ট্রেনে ঈদযাত্রায় বন্যার প্রভাব
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায় দেখা দিয়েছে বন্যা। এই অবস্থায় আজ থেকে শুরু হয়েছে ঈদুল আজহা উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট। তবে বন্যার কারণে বেশ কয়েকটি ট্রেন নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারছে না। এতে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা কিছুটা ভোগান্তিতে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রেলওয়ের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘দেশের চলমান বন্যার কারণে ঢাকা থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনটি মেলানদহ পর্যন্ত যাবে। ঢাকা থেকে তারাকান্দির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনটি যাবে জামালপুর পর্যন্ত এবং দিনাজপুরগামী ট্রেনটি যাবে পার্বতীপুর পর্যন্ত।
সিতাংশু বলেন, ‘বন্যার কারণে ট্রেন লাইনগুলোতে পানি উঠে পড়ায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলো নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারছে না। তবে পানি কমলে সব ট্রেনই নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাবে।’
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ২৩টি কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। আজ বিক্রি হচ্ছে ২৭ আগস্টের টিকিট। প্রথম দিনের টিকিট নিতে কমলাপুরে টিকিটপ্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেলেও দুই ঘণ্টার মধ্যেই সেই লাইন কমে স্বাভাবিক হয়ে যায়। কাঙ্ক্ষিত টিকিট পেতে অনেকে ভোর থেকেই লাইনে এসে দাঁড়ায়। তবে এই দিনের টিকিটের জন্য যারা এসেছেন সবাই কাঙ্ক্ষিত টিকিটটি পেয়েছেন।
২৭ তারিখ রংপুর এক্সপ্রেস এবং রাজশাহীগামী সিল্কসিটি ট্রেনটির সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় এদিন এই ট্রেন দুটির ঈদের অগ্রিম টিকিট দেয়া হচ্ছে না। তবে ঈদের পাঁচদিন আগে-পরে অবশ্য সব ট্রেনের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হবে।
এ কারণে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটের জন্য অনেকে অপেক্ষা করে টিকিট পাননি। তাদের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী ইব্রাহিম মিয়া। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘২৭ তারিখের ঈদের অগ্রিম টিকিট নেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম, এতক্ষণে আমাকে বলছে ওই দিনের রংপুর এক্সপ্রেসের টিকিট বিক্রি হবে না। কী আর করা, এখন লালমনির এক্সপ্রেসের টিকিট নিলাম।’
রাজশাহীগামী পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনের ২৭ তারিখের টিকিটের জন্য লাইনে অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ঈদে বাড়ি যেতে আগে অনেক ভোগান্তি, তারপরও পরিবারের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ি যেতে হয়। এজন্য আগেভাগেই টিকিট নিতে এলাম। এখানে যে ধীরগতি তাতে কখন টিকিট পাবো বুঝতে পারছি না।’
সকালে কমলাপুর স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, মোট ২৩টি কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে দুটি নারীদের জন্য সংরক্ষিত। প্রতিটি কাউন্টারের সামনে থেকে টিকিটপ্রত্যাশীদের লাইন স্টেশনের সিঁড়ি পার হয়ে বাইরে চলে আসে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে সেই লাইন আর থাকেনি।
ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি প্রসঙ্গে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী ঢাকাটাইমসকে বলেন, আজ বিক্রি হচ্ছে ২৭ আগস্টের টিকিট। টিকিটপ্রত্যাশীরা সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনতে পারছেন। আজ যারা লাইনে আছেন, আশা করছি সবাই টিকিট পাবেন।
সিতাংশু বলেন, কমলাপুর থেকে প্রতিদিন ৩১টি ট্রেনের ২২ হাজার ৪৯৬টি টিকিট বিক্রি করা হবে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ অনলাইনে, ৫ শতাংশ ভিআইপি, ৫ শতাংশ রেলওয়ে কর্মকর্মতা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ এবং বাকি ৬৫ শতাংশ টিকিট কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হবে।
ঈদের অগ্রিম টিকিট
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের জন্য ২৭ থেকে ৩১ আগস্টের টিকিট প্রচলিত নিয়মানুসারে ১০ দিন আগে, আজ থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত বিক্রি করা হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে একযোগে এ টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। আজ বিক্রি হচ্ছে ২৭ আগস্টের টিকিট। এছাড়া ১৯, ২০, ২১ ও ২২ আগস্ট বিক্রি করা হবে যথাক্রমে ২৮, ২৯, ৩০ ও ৩১ আগস্টের টিকিট।
ঈদযাত্রার ফিরতি টিকিট
ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের জন্য অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে আগামী ২৫ আগস্ট থেকে। ঈদফেরত যাত্রীদের জন্য রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিরহাট স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ওইদিন সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি হবে।
২৫ আগস্ট পাওয়া যাবে ৩ সেপ্টেম্বরের টিকিট। এরপর ক্রমান্বয়ে ২৬, ২৭, ২৮ ও ২৯ আগস্ট পাওয়া যাবে যথাক্রমে ৪, ৫, ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বরের ফিরতি টিকিট। তবে ১ থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৈত্রী এক্সপ্রেস চলাচল করবে না।
ঈদযাত্রায় সাত জোড়া বিশেষ ট্রেন
ঈদকে সামনে রেখে এবার যাত্রীদের সুবিধার্থে ও নির্বিঘ্নে চলাচলে সাত জোড়া বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হবে। বিশেষ ট্রেনগুলো ঈদের আগের চার দিন ও ঈদের পরে সাত দিন চলাচল করবে। দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল ট্রেনটি ঢাকা–দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা চলাচল করবে ২৯ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর এবং ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত; চাঁদপুর স্পেশাল ১ ট্রেনটি চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম ২৯ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর এবং ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত; চাঁদপুর স্পেশাল ২ ট্রেনটি চট্টগ্রাম -চাঁদপুর-চট্টগ্রাম ২৯ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর এবং ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত; রাজশাহী স্পেশাল ট্রেনটি রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী ২৯ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর এবং ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত; পার্বতীপুর স্পেশাল ট্রেনটি পার্বতীপুর-ঢাকা-পার্বতীপুর ২৯ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর এবং ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত; শোলাকিয়া স্পেশাল ১ ট্রেনটি ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৌরববাজার ঈদের দিন চলাচল করবে এবং শোলাকিয়া স্পেশাল ২ ট্রেনটি ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিং ঈদের দিন চলাচল করবে।
এবারের ঈদযাত্রায় যাত্রীদের সুবিধার্থে বিশেষ কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর মধ্যে রয়েছে-
টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ: ঢাকা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, বিমানবন্দর, জয়দেবপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, খুলনাসহ সব বড় স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি, বিজিবি, স্থানীয় পুলিশ এবং র্যাবের সহযোগিতায় টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে। তাছাড়া জেলা প্রশাসকদের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
নাশকতা প্রতিরোধ: চলন্ত ট্রেনে, স্টেশনে বা রেললাইনে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধকল্পে আরএনবি, জিআরপি ও রেলওয়ে কর্মচারীদের কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। এছাড়া র্যাব, বিজিবি, স্থানীয় পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতায় নাশকতাকারীদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।
কোচ সংযোজন: পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ থেকে ৭২টি এমজি ও সৈয়দপুর ওয়ার্কশপ থেকে ৬৬টি (২৫টি এমজি ও ৪১টি বিজি) সহ মোট ১৩৮টি কোচ শপ আউট-টার্ন হবে। ১৩৮টি শপ আউট-টার্নসহ মোট ১২৯৬টি কোচ চলাচল করবে। গত বছর ১৭০টি শপ আউট-টার্নসহ মোট ১২২২টি কোচ চলাচল করছে। এ বছর ৭৪টি কোচ বেশি চলাচল করবে।
লোকোমেটিভ সরবরাহ: বিদ্যমান লোকোমেটিভ সরবরাহ পূর্বাঞ্চলে ১১৬টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ১১১টি (বিজি ৮৬টি ও এমজি ২৫টি) সহ মোট ২২৭টি। অর্থাৎ, ঈদে পূর্বাঞ্চলে ১১৬টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ১১টি সহ মোট ২২৯টি লোকোমেটিভ ব্যবহার করা হবে। গত বছর ২২৭টি চলাচল করেছে।
এদিকে, যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে ঈদের তিন দিন আগে থেকে কন্টেইনার ও জ্বালানি তেলবাহী ট্রেন ছাড়া কোনো পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করবে না। তবে ঈদের দিন বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কিছু মেইল এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে।
টিকিটধারী যাত্রীদের ভ্রমণের সুবিধার্থে জয়দেবপুর ও বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ঢাকাগামী আন্তঃজোনাল আন্তঃনগর ট্রেনে কোনো আসনবিহীন যাত্রী চলাচল করতে পারবেন না।
অন্যদিকে, সুষ্ঠুভাবে ও নিরাপদে ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে ট্রেন পরিচালনায় সম্পৃক্ত রেলওয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ২৮ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সবধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া আগামী ১ থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৈত্রী এক্সপ্রেস চলাচল করবে না।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন