দুর্গাপুরে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এক রিপোর্টে ক্যান্সার অন্য রিপোর্টে স্বাভাবিক
দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি : তলপেটে অসুস্থতা অনুভব নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন মধ্য বয়সী নারী মোছাঃ ফাতেমা খাতুন (৫০)। চিকিৎসকের পরামর্শে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারেন তার কঠিন রোগ হয়েছে। মুখুমুখি হয়েছেন কঠিন চ্যালেঞ্জের। গত ২৪ জানুয়ারি স্থানীয় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আলট্রাসনোগ্রাম, পস্রাব ও রক্ত পরীক্ষা করিয়ে জরায়ু পেশীর টিউমার শনাক্ত। এমন খবরে হতাশায় ভেঙে পড়েন ফাতেমা ও তার পরিবার। ফাতেমা খাতুনের বাড়ি দুর্গাপুর উপজেলার চন্ডিগড় ইউনিয়নের মউ গ্রামের সাইদুর রহমানের স্ত্রী।
পরবর্তিতে তিনদিন পর ২৮ জানুয়ারি ফাতেমাকে নিয়ে ময়মনসিংহে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। সেখানে পুনরায় আলট্রাসনোগ্রাম করালে সেখানকার পরীক্ষায় আসে স্বাভাবিক ফলাফল। মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে দুই পরিক্ষায় দুই রকম ফলাফল দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভুক্তভোগী পরিবার। এমনি ঘটনা ঘটেছে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে। পৌর শহরের হাসপাতাল সংলগ্ন গেইটের সামনে ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দেয়া ভুল রিপোর্টে অপচিকিৎসা হচ্ছিল বলে অভিযোগ রোগী ও স্বজনদের।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানায়, গত ২৪ জানুয়ারি তল পেটে অসুস্থতা নিয়ে ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার চেম্বারে গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ জয়ন্তী রানী ধরের কাছে চিকিৎসা নিতে যান ফাতেমা খাতুন। সেসময় ওই চিকিৎসক আলট্রাসনোগ্রাম, রক্ত ও প্রসাব পরীক্ষা করতে দেন ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানে আলট্রাসনোগ্রাম প্রস্তত করেন ডাঃ রকিবুল হাসান। তার দেওয়া রিপোর্টে রোগী ফাতেমার জরায়ু সৌম্য মসৃণ পেশীর টিউমার শনাক্ত হয়। সেই রিপোর্ট নিয়ে পুনরায় চিকিৎসক জয়ন্তী রানী ধরের কাছে গেলে তিনি অপারেশনের মাধ্যমে রোগ মুক্তি লাভের কথা জানিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ সেবন করার জন্য ব্যবস্থাপত্র দেন। পরে তারা জমি বন্ধক দিয়ে অন্য চিকিৎসক দেখানো জন্য ময়মনসিংহ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ময়মনসিংহে আরেকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখান ও দুর্গাপুরের রিপোর্টের কথা চিকিৎসকে বললে তিনি সন্দেহের বিষয়টি দূর করতে পূনরায় আলট্রাসনোগ্রাম করালে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। দুর্গাপুরের দেয়া রিপোর্টের সাথে কোন মিলই নাই ময়মনসিংহের রিপোর্টে। রোগীর শরীরে জরায়ু মুখের টিউমারের কোন অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি। ভুক্তভোগী পরিবারের দাবী, দুর্গাপুরের দেয়া ভুল রিপোর্টে অপারেশন করালে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারতো ফাতেমা খাতুনের
ভুক্তভোগী রোগী ফাতেমা খাতুন বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে আমার জরায়ু মুখে টিউমার হইছে শুনে মহা দুঃচিন্তায় পরেছিলাম। অপারেশন বহু টাকার প্রয়োজন। আমি বাড়িতে এসে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে আমার টিউমার হয়েছে তাই আর ওই ঔষধ খাইনি ময়মনসিংহ গিয়ে আবার ডাক্তার দেখালে আবারও আলট্রা করিয়ে নিশ্চিত হলাম টিউমার বলে কিছুই হয়নি। শুধু প্রসাবে ইনফেকশন হয়েছে। এরা কি ডাক্তার না কসাই ?
এদিকে ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে ভুলের বিষয়ে ডাঃ রকিবুল হাসান বলেন, রিপোর্ট গুলো আমার দেখতে হবে তা নাহলে কিছু বলা সম্ভব না। আমরা দুর্গাপুরের যে মেশিন গুলো দিয়ে আলট্রা করি এর চেয়েও ময়মনসিংহে দামী মেশিন পাওয়া যায় এবং উন্নত মানের মেশিন তাই আমাদের প্রায় এমন কনফিউশন হয় আমরা রোগীদেরকেও বলে থাকি উন্নতমানের মেশিনে আলট্রা করার জন্য। বিষয়টি আনকমন না স্বাভাবিক বিষয়ই বলে জানান তিনি। ডাঃ রকিবুল হাসান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার এবং ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চেম্বার করেন।
ভুক্তভোগী ওই নারীর ব্যবস্থাপত্র দেওয়া চিকিৎসক জয়ন্তী রানী ধর মুঠোফোনে বলেন, ডাক্তারের সব কিছু তো আপনারা জানেন না বা বুঝেনও না, আমি যেমন সাংবাদিকতার সব কিছু বুঝবো না, আমি আপনাকে যেটা বুঝাতে পারি ডাঃ রকিবুল যদি টিউমার পেয়ে থাকেও আমি এন্টিবায়োটিক ডোজ দিয়েছি তাতেও অনেক সময় টিউমার ভ্যানিশ অর্থাৎ ওটা মিশে গেছে হয়তো।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এর আগেও ডাঃ জয়ন্তী রানী ধর ও ডাঃ রকিবুল হাসানের বিরুদ্ধে দুর্গাপুরে বহু অপচিকিৎসার অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। অন্য দিকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর পরীক্ষার মান ভালো না থাকায় ফ্যাসাদে পড়তে রোগীদের। এমনকি পরীক্ষা নিরীক্ষার চার্জও বেশি নেওয়া হয়। এতে করে রোগীদের হয়রানিসহ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হয় প্রতিনিয়ত।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত)ডাঃ তানরিুল ইসলাম রায়হান বলেন, ঘটনাটি এমনটি হলে খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি আমাদের হাসপাতালের না তাই এর দায় ওই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেই নিতে হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন