যার একটি মোহরের মূল্য হবে ২৫ লাখ টাকা।
তিনি আরও জানান, ঘরের মধ্যে মোহরের হাঁড়া না পাওয়ায় টেনশনে পড়ে যান তিনি। এরই মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার সকালে আবারও সেই ‘জ্বীনের বাদশার’ ০১৮৭৭০০১২৫৭ নম্বর থেকে ফোন দিয়ে তাকে ওই বিকাশ নম্বরে ৫০ হাজার টাকা পাঠানোর কথা বলে। না দিলে ঘরে সাপ উঠবে এবং চরম অমঙ্গল হবে বলে ভয় দেখায়।
গত ১৫ দিন ধরে গভীর রাতে ‘জ্বীনের বাদশা’ মরজেম তার সাথে এই প্রতারণার করে টাকাগুলো হাতিয়ে নেয়। যখন স্বপ্ন ভাঙে ততক্ষণে তার সব শেষ। টাকা খুইয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভ্যানচালক জলিল ও তার পরিবার। এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মঙ্গলবার রাতে জলিল দর্শনা থানায় একটি অভিযোগ করেছেন বলে জানান।
এ বিষয়ে দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাব্বুর রহমান জানান, ভুক্তভোগী ভ্যানচালক জলিল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন