দেবী শেঠি দেখার পরই কাদেরের ভেন্টিলেশন খোলার সিদ্ধান্ত
ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভেন্টিলেশন (কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা) খোলার সিদ্ধান্ত নেবে নতুন মেডিকেল বোর্ড। উপমহাদেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠি তাকে দেখার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।এছাড়া ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার বিষয়ে পরবর্তী করণীয় কিংবা তাদে বিদেশ নেয়া হবে কিনা সেটিও নির্ধারণ হবে দেবী শেঠি দেখার পর।এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), মেডিকেল বোর্ড ও আওয়ামী লীগ সূত্রে।
এদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের চিকিৎসায় উপমহাদেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠি বিএসএমইউতে এসে পৌঁছেছেন। ভারতের এই চিকিৎসক আজ সোমবার বেলা পৌনে ১টার দিকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে রাজধানীর হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। পরে সেখান থেকে সড়কপথে সরাসরি যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। হাসপাতালে ঢুকে তিনি সরাসরি যান ওবায়দুল কাদেরের শয্যাপাশে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিএসএমএমইউ প্রক্টর অধ্যাপক সৈয়দ মোজাফ্ফর আহমদ।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে যান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। পরে বেলা সোয়া ১১টার দিকে সেখান থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিনি জানান, দেবী শেঠি দেখার পরই ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
হানিফ বলেন, ভারতের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠি ও আগে গঠিত ১৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে নতুন মেডিকেল বোর্ড গঠিত হবে। এ বোর্ডই ওবায়দুল কাদেরের ভেন্টিলেশন (কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা) খোলার সিদ্ধান্ত নেবে।
হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে সিঙ্গাপুর থেকে আসা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দল চিকিৎসা কার্যে নিয়োজিত রয়েছেন বলেও জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে দেবী শেঠির বৈঠক হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই এ নতুন মেডিকেল বোর্ডের মিটিংয়ে বসার কথা রয়েছে। সেখানেই সব সিদ্ধান্ত হবে।
সূত্র জানায়, দেবী শেঠি বিমানবন্দরে নামার পর সরাসরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। সেখানকার কার্ডিওলজি বিভাগের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) লাইফসাপোর্টে থাকা ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা দেখছেন তিনি। কিছুক্ষণ পরে তিনি ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে বসবেন। পাশাপাশি সিঙ্গাপুর থেকে আসা বিশেষজ্ঞ টিমের সঙ্গেও তিনি কথা বলবেন। তিন পক্ষের বৈঠকে ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এসএম মোস্তফা জামান সকালে জানিয়েছিলেন, দুপুরে ভারতের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠি পৌঁছানোর পর তার সঙ্গে পরামর্শ করেই ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুর নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
রোববারই বিএসএমএমইউর চিকিৎসক ও সরকারি পর্যায় থেকে বলা হয়েছিল- ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। প্রয়োজনে দেশের বাইরে নেয়া হবে। সেটি সম্ভব না হলে বিশ্বের নামকরা চিকিৎসককে বিএসএমএমইউতে এনে তার চিকিৎসা দেয়া হবে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ডা. দেবী শেঠিকে আনার কথা ওঠে। শেষ পর্যন্ত আজ তাকে ঢাকায় আনা হচ্ছে। এর আগে রোববার রাতে ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসকদের তিন সদস্যের একটি দল ঢাকায় পৌঁছে।
সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা আজ সকালে দ্বিতীয় দফায় কাদেরের শারীরিক অবস্থা নিয়ে মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে বসেন। দুপুর ২ টার পর বিএসএমএমইউতে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরের বর্তমান শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানানো হবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা ক্রমাগত উন্নতির দিকে বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। তিনি জানান, উপমহাদেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠি আসার পর দুপুরে মেডিকেল বোর্ড বসে সিদ্ধান্ত নেবে তাকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হবে কিনা। তার পরবর্তী চিকিৎসার বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ হবে তখনই।
হানিফ বলেন, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- তাকে সুস্থ করতে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা মেডিকেল বোর্ড মিটিং করে দুপুরে বিএসএমএমইউর ভিসি ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া তার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে প্রেস ব্রিফ করবেন।
ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় গঠিক মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য জানান, সিঙ্গাপুর থেকে একজন হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ, একজন পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ও একজন টেকনিশিয়ান এসেছেন। তারা ওবায়দুল কাদেরের রিপোর্ট ও তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন। ওবায়দুল কাদেরের অবস্থা একটু উন্নতি হয়েছে। এ কারণে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত দেখা হবে। যদি আরও উন্নতি হয়, তা হলে হয়তো এখনই দেশের বাইরে নেয়া হবে না। দেশের বাইরে নেয়া হবে কিনা, এ বিষয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে জীবন শঙ্কায় থাকা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অবস্থার উন্নতি হয়েছে, তিনি পুরোপুরি চেতনা ফিরে পেয়েছেন। চিকিৎসকদের ডাকে সাড়া দিতে পারছেন।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে সোমবার সকালে এ তথ্য জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। তবে তিনি এও জানান, ওবায়দুল কাদের এখনও শঙ্কামুক্ত নন বলে চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছেন।
শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় ওবায়দুল কাদেরের লাইফসাপোর্টের যন্ত্রাদি খুলে ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন বিপ্লব বড়ুয়া। তিনি চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে বলেন, ‘চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে লাইফসাপোর্টের জন্য যেসব চিকিৎসা সরঞ্জামাদি যুক্ত করা হয়েছিল, তা খুলে ফেলা হতে পারে।
ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে বিপ্লব বড়ুয়া জানান, রাতে ওবায়দুল কাদেরের অবস্থার বেশ উন্নতি হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- ওবায়দুল কাদেরের ব্লাড সার্কুলেশন, হার্টবিট এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি এখনও নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। অথচ গতকাল একপর্যায়ে ওবায়দুল কাদেরের রক্তচাপ ৩৫-এ নেমে আসে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন