তিন মাস ধরে ‘ধর্ষণ’, স্কুলছাত্রীর ‘আত্মহত্যা!
ভিডিও প্রকাশের ভয়ে তিন মাস ধরে ‘ধর্ষণের’ শিকার এক স্কুলছাত্রী ‘আত্মহত্যা’ করেছে। মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) তেঁতুলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের কালারাম জোত গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহননকারী স্কুলছাত্রী হলো ওই এলাকার দিনমজুরের মেয়ে রহিমা আক্তার সোনিয়া। সে তেঁতুলিয়া কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
এদিকে স্থানীয় রাজন ও আতিক নামে দুই বখাটের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করছেন সোনিয়ার স্বজনরা।
ওই স্কুলছাত্রীর মামা ফারুক অভিযোগ করেন, প্রায় ৩ মাস আগে সোনিয়া তার অসুস্থ মায়ের জন্য ওষুধ কিনতে বাজারে যাওয়ার সময় রাজন তাকে সহযোগিতা করার কথা বলে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে উপজেলা সদরে আতিকের বাসায় নিয়ে যায়।
সেখানে নিয়ে রাজন ওই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে। এসময় আতিক তা ভিডিও করে। পরে ওই ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে আতিকও তাকে ধর্ষণ করে।
ফারুক আরো বলেন, থেকে ওই দুই যুবক অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ভিডিও প্রকাশ করা ও মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে সোনিয়াকে গত তিন মাস ধরে ধর্ষণ করে আসছিল।
তিনি আরো জানান, রাজন তেতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওয়ার্ড বয়ের চাকরি করে এবং আতিক স্থানীয় বাজারে ফ্ল্যাক্সিলোডের ব্যবসার পাশাপাশি বাংলালিংকের কাস্টমার কেয়ারে কাজ করেন।
ফারুক বলেন, উপায়ান্তর না পেয়ে সোমবার (৯ অক্টোবর) সোনিয়া সব ঘটনা আমাকে ও তার মা সেলিনা বেগমকে জানালে আমরা রাজন ও আতিকের সঙ্গে কথা বলি। কিন্তু মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে কোচিং করতে যাওয়ার সময় সোনিয়াকে ওই দজন পুনরায় হুমকি দেয়। ওইদিনই বাসায় ফিরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে সোনয়িা।
সোনিয়ার বাবা জাহেরুল ইসলাম পাথর শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান। সোনিয়ার বাবা বলেন, বুধবার (১১ অক্টোবর) রাতে ধর্ষণ এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে রাজন ও আতিকের নামে তেঁতুলিয়া থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা রেকর্ড করেনি, আসামিও ধরেনি।
তেঁতুলিয়া কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক নাজিমউদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজন ও আতিক ব্ল্যাক মেইল করে সোনিয়াকে ধর্ষণ করে আসছিল। আর সোনিয়া সে পথ থেকে সরে আসার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ওই নরপিচাশরা তাকে বার বার ব্ল্যাকমেইল করে ধর্ষণ করেছে। শেষে নিরূপায় হয়ে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে।
পুলিশ এ ঘটনায় যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না অভিযোগ করে তিনি আসামিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
ওই স্কুলছাত্রীর প্রতিবেশী রওশনারা বেগম বলেন, মাত্র ১৪ বছরের এক শিশুকে তারা ফুসলিয়ে বিপদে ফেলেছে। আমারও মেয়ে আছে। তারা আরো কোনো শিশুকে এমন করতে পারে। আমি এসব লম্পটদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
তেঁতুলিয়া ইউপির সাবেক সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, এরআগে এই এলঅকায় এমন জঘণ্য ঘটনা ঘটেনি। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিচার চাই। মেয়েটা চলে গেছে, কিন্তু উপযুক্ত বিচার পেলে দেশে আইন আছে বিচার আছে এ শান্তনাটুকু নিয়ে বাঁচতে পারব।
তেঁতুলিয়া থানার ওসি সরেস চন্দ্র বলেন, স্কুলছাত্রী সোনিয়ার আত্মহত্যার ঘটনায় একটি ইউডি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। সোনিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে লাশের ময়নাতদন্ত রিপোট পাওয়ার পরে যথাযথভাবে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন