ড. কামালকে চিঠিতে যা বললেন কাদের সিদ্দিকী

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পরিচালনায় অনেক অসঙ্গতি রয়েছে দাবি করে জোটের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনসহ শীর্ষ নেতাদের চিঠি দিয়েছেন আরেক শরিক দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার আলটিমেটাম দেন কাদের সিদ্দিকী। শনিবার (১১ মে) ড. কামাল হোসেনকে দেয়া চিঠিতে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতিক সাক্ষর করেন। তিনি নিজেই গণমাধ্যমকে চিঠি দেয়ার বিষয় নিশ্চিত করেন।

চিঠিতে তিনি লিখেন, ঐতিহাসিক দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে গত বছরের ১৩ই অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ ও অন্যান্য যেকোনো সংকট মুহূর্তে আমরা এবং আমাদের নেতা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম যথাযথ ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছেন। বর্তমান ভয়াবহ রাজনৈতিক অবক্ষয়ের মুহূর্তে আপনার পদক্ষেপ জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় যথাযথ মনে করে গত ৫ই নভেম্বর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আপনার ফ্রন্টে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। চিঠিতে আরও বলা হয়, নির্বাচন এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ফ্রন্টের অনেক কার্যক্রমই স্পষ্ট নয়।

নির্বাচন পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোয় ব্যর্থ, প্রহসনের নির্বাচনী নাটক প্রত্যাখ্যান পরবর্তীতে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর এবং তারও পরে গণফোরামের মোকাব্বির খানের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়া। তাকে গেট আউট করে দেয়া। সর্বশেষ গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিলে তার শরিক হওয়া মানুষের মধ্যে মারাত্মক বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। রাস্তা-ঘাটে এসব প্রশ্নের জবাব দেয়া যাচ্ছে না।

হাবিবুর রহমান চিঠিতে আরও উল্লেখ করেন, দেশে ধর্ষণ ও হত্যা মহামারি আকার ধারণ করেছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট হিসেবে এর প্রতিকারে তেমন কোনো ভূমিকা রাখা যাচ্ছে না বা হচ্ছে না। গত ৩০শে এপ্রিল খালেদা জিয়ার মুক্তি, নুসরাত হত্যা ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে শাহবাগ চত্বরে গণজমায়েত কেনো কীভাবে বাতিল করা হয়েছে, আমরা এসবের বিন্দুবিসর্গও জানি না। সর্বোপরি বিএনপির ছয় সদস্যের মধ্যে একজন শপথ নিলে তাকে বহিষ্কার, পরবর্তীতে শপথ নেয়া চারজনকে স্বাগত জানানো এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নেয়া-এসব জাতীয় প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে।

এতে বলা হয়, এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার মতিঝিলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বর্ধিত সভা পরবর্তী সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে। তাই অনুরোধ জানাচ্ছি, জনগণের মনে আপনার নেতৃত্বের জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে যেসব প্রশ্ন জেগেছে, তার যথাযথ প্রতিকার-প্রতিবিধান করা হোক। তা না হলে বেদনার সঙ্গে ৯ জুনের পরবর্তী দু’একদিনের মধ্যে প্রয়োজনে আরও ব্যাপক আকারে বৈঠক করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হবো।

কামাল হোসেন ছাড়াও এই চিঠি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু ও নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীকে দেয়া হয়েছে।

চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, চিঠিতে ভালো কথা বলা হয়েছে। জোট করে ঘরে ঘুমালে তো হবে না, মাঠে কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আগামী সপ্তাহে জোটের বৈঠক ডাকা হবে। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলে একটা সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে। আশা করি একটা সমাধান বের করতে পারলে তারা জোট ত্যাগ করবে না।