দিনাজপুরে ৩ সংস্থার নামে ভূয়া ও মিথ্যা তথ্য অপপ্রচারের দায়ে জাকির গ্রেপ্তার
দিনাজপুরের নিউলাইট, আইটি ভিশন ইন্সটিটিউট ও অনুপ্রেরণা সংস্থার নামে ভূয়া ও মিথ্যা তথ্য অপপ্রচারের দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন জাকির হোসেন। গত বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১) আদালতে আত্মসমর্পন করতে গেলে বিচারক তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। নাজনীন আকতার (সুইটি) বাদী হয়ে গত ৩০ মার্চ ২০২১ সালের কোতয়ালী থানার এফ.আই.আর নং ৮০/২২৫ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৫(২)/২৯(১)/৩১(১) তৎসহ পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৪০৬/৪২০/৫০৬ ধারায় জাকির হোসেনকে বিবাদী করিয়ে একটি মামলা করেন।
জানা যায়, জাকির হোসেন নিজেকে দিনাজপুর সদর উপজেলার রাণীগঞ্জ বাজারে ইসলামি ব্যাংক শাখার স্বত্বাধিকারী, কখনো মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের আপন ছোট ভাই এবং কখনো আবার প্রজেক্ট কনসালটেন্ট বলে দাবি করে আসছিলেন। জাকির হোসেন দিনাজপুর সদরের রাণীগঞ্জ এলাকায় ২য় বিয়ে করে সেখানে ২য় স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। তার স্থায়ী ঠিকানা ভোলা সদর উপজেলার মেদুয়া ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া গ্রামে। তিনি নিউলাইট, আইটি ভিশন ও অনুপ্রেরণা সংস্থার নামে বিভিন্ন পত্রিকায় ভূয়া মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ, পোষ্টারিং, ফেচবুকে অপপ্রচার চালিয়েছেন।
যেখানে অত্র প্রতিষ্ঠানগুলো প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হাজার হাজার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে নিউলাইট কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে সনদপত্র লাভ করে এবং ২০২০ সালে অনুপ্রেরণা সংস্থার পরিচালক প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন।
অনুপেরণা কারিগরি যুব নারী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ও মামলার বাদী নাজনীন আকতার (সুইটি) বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে দিনাজপুর সদর উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে পরিচিত হলে তিনি নিজেকে ভোলা সামাজ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এবং প্রজেক্ট কন্সালটেন্ট হিসেবে পরিচয় দেন। পরবতীর্তে আমার বাড়ীতে এসে জানান, তিনি বিভিন্ন সংস্থাকে শর্ত সাপেক্ষে প্রজেক্ট আনিয়া দেন। বিশ্বাস অর্জনের জন্য তিনি একটি সংস্থার নাম, ঠিকানা বলেন এবং তার খোঁজ নিতে অনুরোধ করেন। পরে সদর দিনাজপুরের কালিতলা নাবিল কাউন্টারের পিছনে থাকা ‘রসনী মহিলা উন্নয়ন সংস্থা’ নামে প্রতিষ্ঠানের খোঁজ নেয়। খোজঁ খবর নিয়ে বিশ্বাস করে, তার (জাকির হোসেনের) কথার প্রেক্ষিতে আমি আমার অভিভাবক ও সংস্থার কমিটির কয়েকজন সদস্যদের সাথে আলাপ করে কয়েকদিন পর ৪টি প্রজেক্টের জন্য চুক্তিপত্র সম্পাদন করি। প্রজেক্টগুলো যথাক্রমে (১) কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবীল কর্মসূচী (২) ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টি ও হিন্দু নারীদের স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মসূচী, ৩) মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান কর্মসূচী এবং ৪) প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ঋণ ও অনুদান প্রকল্প। তিনি (জাকির হোসেন) মোট ৪টি প্রজেক্ট ফাইলে স্বাক্ষর করিয়ে নেন এবং মন্ত্রণালয়ে অঙ্গীকারনামা জমা দিতে হয় বলে কৌশলে ৩’শ টাকার ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। প্রজেক্ট এনে দেওয়ার কথা বলে ৪(চারটি) প্রজেক্টে মোট ১৪ লাখ টাকা চুক্তি করা হয়। চুক্তির ফিফটী পারসেন টাকা ১পক্ষ, ২য় পক্ষকে অগ্রিম দিতে হবে এবং প্রজেক্ট পাশ হওয়ার পর ফিফটী পারসেন টাকা পরিশোধ করতে হবে, মর্মে একমত হয়ে উভয় পক্ষ ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে/চুক্তিপত্রে স্বাক্ষীগণের সামনে স্বাক্ষর করেন। অত্র চুক্তিপত্র অনুযায়ী ২য় পক্ষ (জাকির হোসেন) পাচঁ দফায় মোট ৭ লাখ টাকা সরাসরি ১ম পক্ষের (নাজনীন আকতার) বাড়ি হইতে স্বাক্ষীগণের সামনে গ্রহণ করেন। ১ম পক্ষ টাকা দেওয়ার কিছুদিন পর ২য় পক্ষের কাছে প্রজেক্টের খবর জানতে চাইলে তিনি বিভিন্ন টালবাহানা করে সময় ক্ষেপন করেন। এতে ২য় পক্ষ (জাকির হোসেন) ১ম পক্ষের কাছে আরোও প্রজেক্ট বাবদ অগ্রীম ৫লাখ টাকা চাহিলে উভয়ের মধ্যে বাকবিদন্ড সৃষ্টি হয়। এরপর ১ম পক্ষ (নাজনীন আকতার) ২য় পক্ষ (জারিক হোসেন) কে বলেন, তিনি চুক্তিপত্রের শর্তের বাহিরে আর কোন টাকা দিতে পারবেন না। তার প্রজেক্টেরর কোনো দরকার নেই। যে টাকা দিয়েছি তা ফেরত দেন। এতে টাকা ফেরত চাহিলে তিনি (জাকির হোসেন) ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং ১ম পক্ষ (নাজনীন আকতার) কে প্রতিষ্ঠান বন্ধের হুমকি জেলে পাঠানোর হুমকি এবং সামজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার হুমকি প্রদান করেন। কয়েকদিন পর মুঠোফোনে নাজনীন আকতার এবং মামলার স্বাক্ষীগণ (মোঃ মকছেদুল মমিন সরকার, মোঃ ওহেদ সাদিদ এবং মোস্তাফিজুর রহমান) কে মোবাইলে বিভিন্ন প্রকার হুমকী প্রদান করেন যার কিছুকল রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছেন। তিনি আরোও বলেন, গ্রেপ্তারকৃত জাকির হোসেন বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করিয়ে আমার ও আমার স্বাক্ষীগণের মানক্ষুন্ন করেছেন এবং সংস্থার চরম ক্ষতি সাধান করেছেন। তিনি এই মিথ্যা বানোয়াট অপপ্রচারের ন্যায় সঙ্গত বিচারিক বিভাগের নিকট বিচারের দাবী জানিয়েছেন।
নিউলাইট ইয়্যুথ ডেভেল্পমেন্ট ট্রেনিং অর্গানাইজেশন এর নির্বাহী পরিচালক মকছেদুল মমিন সরকার বলেন, গ্রেফতারকৃত জাকির হোসেন মূলত দালাল ও প্রতারক। প্রতারক জাকির প্রজেক্ট এনে দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন এনজিও’র কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণা করেছেন। মকছেদুল মমিন আরোও বলেন, জাকির হোসেন তাদের কাছে থেকে টাকা চাঁদা চাইলে সে টাকা না পেয়ে সরাসরি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও বিভিন্ন প্রশাসনের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করে অত্র প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ধ করার চেষ্ঠা করেন এবং জাকির অত্র সংস্থার ২টি প্রজেক্টের ক্ষতি করেছেন। গত সালের ২০ ডিসেম্বর আঞ্চলিক দৈনিক উত্তর বাংলা পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ জনের কর্মস্থান নষ্ট করেছেন। তিনি পরিচালককেগণকে হেনস্থা করার জন্য বহুমূখী চেষ্টা চালান মোবাইল ফোনে বিভন্ন হুমকি প্রদান করেন। তার এই কর্মকান্ডে অতি উৎসাহিত হয়ে যেসব ব্যক্তিরা মিথ্যা তথ্য প্রচারে জাকিরকে সহযোগিতা করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হউক জানান তিনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন