ট্রাফিক সপ্তাহে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরলো কতটা?

বাংলাদেশের পুলিশ বলছে, চলমান ট্রাফিক সপ্তাহের আজ ছিল শেষ দিন। কিন্তু জনস্বার্থে ট্রাফিক সপ্তাহের মেয়াদ তিনদিন বাড়ানো হয়েছে।

কিন্তু গত এক সপ্তাহে ঢাকার সড়কে কি কোন পরিবর্তন হয়েছে?

ঢাকার বিমান বন্দর সড়কে, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের বাসস্টপে অপেক্ষমাণ কয়েকজনের কাছে জানতে চেয়েছিলাম সড়কে কী ধরণের পরিবর্তন দেখছেন তারা?

“কোন পরিবর্তন নাই, সেই একই ট্রাফিক জ্যাম, কোন রুলস নাই। যে যেভাবে পারছে চলছে, নিত্যকার সেই অবস্থাই দেখছি।”

“রাস্তায় বাস অনেক কমে গেছে, গাড়ির এবং ড্রাইভারের লাইসেন্স চেক হওয়ার কারণে বাস নাই। যেকারণে বিপদে পড়েছি আমরা, আজকে ভার্সিটি আসছি বাস পাইনি, ভেঙে ভেঙে আসতে হয়েছে।”

“আমি উত্তরা থেকে আসি বিকাশ পরিবহনে। আজকেও দুই বাস প্রতিযোগিতা করতেছিল। তাইলে আর পরিবর্তন কি হলো?”

প্রশ্ন ছিলো প্রতিযোগিতা যখন হলো, তখন ট্রাফিক পুলিশ কি করলো?

“ট্রাফিক পুলিশ ছিল রাস্তায়, দেখেছেও, কিন্তু কিছু বলেনি।”

এই বিমানবন্দর সড়কেই গত ২৯শে জুলাই দুই বাসের প্রতিযোগিতায় নিহত হয়েছিলেন দুই কলেজ শিক্ষার্থী।

সেদিন বিকাল থেকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এরপর পুরো ঢাকা জুড়েই শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন গণপরিবহন এবং চালকদের বৈধ লাইসেন্স পরীক্ষা করতে শুরু করে।

যেসব পরিবহনের ফিটনেস নেই এবং বৈধ লাইসেন্স নেই এমন চালকদের দিয়ে পরিবহন চালনা বন্ধ করতে হবে—এই দাবিতে প্রায় এক সপ্তাহ তারা রাস্তায় ছিল।

ঐ আন্দোলন চলার মধ্যেই পুলিশ ট্রাফিক সপ্তাহ পালন শুরু করেছিল।

কাকলী মোড়ে কয়েকজন যাত্রী বলছিলেন, গণপরিবহনের মালিক ও চালকরাই কেবল আইন মানে না এমন নয়। সাধারণ মানুষেরা আইন মানতে চান না।

তাদের কথার সত্যতা পাওয়া গেল, দেখা গেল কাছেই ফুটওভার ব্রিজ থাকা সত্ত্বেও অনেককেই দেখা গেল হেটে রাস্তা পার হচ্ছেন।

সেখানেই কেউ কেউ বলছিলেন, ছাত্রদের আন্দোলন ও ট্রাফিক সপ্তাহের কারণে কিছু পরিবর্তন তারা লক্ষ্য করেছেন–

“কিছু মানুষের সচেতনতা বেড়েছে সত্যি, কিন্তু অনেকেই আছে যারা সচেতন করলে বিরক্ত হয়। অনেকেই ফুটপাত দিয়ে হাঁটেন না, ওভারব্রিজে ওঠেন না।”

“আজকে রাস্তায় জ্যাম একটু কম দেখছি, সেটা ছুটির দিনের জন্যও হতে পারে, কিন্তু নিয়ম মানছেন অনেকেই।”

“আমরা জানি যে ওভারব্রিজ দিয়ে পার হতে হবে, কিন্তু আমি গাজীপুর থেকে আসি, সেখানে স্টেশন রোড বা অন্যান্য ব্যস্ত সড়কগুলোতে আজকেও দেখেছি লোকে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটছে।”

তবে, বাংলাদেশের পুলিশ দাবি করছে, ট্রাফিক সপ্তাহে আইন প্রয়োগ ও শৃঙ্খলা ফেরানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে।

এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ট্রাফিক সপ্তাহ চলাকালে গত ছয়দিনে প্রায় সাড়ে ৫২ হাজার যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা এবং প্রায় সাড়ে ১১ হাজার চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

“১১ হাজার ৪০৫জন চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ফিটনেস নেই ও কাগজপত্র না থাকার কারণে পাঁচ হাজার ৫৭২টি গাড়িকে ডাম্পিং করা হয়েছে রেকারিং করার মধ্য দিয়ে। এই সময়ে আমাদের তিন কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।”

“এর মধ্যে দিয়ে আমরা একটি বার্তাই সবাইকে দিতে চাই, সেটা হলো আইন অমান্য করলে কেউ ছাড় পাবে না।”

মিঃ মিয়া স্বীকার করেন, বাংলাদেশে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর যেসব ব্যবস্থা আছে তা অপ্রতুল।

সেই সঙ্গে বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ ট্রাফিক আইন মানে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন ঈদের পরে ট্রাফিক পুলিশ অভিযান আরও জোরালো করা হবে।

তবে, মিঃ মিয়া পরিবহন মালিক, শ্রমিক এবং সাধারণ মানুষকে ট্রাফিক আইন সেনে চলার আহ্বান জানান।

-বিবিসি বাংলা