দেশে কর ফাঁকির পরিমাণ বছরে একলাখ কোটি টাকা

বাংলাদেশে ফাঁকি দেয়া করের পরিমাণ বছরে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার হিসেবে এই তথ্য উঠে আসলেও এনবিআর’র তদন্ত বলছে পরিমাণ সামান্যই। এছাড়াও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো আমদানি পণ্যের দাম কম দেখিয়ে বিপুল রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। এসব বিষয়ে কর বিভাগের কাছে কোন পূর্ণাঙ্গ তথ্যই নেই। আর এজন্য কর্মকর্তাদের অদক্ষতা ও দুর্নীতির পাশাপাশি সেকেলে কর আদায় ব্যবস্থাকে দুষছেন বিশ্লেষকরা।

ঢাকার রাস্তায় বিলাসবহুল গাড়ির দাপট এবং অত্যাধুনিক ভবন বলে দেয় টাকার পাহাড় গড়েছেন অনেকে। কর ফাঁকি দিয়ে প্রভাবশালীরা নামে বেনামে জমি, ফ্ল্যাট, গাড়ি ও সঞ্চয়পত্র কিনলেও অধিকাংশই এসব আয় বা সম্পদ দেখান না আয়কর রিটার্নে। শুধু তাই নয় বৈধ আয়ের বড় অংশও নেই করের আওতায়। প্রকৃত হিসাব লুকিয়ে, আমদানি পণ্যের মূল্য কম দেখিয়ে এবং ট্রান্সফার প্রাইসিংসহ নানাভাবে দেয়া হচ্ছে রাজস্ব ফাঁকি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো হেডকোয়ার্টারে অনেক টাকা নিয়ে যায়। এজন্য আইন করেছি; কিন্তু ধরার কায়দা নেই।
তিনি আরো বলেন, ঢাকায় কিছু লোকের অনেক সম্পদ রয়েছে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে সঠিকভাবে ট্যাক্স আদায় করতে পারছি না।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দুর্নীতি, অদক্ষতা, প্রশাসনিক ও আইনি দুর্বলতার পাশাপাশি অটোমেশন না হওয়ায় জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশ কর আদায় হচ্ছে না ।
পিআরআই নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের বছরে করের অনাদায়ের পরিমাণ জিডিপির ১০ শতাংশ। দ্বিগুণের বেশি আমরা কালেক্ট করতে পারতাম, যদি নীতিগত, প্রশাসনিক ও অটোমেশনের মাধ্যমে আমরা এ সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারতাম।

কর কর্মকর্তারা বলছেন, সীমিত লোকবল, অপ্রতুল অবকাঠামোসহ নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটনে সবোর্চ্চ চেষ্টা করা হয়।
কর অঞ্চল-৪ অতিরিক্ত কমিশনার ড. নাশিদ রিজওয়ানা মনির বলেন, ইনকাম ট্যাক্সের নিজস্ব কোন পুলিশি সার্ভিস নেই। এছাড়াও কোন বিষয়ে তদন্ত করার জন্য যে ধরনের দক্ষ লোকবল প্রয়োজন সেটা এনবিআরের নেই।
প্রতিবেশী দেশ ভারত ও নেপালে কর জিডিপি অনুপাত যেখানে ১৬ শতাংশের বেশি, সেখানে বাংলাদেশে এই অনুপাত মাত্র নয় শতাংশ। যুক্তরাজ্যভিত্তিক অর্থপাচার বিরোধী সংগঠন গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি জিএফআই রিপোর্ট অনুসারে ২০০৬ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত এক দশকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।