ডোপ টেস্টে চাকরিচ্যুত ১১৬ মাদকাসক্ত পুলিশ
ডিএমপির কনস্টেবল থেকে উপপরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার ১২৬ জন মাদকাসক্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। চাকরিচ্যুত হয়েছেন ১১৬ জন। এ ছাড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আগে একজন মারা গেছেন এবং আরেকজন অবসরে চলে গেছেন। বাকি আটজন শাস্তি দেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পুলিশকে মাদকমুক্ত ও সুশৃঙ্খল রাখতে এ পরীক্ষা চালু রাখা জরুরি।
পুলিশ সদস্যদের মাদকমুক্ত করতে তিন বছর আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) ডোপ টেস্ট বা মাদক পরীক্ষা শুরু হয়। ডিএমপির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ডোপ টেস্টে বেশি পজিটিভ হয়েছেন পুলিশ কনস্টেবলরা। ডোপ টেস্টে মাদকাসক্ত হিসেবে শনাক্ত হওয়া ১২৬ পুলিশ সদস্যের মধ্যে ৯৮ জনই কনস্টেবল।
বাকিদের মধ্যে একজন পুলিশ পরিদর্শক, ১১ জন উপপরিদর্শক (এসআই), একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট, সাতজন সহকারী উপরিদর্শক (এএসআই) এবং আটজন নায়েক।
ডিএমপি সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ১০ মার্চ তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম পুলিশকে মাদকমুক্ত করতে ডিএমপিতে ডোপ টেস্ট (মাদকাসক্ত চিহ্নিতের পরীক্ষা) চালু করেন। ২০২০ সালের ১০ মার্চ থেকে ২০২২ সালের ২৭ জুলাই পর্যন্ত ডোপ টেস্টে ১২০ জন পুলিশ সদস্যকে মাদকাসক্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়।
এর মধ্যে ২০২১ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত এই ১৬ মাসে মাত্র ২০ জন পুলিশ সদস্য শনাক্ত হন। ওই বছরের আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ডোপ টেস্টে কেউ মাদকাসক্ত হিসেবে শনাক্ত হননি। ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ছয়জন পুলিশ সদস্য মাদকাসক্ত হিসেবে শনাক্ত হন।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২০ সালের ১০ মার্চ থেকে ডিএমপিতে শুরু হওয়া এই ডোপ টেস্ট ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত জোরেশোরে চলে। ওই বছরের আগস্ট থেকে ডোপ টেস্টে শনাক্তের সংখ্যা কমে গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক জানান, পুলিশের ডোপ টেস্ট বন্ধ হয়নি। এখন সন্দেহভাজন পুলিশ সদস্যকে এই ডোপ টেস্ট করা হয়। অনেকের চাকরি চলে যাওয়ায় পুলিশে মাদকাসক্তের সংখ্যা কমে গেছে। এই ডোপ টেস্ট অব্যাহত থাকবে।
যেভাবে ডোপ টেস্ট শুরু
ডিএমপি সূত্র বলছে, ২০২০ সালের শুরুতে ডিএমপিতে সাতজনের ডোপ টেস্ট করলে বেশির ভাগের ফল পজিটিভ আসে। পরে বিভিন্ন ইউনিটের আরও ১৮ জনের পরীক্ষা করলে একজনের পজিটিভ আসে। এতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সতর্ক হন। মাদকবিরোধী শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর বিভিন্ন সূত্র থেকেও মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যদের ব্যাপারে তথ্য আসতে থাকে।
এরপর রাজধানীর তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড ও রেললাইন এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে মাদক চক্রের ২১ কারবারিকে গ্রেপ্তার করে সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশ। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে সংশ্লিষ্ট থানার কিছু পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক কারবারের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। কারবারিদের সহযোগিতাকারী হিসেবে প্রথমে শিল্পাঞ্চল থানার এক সহকারী উপপরিদর্শকের (এএসআই) নাম আসে। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাসিক অপরাধ সভায় উপস্থিত ডিএমপির ৫০ থানার ওসিদের এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়।
ডোপ টেস্টের উদ্যোক্তা সাবেক ডিএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ডিএমপি কমিশনার থাকাকালে নিয়োগ পাওয়া তিন হাজার পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণের সময় ডোপ টেস্ট করিয়েছিলেন। সন্দেহভাজন মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যের তালিকা ধরে তিনি মাদক পরীক্ষা করেন।
ডোপ টেস্টে শনাক্ত হওয়া পুলিশ সদস্যদের চাকরিচ্যুতির নোটিশ পাঠানোর পর এ খবর ছড়িয়ে পড়ে। এতে অনেকেই ভয়ে মাদকসেবন ও মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেন। শেষমেশ তিনি অবসর নেওয়ার আগের তিন মাস (২০২২ সালের আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর) ডোপ টেস্টে কোনো পুলিশ সদস্য পজিটিভ হননি। তার মতে, এখন ডিএমপিতে মাদকাসক্তের সংখ্যা কমে গেছে। ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর মো. শফিকুল ইসলাম অবসরকালীন ছুটিতে যান।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন