ঢাকায় জলদুর্ভোগ চলবে আরো কয়েকদিন
সকালটা ছিল রৌদ্রোজ্জ্বল, ছিল বেশ গরমও। বিক্ষিপ্ত মেঘ মাঝেমধ্যেই আড়াল করছিল সূর্যকিরণ। দুপুর ১২টা পর্যন্ত আবহাওয়া ছিল স্বাভাবিক। হঠাৎ আকাশ কালো করে নামে বৃষ্টি। ততক্ষণে অফিস ও কর্মমুখী নগরবাসীও যার যার গন্তব্যে। অবশ্য এমন বর্ষণে বিপাকে পড়তে হয় স্কুল-কলেজফেরত শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও পথচারীদের।
আকস্মিক বৃষ্টিতে সড়কে টান পড়ে গণপরিবহনের। তারপরও সিগন্যালে সিগন্যালে লেগে যায় ভয়াবহ যানজট। দুই ঘণ্টার বৃষ্টিতে রাজধানীর অধিকাংশ সড়ক হয়ে যায় প্লাবিত। মতিঝিল, দিলকুশা, আরামবাগ, ফকিরেরপুল, দৈনিক বাংলা মোড়, গুলিস্তান, গ্রিন রোড, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, শুক্রাবাদ, সোবহানবাগ, জিগাতলা, মিরপুর-১, ২ ও ১১ নম্বর এলাকায় দেখা দেয় চিরচেনা জলাবদ্ধতা। কোথাও তা ছিল হাঁটুসমান, আবার কোথাও দুই ফুটেরও বেশি।
আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, আগামী তিন দিন সারাদেশে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। সেইসাথে দেশের কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণ ও শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বৃহস্পতিবার (১৭ মে) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ কথা বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া ও বিজলী চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
ঢাকায় বাতাসের গতি দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘন্টায় ১০-১৫ কি.মি. যা অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়ায় পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে ঘণ্টায় ৪০-৫০ কি.মি. বেগে প্রবাহিত হতে পারে।
পূর্বাভাসে বলা হয়, পশ্চিমা লঘুচাপ ভারতের বিহার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের তিন মাসের পূর্বাভাসও রাজধানীসহ দেশবাসীর জন্য আতঙ্কের। বলা হচ্ছে, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এ বছর রাজধানীসহ সারা দেশেই স্বাভাবিকের তুলনায় বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে। বঙ্গোপসাগরে হতে পারে বেশ কয়েকটি নিম্নচাপ, যার একটি চলতি মাসেই ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। অতিবৃষ্টির ফলে প্লাবিত হতে পারে দেশের নদী অববাহিকা। হতে পারে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যাও। সারা দেশেই বয়ে যেতে পারে বেশ কয়েকটি তাপদাহ, যার কোনো কোনোটি দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে দেখা দিতে পারে তীব্র হয়ে।
তিন মাসের পূর্বাভাস প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গেল এপ্রিলে রাজধানীসহ সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই ধারা থাকবে জুলাই পর্যন্ত। চলতি মাসে রাজধানীতে স্বাভাবিকের (২৯২ মিলিমিটার) চেয়ে বেশি বৃষ্টি হতে পারে, তা ছুঁতে পারে ৩৪৫ মিলিমিটারের ঘর। জুনে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ৩৫৬ মিলিমিটারকে অতিক্রম করে ৪০০ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। আর জুলাইতে তা পৌঁছাতে পারে ৪০৫ মিলিমিটারে। চলতি মাসেই বঙ্গোপসাগরে হতে পারে দুটি নিম্নচাপ, যার একটি রূপ নিতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে। হতে পারে আরো ৪-৫টি কালবৈশাখী। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত এবং আসাম-মেঘালয় অঞ্চলের ভারি বর্ষণের কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অফিস।
তাদের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জুন ও জুলাই মাসেও বঙ্গোপসাগরে ২-৩টি করে নিæচাপ হতে পারে। জুলাইর প্রথম সপ্তাহে ভারি বর্ষণে সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকাসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্যা হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে অতিবৃষ্টি, তীব্র তাপদাহ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা- সব কিছুই ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এই তিন মাসে বেশ কয়েকটি তাপদাহ বয়ে যেতে পারে রাজধানীসহ সারা দেশেই। যার কোনো কোনোটি দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে দেখা দিতে পারে মাঝারি থেকে তীব্র হয়ে। কয়েক বছরের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে দেশের যে গড় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, এ বছর তা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও জানান আবহাওয়া অধিদফতরের এই কর্মকর্তা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন