‘তারা যে সরকার উৎখাত করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যটা কী’

বিএনপি-জামায়াত জোট ও সরকার বিরোধীদের ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখে বলেছেন, ‘তারা যে সরকার উৎখাত করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যটা কী।’

বুধবার (২০ এপ্রিল) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কৃষক লীগের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ প্রশ্ন রাখেন। এসময় ধান কাটার সময় কৃষক লীগকে কৃষকের পাশে থাকার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। সভায় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। কিছু মানুষ বিদেশে নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে ব্যস্ত, সরকার উৎখাতে ব্যস্ত। খুব ভালো কথা, তাদের কর্মসূচি জনগণের কাছে তুলে ধরুক, যে তারা দেশের মানুষের জন্য কী করবে।’

তিনি বলেন, ‘একটি কথা আমি একটু বলতে চাই। আমাদের দেশের কিছু নেতা আছে, দুঃসময়ে মানুষের পাশে কতটুকু দাঁড়িয়েছে জানি না, করোনার সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহায্য করেছে কি না, সেটারও কোনো লক্ষণ আমরা দেখি না, তবে তারা আন্দোলনের জন্য খুব ব্যস্ত। কেন? কারণ এ সরকারকে হটাতে হবে। কোন সরকার? আওয়ামী লীগ সরকার।

‘বিএনপি-জামায়াত জোটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন মান্না ও ড. কামাল হোসেনসহ তাদের একটি গ্রুপ। সেই সঙ্গে আবার তাদের সঙ্গে যুক্ত কমিউনিস্ট পার্টি, আমাদের বাম দল, বাসদ-টাসদ আরও কারা কারা। তারা সবাই এক হয়ে আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ সরকার হটাবে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, অপরাধটা কি আওয়ামী লীগের। আমরা সরকারে এসেছি ২০০৮ সালের নির্বাচনে। যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিলাম তাতে রূপকল্প-২১ ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমাদের লক্ষ্য আমরা স্থির করেছিলাম ২০২১ সাল পর্যন্ত। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি। তারা বার বার আমাদের ভোট দিয়েছে, ভোটে নির্বাচিত হয়ে আমরা সরকারে এসেছি। আমরা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার হিসেবে আমাদের লক্ষ্য আমরা অর্জন করেছি।’

তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন আমরা করেছি। সেই সময়ে আমরা কী অর্জন করেছি? বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে আমরা উন্নীত হয়েছি। আমার প্রশ্ন, এটা কি তাদের ভালো লাগেনি। সেই জন্য তারা বাংলাদেশকে মানে এই সরকারকে হটাতে চায়?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করেছি। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আমরা অর্জন করেছি। আজ সারা বাংলাদেশে আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছাতে পেরেছি। আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীনদের ঘর দিচ্ছি, জমি দিচ্ছি। প্রথমবার সরকারের এসে আমাদের আর্থিক সীমাবদ্ধতা ছিল। আমরা ব্যারাক হাউজ নির্মাণ করে দিয়েছিলাম। দ্বিতীয়বার আসার পর থেকে আমরা এখন তাদেরকে আলাদা ঘর সেমি পাকা ঘর তৈরি করে দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘এই যে একটা মানুষ একটা ঘর পাওয়ার পর তার জীবন-জীবিকার পথ সে খুঁজে পাচ্ছে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে। এটা কি আওয়ামী লীগের অপরাধ? এ জন্যই কি সরকারকে হটাতে হবে? ১০ টাকায় কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ করে দিয়েছি। বেসরকারি ব্যাংক আমরা উন্মুক্ত করে দিয়েছি এবং তাদের ওপর শর্ত আছে যে, উপজেলা পর্যন্ত তাদের শাখা থাকতে হবে। তাছাড়া সরকারি ব্যাংক তো আছেই। আজ ১০ টাকায় কৃষক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে ভর্তুকির টাকা সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে পাচ্ছেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। সারের দাম আমরা কমিয়েছি ৪ দফা। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি। যেটা নিয়ে একটা বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের ছিল। আমাদের এই একটা সিদ্ধান্তই সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে দিয়েছে। পদ্মা সেতু নিয়ে যখন মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম কারো টাকা লাগবে না, নিজের টাকায় পদ্মা সেতু বানাব। আল্লাহর রহমতে সেটা তৈরি করে ফেলেছি। আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। প্রতিটি ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড কানেকশন দিয়েছি আমরা। ডিজিটাল সেন্টার করেছি। আজকের বাংলাদেশে এ ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে অনেক মানুষ নিজের ঘরে বসে বিদেশে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। আর্থিক সচ্ছলতা পাচ্ছে, তাদেরকে আমরা ট্রেনিং করাচ্ছি।’

পায়রায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে টাকার সাশ্রয় হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকেই প্রশ্ন করেন, এত বড় বড় প্রকল্পের প্রয়োজন কী। শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে গেলে বিদ্যুৎ তো আমাদের তৈরি করতেই হবে। আমরা যে সেখানে প্রায় ৯শ কোটি টাকার মতো বাঁচাতে পারলাম, এ কথা তো কেউ বলেন না। এটা বলতে তাদের একটু কষ্টই হয়। একটা প্রজেক্টে টাকা আরও সাশ্রয় হয়, এটা বোধ হয় আমাদের সমালোচকদের পছন্দ নয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশের কৃষক-শ্রমিক, প্রতিটি মানুষের ভাগ্য যাতে পরিবর্তন হয়, সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি। আজ দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে। করোনাকালেও আমাদের দেশে দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে। আরও বহু কাজ আমরা করে যাচ্ছি। এই যে কাজগুলো আমরা করে যাচ্ছি এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছে, তৃণমূলের মানুষ, গ্রামের মানুষ উপকার পাচ্ছে। তারা যে সরকার উৎখাত করতে চায় তাদের উদ্দেশ্য কী? এ মানুষগুলোকে সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে দেওয়া? এটাই তাদের লক্ষ্য? এটাই তাদের উদ্দেশ্য? সেই জন্যই তাদের শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করতে হবে।?

তিনি বলেন, ‘আমার একটাই প্রশ্ন তাদের কাছে। অপরাধটা কী করেছি? তারা লুটপাট করে খেয়েছে, মানুষ খুন করেছে, তাদের হাতে আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে তারা জীবন্ত মানুষ হত্যা করেছে। সেই ২০১৩ সালের কথা সবার মনে আছে। ২০১৫ সালে তারা কীভাবে মানুষ হত্যা করেছে, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর থেকে যে অত্যাচার সারা বাংলাদেশে করেছিল এই বিএনপি-জামায়াত জোট, সেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অত্যাচার করেছিল ঠিক একইভাবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দেশের মানুষের জন্য নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। ৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কীভাবে গড়ে উঠবে, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তারই ভিত্তিতে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’

কৃষক লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নতুন নতুন দাবি করা লাগবে না। এই দেশের কৃষকের জন্য কোনটা মঙ্গলের সেটা আওয়ামী লীগ সরকার ভালোভাবেই জানে।’