টাঙ্গাইল শাড়ি”-র জিআই নিবন্ধন বিতর্ক: বাংলাদেশের করণীয় বিষয়ে মতবিনিময় সভা
“টাঙ্গাইল শাড়ি”-কে জিআই পণ্য হিসেবে জার্নালে প্রকাশনা পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে অংশীজনের সমন্বয়ে এক মতবিনিময় সভা রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারী) সকালে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা এতে সভাপতিত্ব করেন। সভায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সরাসরি/ অনলাইনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অংশগ্রহণ করেন।
সভায় সিনিয়র সচিব জিআই পণ্য হিসেবে “টাঙ্গাইল শাড়ি”-কে ভারতে নিবন্ধন এবং বাংলাদেশের করণীয় বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করেন। তিনি জিআই ট্যাগ ব্যবহার করে নিবন্ধিত পণ্যসমূহ রপ্তানীর লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি আরও বলেন জিআই ট্যাগ ব্যবহার করে পন্য রপ্তানী করলে উদ্যোক্তাগণ পণ্যের অধিকতর মূল্য পাবেন এবং বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।
সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা এ বিষয়ে সকলের সক্রিয় হওয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন এবং অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এবিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে একটি লিগ্যাল এক্সপার্ট প্যানেল গঠনের বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে জানান। সভায় এবিষয়ে পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস (ডিপিডিটি)-র পক্ষ থেকে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয়। উক্ত উপস্থাপনায় বাংলাদেশ ও ভারতের জি আই সংশ্লিষ্ট আইন, উভয় দেশের টাঙ্গাইল শাড়ির জার্নাল, TRIPS Agreement এর সংশ্লিষ্ট ধারা এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। আলোচনা পর্বে টাঙ্গাইল শাড়ির আবেদনকারী হিসেবে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক, এই শাড়ি উৎপাদনের ইতিহাস, উৎপাদন ও বিপণন অঞ্চল নিয়ে সভাকে অবহিত করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সিপিডি’র সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান জি আই এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালনের অনুরোধ জানান। এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশ যেহেতু Lisbon Agreement এর সদস্যভূক্ত দেশ নয়, সেহেতু WIPO Arbitration mediation Center এর মাধ্যমে এ বিরোধ নিষ্পত্তি সম্ভব নয় বলে তিনি জানান। এসএসজিপি প্রকল্পের সম্মানিত উপদেষ্টা শরিফা খান আমাদের আপত্তির বিষয়টি ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে জানানো এবং ভারতীয় হাইকোর্ট বরাবর আপিল করার কথা বলেন। তিনি বিকল্প সকল উপায়ে একইসাথে উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের উপর জোর দেন।
ট্রেড এক্সপার্ট ড. মোস্তফা আবিদ খান তিনটি পদ্ধতিতে বিষয়টি নিষ্পত্তির উপর আলোকপাত করেন। প্রথমত কূটনৈতিকভাবে ভারতের সাথে বিষয়টি সমাধান করা। দ্বিতীয়ত, আপিলের জন্য WTO তে আবেদন করা এবং তৃতীয়ত টাঙ্গাইল শাড়ি নিবন্ধনের জন্য বাংলাদেশ হতে ভারতে আবেদন করা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আলম মোস্তফা WTO Dispute settlement Body তে আবেদন করার কথা বলেন। একই মন্ত্রণালয়ের WTO Wing এর প্রতিনিধি মাসুকুর রহমান শিকদার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভারতের আদালতে আপিল করার কথা বলেন। এছাড়া জেনেভায় অবস্থিত বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আলোকপাত করেন।
সভায় বক্তারা ভারতীয় পরীক্ষা প্রতিবেদনের উপর আলোকপাত করেন এবং প্রতিবেদনে জিওগ্রাফিক্যাল লোকেশন-কে উপেক্ষা করা হয়েছে বলে মতামত ব্যক্ত করেন। এছাড়া তাঁতীদের স্থানান্তরের বিষয়টি ভারতীয় জার্নালে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান। উক্ত জার্নালে শাড়িটি হাইব্রিড শাড়ি বলে স্বীকার করা হয়েছে তাই উক্ত শাড়িটি একটি নতুন শাড়ি যা টাঙ্গাইল শাড়ি নামকরণ করা অযৌক্তিক বলে মত প্রকাশ করেন। বক্তারা টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ইতোপূর্বে অনুরূপ কেস স্টাডি (যেমন-বাসমতি চাল) করত অগ্রসর হওয়ার কথা বলেন। এছাড়া ডিপিডিটির জি আই সেলকে শক্তিশালী করণের কথাও আলোচনা করা হয়। সভায় টাঙ্গাইল শাড়ির বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের সহযোগিতার আহবান জানানো হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন