ত্রাণ সংকটে সীমান্তে ২৫ হাজার রোহিঙ্গার মাঝে খাদ্যাভাব

সীমান্তের জিরো পয়েন্ট, তুমব্রু পশ্চিমকুল এবং পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠে অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গা বস্তিতে খাদ্যাভাবসহ মেডিকেল সুযোগ-সুবিধার অভাব দেখা দিয়েছে। কোন রকম জীবন বাঁচাতে এসব রোহিঙ্গাদের ১ বেলা ভাত, বাকি ২ বেলা শুকনো খাবার খেতে হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে। এছাড়াও স্যানিটেশন ও চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রয়োজন হলেও তেমনভাবে চিকিৎসা সুবিধা না থাকায় নানান রোগ দেখা দিয়েছে তাদের মাঝে। মঙ্গলবার সরজমিনে রোহিঙ্গা বস্তি ঘুরে রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

২৪ অক্টোবর রাতে মিয়ানমারে সহিংসতার পর পুরো রাখাইন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। এরপর থেকে শুরু হয় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ। তখন দেশী-বিদেশী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের লোকজন ঢালাওভাবে ত্রাণ বিতরণ করার কারণে সীমান্তের জিরো পয়েন্ট, তুমব্রু পশ্চিমউপকূল এবং থাইংখালী উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা পর্যাপ্ত ত্রাণ পান।

গত সপ্তাহ খানেক আগে থেকে যত্রতত্র ত্রাণ বিতরণের উপর বাধা সৃষ্টি করে সেনাবাহিনী ও প্রশাসন। যার ফলে ত্রাণ বিতরণের শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম তারা। যানজট মুক্ত হয় কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক। কিন্তু ত্রাণ বিতরণের কড়াকড়ি থাকায় ত্রাণ দাতারা উল্লেখিত ক্যাম্পগুলোতে ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এসব রোহিঙ্গা বস্তিগুলোতে ত্রাণ বিতরণে উৎসাহ হারিয়ে পার্শ্ববর্তী উখিয়ার অন্যান্য ক্যাম্পে ত্রাণ বিরতণ অথবা সেনা ক্যাম্পে ত্রাণ হস্তান্তর করে চলে যাচ্ছেন। যার কারণে তুমব্রু জিরো পয়েন্ট, তুমব্রু পশ্চিমউপকূল এবং থাইংখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রিত রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ, শিশুরা খাদ্যাভাব, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সমস্যায় ভুগছেন বলে জানা গেছে।

সীমান্তের তুমব্রু পশ্চিমকূল রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কেফায়াত উল্লাহ (৩৩) জানান, আগে যেভাবে তারা ত্রাণ পেত, এখন তার শত ভাগের ১০ ভাগ ত্রাণও পাচ্ছেন না। যার কারণে বস্তিতে প্রতিটি পরিবারে খাদ্যভাব দেখা দিয়েছে।

একই কথা বলেন তুমব্রু কোনারপাড়া জিরো পয়েন্টে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা শাহ আলম (৪৫)। তিনি জানান, তারা এখন এপারেও আসতে পারছেনা আর ওপারেও যেতে পারছেনা। মিয়ানমার থেকে যে ধান, চালগুলো এনেছিলেন তাও শেষ হয়ে গেছে। তারা এখন কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা। যেহেতু তাদের তেমন কোন ত্রাণও দেওয়া হয়না। এই অবস্থায় থাকলে না খেয়ে মরতে হবে জিরো পয়েন্টে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের।

থাইংখালী উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠে ঝুপড়ি করে বসবাসকারী রোহিঙ্গা জাফর আলম (৬৫) বলেন, গত ২৫ দিন পূর্বে তারা স্বপরিবারে মিয়ানমারের মংডু খানসামা এলাকা থেকে বাংলাদেশে চলে এসে আশ্রয় নিয়েছেন সেখানে। ২ সপ্তাহ’র মতো পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ ভালোই ছিলেন। কিন্তু এখন আগের মতো ত্রাণ পাচ্ছেনা।

ওই ক্যাম্পে দায়িত্বরত বিজিবি’র সুবেদার শাহেদুল জানান, উখিয়া-টেকনাফের শরনার্থী ক্যাম্পগুলোতে ত্রাণ বিতরণে ক্ষেত্রে এখন সেনাবাহিনীর সহযোগিতা করে থাকে। কিন্তু তুমব্রু জিরো পয়েন্ট, তুমব্রু পশ্চিমকুল এবং থাইংখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের এই ক্যাম্প ৩টি দেখাশোনার দায়িত্ব ৩৪ বিজিবি’র। তাই আমাদের মাধ্যমে কোন ত্রাণ আসলে আমরা তাদের মধ্যে বিলি-বন্টন করে থাকি। না আসলে করার কিছু থাকেনা।

৩৪ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্ণেল মঞ্জুরুল হাসান খান বলেন, আমরা এসব রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাণ বিরতণ করে থাকি। যদি কেউ তাদেরকে ত্রাণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে থাকে তাহলে আমাদের মাধ্যমে দিতে পারবেন। এসব ক্যাম্পগুলোতে যাতে কোন প্রকার খাদ্যাভাব, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন সমস্যা না হয় এজন্যে সময় মতো ত্রাণ বিতরণ এবং সার্বক্ষণিক দেখভাল করার জন্য বিজিবি রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, অবশ্যই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের মাঝে ত্রাণ পাঠানো হবে।