খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাসহ তিন পার্বত্য জেলা পাহাড়ে ভোটার নিবন্ধনে জটিল শর্ত, বাতিল চায় বাঙ্গালী অধিকার আদায়ের সংগঠন পার্বত্য নাগরিক পরিষদ।
রোববার (৫ই জুন) সকালে, বান্দরবানে হালনাগাদ ভোটার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য দেয়া জটিল শর্তগুলো বাতিলের দাবি জানিয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ও নির্বাচন কমিশনকে স্মারকলিপি দিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
গত ২০শে মে ২০২২ থেকে আগামী ৯ই জুন ২০২২পর্যন্ত সারাদেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করেছেন নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ।
সারা দেশের ন্যায় তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায়ও এ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে সারাদেশের চেয়ে হালনাগাদে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়েছে পার্বত্য এই জেলাগুলোর নিবন্ধন শর্তে।
এ জেলাগুলোতে সারাদেশের মতো নতুন ভোটারদের সরকারী নিবন্ধন শর্তে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াও নতুন করে কিছু শর্ত যোগ করেছে নির্বাচন কমিশন। আর এসব নতুন শর্তকে জটিল বলে অভিযোগ তুলেছে পাহাড়ে অবহেলিত ও নিষ্পেষিত বাসিন্দাদের ঐক্যবদ্ধ দাবি আদায়ের বাঙ্গালী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ।
সংগঠনটি রোববার পার্বত্য জেলা বান্দরবান ও রাঙামাটিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জটিল শর্তগুলো বাতিলের দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশন বরাবরে স্মারক লিপি প্রদান করেছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, পার্বত্য এলাকায় বংশ পরম্পরায় বসবাসরত বাসিন্দারা পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সনদ পেলেও বেশিরভাগ বাসিন্দাদের নিজের নামে জায়গা না থাকায় তারা রাজার সনদ পাচ্ছে না। আমলা জটিলতার কারণেও উপজেলা ভূমি অফিসে অনেক বিড়ম্বনা শিকার হতে হচ্ছে তাদের। এই অবস্থায় পার্বত্য এলাকার বেশিরভাগ মানুষ নির্বাচন কমিশনের দেয়া জটিল শর্তে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারছে না। আর এ কারণে দীর্ঘদিন পার্বত্য এলাকায় বসবাস করার পরও ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছেন তারা। ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাওয়া বেশিরভাগ বাসিন্দারাই পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত গুচ্ছগ্রাম বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী।
এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, সহ-সভাপতি নুরুল আলম, হাজী আবদুস শুক্কুর, আবদুল আলীম মনু, সাধারণ সম্পাদক মো: নাসির উদ্দিন, সহ-সম্পাদক মো: শাহ জালালসহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে একই দিন দুপুরে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে নতুন ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য দেয়া শর্ত বাতিলের দাবিতে প্রধান নির্বাচন কমিশন বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে সংগঠনটির রাঙামাটি জেলা কমিটি। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি জমা দেয়া হয়।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, গত ২০শে মে ২০২২ থেকে আগামী ৯ই জুন ২০২২পর্যন্ত সারাদেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদেও কাজ শুরু করা হয়েছে। সারা দেশের ন্যায় তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায়ও এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কিন্তু, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে নতুন ভোটার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে পার্বত্য এলাকার বাসিন্দাদের জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে আলাদা কিছু শর্ত দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে স্থায়ী বাসিন্দা প্রমানের জন্য পৌরসভা বা ইউপি চেয়ারম্যানের সনদের বাইরে পাহাড়িদের প্রথাগত নেতৃত্ব হেডম্যান/কার্বারীর সনদ এবং জায়গার সনদ চাওয়া হয়েছে। এ দুটি শর্তের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের বহু মানুষ ভোটার তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হতে পারছে না। কেননা স্থায়ী বাসিন্দার ক্ষেত্রে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সনদ পাওয়া গেলেও বেশিরভাগ মানুষের কাছে নিজস্ব রেকর্ডিয় জায়গা না থাকায় জায়গার সনদ নেই। জায়গা না থাকায় পাহাড়িদের প্রথাগত নেতৃত্ব হেডম্যান কার্বারীরাও এসব বাসিন্দাদের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে প্রত্যয়নপত্র/সনদ দিচ্ছেনা।
এ অবস্থায় বেশিরভাগ মানুষ নির্বাচন কমিশনের দেয়া এ দুটি শর্ত মানতে পারছেনা বলে তারা ভোটার তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হতে পারছে না। অথচ, বাদ পড়তে যাওয়া এসকল মানুষ ও তাদের আত্মীয় স্বজন দীর্ঘদিন থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করে আসছে।
এ পরিস্থিতির শিকার বেশিরভাগ মানুষ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত অ-উপজাতি তথা বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির। পার্বত্যবাসীর ভোটার অধিকার নিশ্চিত করতে বেধে দেয়া শর্ত শিথিল করতে এবং হালনাগাদের সময়সীমা বৃদ্ধি করার দাবি জানানো হয় স্মারকলিপিতে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সোলায়মান এর নেতৃত্বে সংগঠনের প্রতিনিধিদলের মধ্যে পিসিএনপি রাঙামাটি জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবু বকর ছিদ্দিক, মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোরশেদা আক্তার, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হাবীব আজম, পিসিএনপি জেলা কমিটির প্রচার সম্পাদক হুমায়ুন কবির, পৌর কমিটির যুগ্ন সম্পাদক আজিজুল ইসলাম, ছাত্র পরিষদ নেতা মোঃ আলমগীর।