গ্রহণ করেনি খাদ্য বিভাগ
থাইল্যান্ড থেকে দুটি জাহাজে এলো ৩২ হাজার ১৪০ টন নিম্নমানের চাল
থাইল্যান্ড থেকে দুটি জাহাজে আমদানি করা ৩২ হাজার ১৪০ টন চাল নিম্নমানের হওয়ায় তা গ্রহণ করেনি খাদ্য বিভাগ। এমন সময়ে এ ঘটনা ঘটল, যখন সরকার আমদানির পরিমাণ বাড়িয়ে বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।
বন্দরে জাহাজ দুটি আসার পর আমদানি করা চালের নমুনা পরীক্ষা করে খাদ্য বিভাগ। এতে দেখা যায়, একটি জাহাজে থাকা চালের মধ্যে মরা, বিনষ্ট ও বিবর্ণ দানার পরিমাণ ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। অন্য জাহাজের চালের দানায় এর পরিমাণ পাওয়া যায় ১৭ শতাংশ। সরকারের আমদানির দরপত্র চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, মরা, বিনষ্ট ও বিবর্ণ দানার গ্রহণযোগ্য সীমা ৩ শতাংশ।
এ বিষয়ে খাদ্য বিভাগ চট্টগ্রামের চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক জহিরুল ইসলাম বলেন, দরপত্রের শর্তের চেয়ে মরা, বিনষ্ট ও বিবর্ণ দানার পরিমাণ বেশি থাকায় চাল গ্রহণ করেননি তাঁরা। চাল আমদানি অব্যাহত থাকায় এই চাল ফেরত দিলেও কোনো সমস্যা হবে না।
ওই দুটি জাহাজের একটি গত ৩১ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে এসে পৌঁছায়। এমভি থাই বিন বে নামের জাহাজটিতে ১২ হাজার ২৯০ টন সেদ্ধ চাল রয়েছে। এ ছাড়া ১ সেপ্টেম্বর বহির্নোঙরে পৌঁছায় এমভি ডায়মন্ড-এ নামের আরেকটি চালবাহী জাহাজ। এতে ১৯ হাজার ৮৫০ টন সেদ্ধ চাল রয়েছে। আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরভিত্তিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওলাম ইন্টারন্যাশনালের কাছ থেকে খাদ্য বিভাগ এই চাল আমদানি করেছে। প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে মোট ৫০ হাজার টন চাল কেনার চুক্তি হয়। এর মধ্যে প্রথম দুটি চালানে এসেছে ওই চাল। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে খাদ্য বিভাগের চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, একটি জাহাজে করে যত চাল আনা হবে, তার মধ্যে নমুনায় যদি ৪ শতাংশ পর্যন্ত মরা, বিনষ্ট ও বিবর্ণ দানা পাওয়া যায়, তবে জরিমানা আদায় করে তা গ্রহণ করতে পারবে খাদ্য বিভাগ। কিন্তু দুটি জাহাজে আনা চাল জরিমানা করেও গ্রহণ করার সুযোগ নেই বলে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান।
এমভি হারুকা নামের একটি জাহাজে করে ওই চাল ৩০ আগস্ট বন্দরে আসে। পরে জরিমানা আদায় করার শর্তে এই চাল গ্রহণ করে খাদ্য বিভাগ।
চট্টগ্রামের চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, থাইল্যান্ডের চাল নিয়ে আসা দুটি জাহাজ ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ায় বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে তা বিক্রির জন্য দেনদরবার করছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। তবে চালের মান ভালো না থাকায় ব্যবসায়ীরা খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি করা ওই চাল বেশ পুরোনো।
চালবাহী জাহাজ দুটির স্থানীয় প্রতিনিধি সেভেন সিজ শিপিং লাইনসের কর্ণধার আলী আকবর বলেন, বিবর্ণ দানার পরিমাণ বেশি হলেও এই চাল খাওয়ার উপযোগী। খাদ্য বিভাগ গ্রহণ না করায় এখন দেশি-বিদেশি ক্রেতার কাছে বিক্রির জন্য চেষ্টা করছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। এ কারণে এখনো বন্দরের বহির্নোঙরে জাহাজ দুটি নোঙর করে রাখা হয়েছে।
খাদ্য বিভাগ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর সর্বেশষ প্রকাশিত দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৪ সেপ্টেম্বর সরকারি খাদ্যগুদামে চালের মজুত ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার টন। গত বছরের একই সময় মজুত ছিল ৭ লাখ ৯১ হাজার টন। বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় থাকা ১ লাখ ৩৭ হাজার টন চাল গুদামে পৌঁছালে মজুত পৌনে ৫ লাখ টন হতো।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৩ জুলাই থেকে গতকাল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি খাতে আমদানি করা চালবাহী ১৬টি জাহাজ এসেছে। এসব জাহাজে আনা হয়েছে ৩ লাখ ৬৪ হাজার টন চাল। আমদানি করা চাল দ্রুত খালাসের জন্য বন্দরের দুটি জেটি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু জাহাজ থেকে পণ্য খালাসে সময় লাগছে বেশি। বন্দরের একাধিক প্রতিবেদনে চাল খালাসে বিলম্বের কারণ হিসেবে বৈরী আবহাওয়া ও ট্রাকের অভাবকে দায়ী করা হচ্ছে। গতকাল বহির্নোঙর ও জেটি মিলিয়ে চালবাহী আটটি জাহাজ বন্দরে অবস্থান করছিল। এর মধ্যে চাল গ্রহণ না করা ওই দুটি জাহাজও রয়েছে।
বন্দর জেটিতে থাকা তান বিন-২৩৫ জাহাজটি ২৬ হাজার ৬২ টন চাল নিয়ে বহির্নোঙরে পৌঁছায় গত ১৬ আগস্ট। বহির্নোঙরে কিছু চাল খালাসের পর গত ৩১ আগস্ট জাহাজটি জেটিতে ভেড়ে। বন্দর জলসীমায় আসার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত ৩৪ দিন পেরিয়ে গেলেও জাহাজটি থেকে পুরো চাল খালাস করা যায়নি।
জাহাজটির স্থানীয় প্রতিনিধি ইউনি শিপ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, মূলত টানা বৃষ্টির কারণেই চাল খালাসে সময় বেশি লাগছে। শুরুর দিকে বহির্নোঙর থেকে চালা খালাসে লাইটার জাহাজের সংকট ছিল। এখন জেটিতে বৃষ্টি ছাড়া অন্য কোনো সমস্যা নেই।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন